শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫

মামলার পরও জোরপূর্বক পুকুর ভরাটের অভিযোগ, বেপরোয়া অভিযুক্তরা

ইফতেখার হোসেন

প্রকাশিত: ১০ মার্চ, ২০২৫, ০৮:০৩ পিএম

মামলার পরও জোরপূর্বক পুকুর ভরাটের অভিযোগ, বেপরোয়া অভিযুক্তরা

চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকার পাচলাইশ মৌজায় এক নিরীহ পরিবারের সম্পত্তি দখল ও পুকুর ভরাটের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় চার ব্যক্তির বিরুদ্ধে। 

অভিযুক্তরা হলেন, কক্সবাজারের চকরিয়া থানা এলাকার কৈয়ারবিল এলাকার আলী আকবর মিন্টুর ছেলে সালাহ উদ্দীন (৫০), চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানা এলাকার  পশ্চিম ফরহাদাবাদের মোহাম্মদ সেকান্দার মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ জাহেদ (৩৫), চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকার পশ্চিম শহীদ নগর এলাকার এস এম ফরিদ উদ্দীনের ছেলে তানজিল হাসান নবাব (৩৪) ও চন্দনাইশ উপজেলার উত্তর জোয়ারা এলাকার রফিকুল ইসলামের সন্তান রাইফাতুল ইসলাম। 

অভিযোগ রয়েছে, প্রতারণামূলকভাবে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি তৈরি করে সম্পত্তি হস্তান্তরের চেষ্টা করছে এই চক্র। পাশাপাশি পুকুর ভরাটের মাধ্যমে জলাধার নিশ্চিহ্ন করার মহাযজ্ঞে লিপ্ত হয়েছে এই গোষ্ঠী। সম্পত্তির বৈধ মালিকানার দাবি নিয়ে আদালতে চলছে ঘোষণামূলক মামলা, অন্যদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে জরুরি হস্তক্ষেপের আবেদন জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই পরিবার।


স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ সূত্রে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ২২ শতাংশ ওই পুকুরের একাংশ মাটি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে এবং পাশেই একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা আছে। 

মামলার সূত্র অনুযায়ী, পাঁচলাইশ মৌজার দাগ নং ৮৩৯ (আর.এস খতিয়ান ১৪৩, বি.এস ১৭৮৫) সংলগ্ন পুকুরসহ জায়গার মালিক বাদী শিমুল চন্দ্র দাশ (৪৭) এর পৈতৃক সম্পত্তি। 

শিমুলের দাবী, তার পিতা প্রফুল্ল কুমার সর্দারের মৃত্যুর পর তিনি ও তার মা অনিমা বালা দাশ বৈধভাবে সম্পত্তির মালিক। তবে ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে ১ থেকে ৪ নম্বর বিবাদীগণ একটি "অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি" (নম্বর ৯৪৩১) জাল করে সম্পত্তি বিক্রির চক্রান্ত করছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

শিমুল চন্দ্র দাশ জানান, পেশায় একজন  চাকরিজীবী হওয়ায় প্রায় সময় তাকে ব্যস্ত থাকতে হয়। তার এই ব্যস্ত থাকার সুযোগ নিয়ে তার মা অনিমা বালাকে হুমকি ও গালাগালির মাধ্যমে ভোগদখলে বিঘ্ন সৃষ্টি করা হচ্ছে বলেও অভিযকরেন তিনি।  

অভিযোগে সূত্রে জানা যায়, বিবাদী এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও জাল কাগজ প্রদর্শন করে পুকুরের পানি নিষ্কাশন করে মাটি ভরাট করছে। যা 'জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০ ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। 

স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, রাতের অন্ধকারে ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে পুকুর ভরাটের করছে।  পরিবেশবিদরা সতর্ক করেছেন, এভাবে জলাধার ধ্বংস হলে এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বিপদসীমায় নেমে যাবে এবং বন্যার ঝুঁকি বাড়বে।  


বাদীর মা অনিমা বালা দাশ বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে এই জমি নিয়েই ষড়যন্ত্র। ছেলে তার কাজে ব্যস্ত থাকে, আমি একা এই বৃদ্ধ বয়সে কিভাবে লড়াই করবো। ওরা আমাকে গালি দেয়, হুমকি দেয়। পুকুর ভরাট করে আমাদের জীবিকা শেষ করতে চায়।


বাদীপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট উৎপল কান্তি রাহা বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে সৃষ্ট দলিল আইনগতভাবে বাতিলযোগ্য। আমরা আদালতে প্রমাণ উপস্থাপন করেছি যে, এই পাওয়ার অব অ্যাটর্নিতে কোনো অর্থ লেনদেন হয়নি এবং এটি জবরদস্তি ও প্রতারণামূলক। 

চট্টগ্রাম সাব-রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, বিষয়টি আদালতের নোটিশ পেলে তারা প্রাসঙ্গিক দলিল নিষ্পত্তি স্থগিত রাখবেন।  

অভিযুক্ত ১ নং বিবাদী সালাহ উদ্দিনের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে সাড়া দেননি।

তবে ৩ নং অভিযুক্ত তানজিল হাসান নবাব বলেন, 'আমরা কোন পুকুর ভরাট করছি না, আমরা এই জমি বিক্রি করে দিয়েছি, হয়তো তারা ভরাট করছে।'

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, "লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ফিল্ড ইনভেস্টিগেশন টিম পাঠানো হবে। যদি আইনভঙ্গ প্রমাণিত হয়, অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা ও ভরাট বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

এই মামলা শুধু একটি সম্পত্তি বিরোধ নয়, এটি চট্টগ্রামের নগরায়ণ প্রক্রিয়ায় জলাধার রক্ষার লড়াইয়েরও প্রতীক বলে মনে করেন এলাকাবাসী । প্রবাসী শ্রমিকদের সম্পত্তি সুরক্ষা এবং পরিবেশ আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করছে স্থানীয়রা।