রবিবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৪

চা শ্রমিকদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০৭:৫৯ এএম

চা শ্রমিকদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক
চা শ্রমিকদের সাথে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

চা শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্ট আর নানা দাবি-দাওয়ার কথা শুনলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সাথে শ্রমিকদের দিয়েছেন আশ্বাস।

বিশেষ করে চা শ্রমিকদের সকলেই নিজ নিজ ঘর পাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

এই শিল্প যেন ধ্বংস না হয় সেজন্য মালিক-শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের ঐতিহ্যবাহী চা শিল্পকে কোনোভাবেই ধ্বংস হতে দেওয়া হবে না। 

মজুরি বাড়ানোর পর চা শ্রমিকদের দাবি ছিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার। তাদের সেই দাবিতে সাড়া দেন প্রধানমন্ত্রী। 

সেই অনুযায়ী শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও চট্টগ্রামের চা শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তাদের কথা শোনেন।    

বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মৌলভীবাজারের পাত্রখোলা চা বাগানের শ্রমিকদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন শেখ হাসিনা। 

চা শ্রমিকদের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, “বঙ্গবন্ধু চা শিল্পকে জাতীয়করণ করেননি, বরং নানাভাবে প্রণোদনা দিয়েছেন, যাতে এই শিল্পটা ভালোভাবে গড়ে উঠতে পারে। জাতির জনক চা শ্রমিকদের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দেন। তাদের ভোটাধিকারও দেওয়া হয়। চা শিল্পের উন্নতির জন্য বিশেষ ভর্তুকির ব্যবস্থা করেন। বিনামূল্যে বাসভবন, সুপেয় পানি, রেশন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এক সময় চা শ্রমিকদের অন্যভাবে ব্যবহার করা হতো। বঙ্গবন্ধুর পদক্ষেপের ফলে তারা অধিকার ফিরে পেয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “চা শ্রমিকরা আমাদের দেশেরই নাগরিক। কিন্তু এক সময় তাদের নাগরিকত্ব ছিল না। ছিলো না ঘরবাড়ি।  আমরা সবসময় চেষ্টা করেছি আপনাদের সমস্যাগুলো দূর করতে।”

আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “কিছুদিন আগে আন্দোলন হয়েছে। আমি সেই সময় মালিকদের সঙ্গে বসে আপনাদের দৈনিক মজুরি ও অন্যান্য সুবিধা নির্ধারণ করি। আমার মনে হয় সেখানে আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী করতে পেরেছি।”

চা-শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, “ব্রিটিশরা আপনাদের পূর্বপুরুষদের নিয়ে এসেছিল। তখন আপনাদের কোনও নাগরিক অধিকার ছিল না। কোনও সুযোগ-সুবিধা ছিল না। আজ আপনারা এদেশের নাগরিক। বঙ্গবন্ধু আপনাদের নাগরিকত্ব দিয়েছেন। তার কন্যা হিসেবে আপনাদের প্রতি আমার একটি দায়িত্ব রয়েছে। আমি চেষ্টা করি সবসময় এই দায়িত্বটা যথাযথভাবে পালন করতে। মালিকরা যাতে আপনাদের যথাযথভাবে মর্যাদা দেয় ও দেখে সেই উদ্যোগ নিয়েছি।”

ইতোপূর্বে চা-শ্রমিকদের দেওয়া স্বর্ণের চুড়ি উপহার পাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনারা গণভবনে আমার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় উপহার নিয়ে এসেছিলেন। সেই উপহার এখনও আমি হাতে পরে বসে আছি। আমি কিন্তু ভুলিনি। আমার কাছে এটা হচ্ছে সব থেকে অমূল্য সম্পদ। চা-শ্রমিক ভায়েরা চার আনা-আট আনা করে জমিয়ে আমাকে এই উপহার দিয়েছেন। এত বড় সম্মান, এতবড় উপহার আমি আর কখনও পাইনি।”

দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে গত ৯ অগাস্ট থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন দেশের ২৪১টি চা বাগানের প্রায় সোয়া লাখ শ্রমিক। প্রথম চারদিন শ্রমিকরা প্রতিদিন দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন। ১৩ অগাস্ট থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন শুরু করেন শ্রমিকরা।

টানা ধর্মঘটের মধ্যে ২০ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে মজুরি বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার ঘোষণার পর সুরাহার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। ওইদিন শ্রমিক ইউনিয়ন কাজে ফেরার ঘোষণা দিলে কয়েকটি বাগানে শ্রমিকরা কাজে নেমেছিলেন। কিন্তু বেশির ভাগ শ্রমিক এ মজুরি না মেনে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।

আন্দোলনের ১৯তম দিন গত ২৭ অগাস্ট গণভবনে চা বাগান মালিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকের পর নতুন মজুরির ঘোষণা আসে। এরপর শ্রমিকরা নিজ নিজ বাগানে কাজে ফিরেছেন।