দেশের কৃষির অন্যতম ৩টি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ বীজ, সার ও সেচ সুবিধাদি কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে গঠিত একটি রাষ্ট্রীয় জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলো বাংলাদেশে কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। কৃষিজ উৎপাদন অব্যাহত রাখা ও খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষায় এই প্রতিষ্ঠানের অনন্য ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিগত ১৫-১৬ বছরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সরকারি এ প্রতিষ্ঠানে লুটপাটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির পাহাড় গড়ে তুলেছেন কতিপয় দুর্নীতিগ্রস্ত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট চক্রের কর্মকর্তারা।
গত ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশে দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জিত হলে বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তার জোর তৎপরতায় কতিপয় পদে পরিবর্তন সাধিত হলেও অধিকাংশ পদে এখনও আওয়ামী ফ্যাসিস্ট চক্র বহাল তবিয়তে থেকে নানাবিধ অপকর্ম ও ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে।
সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ক্ষমতায় থাকাকালীন টাকার বিনিময়ে ৩ ধাপ জুনিয়র অফিসারকেও তিনি মহাব্যবস্থাপক বানিয়েছিলেন। অযোগ্য কর্মকর্তাদের তিনি প্রকল্প পরিচালক করেছিলেন। একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক। কোটি টাকার বিনিময়ে তিনি পিডি নিয়োগ দিতেন। টেন্ডার বাণিজ্যে তিনি এবং তার দুই ছেলে নিয়ন্ত্রণ করতেন। বর্তমানে একটি চক্র বিএডিসিতে সক্রিয় হয়েছে। এই চক্রটি বদলি বাণিজ্যে শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি বিএডিসিতে নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে ঠাকুরগাঁও জেলার বাসিন্দা রুহুল আমিন খান যোগদানের পর হতেই আওয়ামী ফ্যাসিস্ট চক্রটি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তার যোগদানের এক মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে এ পর্যন্ত ৪৫টি অর্ডারে ৬০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বিভিন্ন পদে পদায়ন/দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের যোগদানের স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এতগুলো বদলির আদেশ হওয়ায় বদলি বাণিজ্যের গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি মহাব্যবস্থাপক (ক্রয়) পদে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় দায়িত্বপালনকারী ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তা হিসেবে আহমেদ হাসান আল মাহমুদকে পদায়ন করা হয়েছে। অথচ তার বিরুদ্ধে আওয়ামী ফ্যাসিস্টের সহযোগী হিসেবে অনেক অভিযোগ রয়েছে। অধিকন্তু বাহাউদ্দীন নাসিমের একান্ত সহচর হিসেবে পরিচিত দাপুটে ও দুষ্টু চরিত্রের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমানে সিনিয়র সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে ঠাকুরগাঁও জেলায় উপপরিচালক (অধিক বীজ) হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।
এই পদায়নে বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন হয়েছে বলে বিএডিসিতে ব্যাপক গুঞ্জন শুরু হয়েছে। পরবর্তী ধাপে সুবিধাভোগী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত দিনাজপুর অঞ্চলের যুগ্ম-পরিচালক (সার) শওকত আলী নামীয় কর্মকর্তাকে সদর দপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের পরিকল্পনা রয়েছে বলে শুনা যাচ্ছে।
বর্তমান সরকারকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা প্রদানকারী ইতোপূর্বে বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এই সব কর্মকর্তারা মনে করেন যে, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট চক্রের কাউকে সহযোগিতা মানেই হাজারো শহীদে রক্তের সঙ্গে চরম বেঈমানী করা ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করা। এটি একটি গভীর রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের অংশও বটে।
বিএডিসি সূত্র জানা গেছে, আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের দোসর একটি দুষ্টু চক্র নবনিযুক্ত চেয়ারম্যানকে ভুল বুঝিয়ে দ্রুততম সময়ে এই বদলির আদেশ করিয়ে নিচ্ছে এবং বিপুল পরিমাণ আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠছে। কিন্তু আওয়ামী ফ্যাসিস্ট চক্র কর্তৃক দখলকৃত পদগুলোতে এখনো কোন পরিবর্তন হচ্ছে না। ওই সমস্ত কর্মকর্তারা অর্থের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে স্বপদে বহাল তবিয়তে আছে।
এ অবস্থায় বিএডিসির মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এমন অস্থিরতায় দেশের কৃষিজ উপকরণ সরবরাহকারী এই প্রতিষ্ঠানটি বাধার সম্মুখীন হলে দেশে অস্থিরতা, কৃষিজ উৎপাদন তথা খাদ্য নিরাপত্তা ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।