রাষ্ট্র সংস্কার ফোরামের উদ্যোগে একদিনে ৩০০ আসনে নির্বাচন নয় এই স্লোগানে নির্বাচন সংস্কার বিশ্লেষণ শিরোনামে এক আলোচনা সভা শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্র সংস্কার ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী নুরুল কাদের সোহেল। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমিনুল করিম (অব.), সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন, নিরাপদ সড়ক চাই’র চেয়ারম্যান ও চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. নাজিম উদ্দীন (অব.), সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি এ বি এম ওয়ালিউর রহমান খান।
নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের সুপারিশ : আলোচনা সভায় বক্তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে অন্তরায় বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ উত্থাপন করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোট নিশ্চিত করা এবং সংসদ নির্বাচনের দিন একইসাথে দুটি পৃথক ব্যালট পেপারে ভোট প্রদান; স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন ও সরকারের হস্তক্ষেপমুক্ত রাখা; জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে জেলা রিটার্নিং অফিসার এবং উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব প্রদান; জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত রাখা; নির্বাচনী কর্মকর্তাদের বদলি ও শাস্তির জন্য নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন; নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের তিন বছরের বেশি একই উপজেলায় না রাখার বিধান; জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান এবং নির্বাচনে অনিয়ম বা দায়িত্বে অবহেলার জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা।
প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণের প্রস্তাব : সভায় সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। সংসদ সদস্য এবং উপজেলা চেয়ারম্যান পদের জন্য স্নাতক বা দাওরায়ে হাদিস উত্তীর্ণ হওয়া আবশ্যক এবং ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক করা যেতে পারে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার প্রস্তাব : বক্তারা রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দেন- নির্বাচন কমিশনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির নির্বাচনের ব্যবস্থা করা এবং নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে দলীয় নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা।
নির্বাচনী প্রচারে পোস্টার নিষিদ্ধের দাবি : সভায় বক্তারা নির্বাচনী প্রচারে পোস্টার নিষিদ্ধ করার জন্য একাধিক কারণ তুলে ধরেন- শীতকালে কুয়াশার কারণে পোস্টার নষ্ট হয়ে রাস্তা নোংরা হয়; প্রভাবশালী প্রার্থীদের কর্মীরা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেললেও নিরীহ প্রার্থীরা প্রতিবাদ করতে পারেন না; লক্ষ লক্ষ পোস্টার রাস্তায় পড়ে থেকে পরিবেশদূষণের কারণ হয়; সরকারী নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও পলিথিনযুক্ত পোস্টার ব্যবহৃত হয়, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর; পোস্টার ছাপানোর জন্য বিপুল পরিমাণ কাগজ আমদানি করতে হয়, ফলে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট দেখা দেয়; কাগজের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষা উপকরণের দাম বৃদ্ধি পায় এবং উন্নত দেশগুলোতে নির্বাচনী প্রচারে পোস্টারের প্রচলন নেই। সভায় বক্তারা নির্বাচন ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।