জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি ধারণ, সাম্প্রদায়িক মেলবন্ধন এবং পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের তথাকথিত উন্নয়নের নামে কুকীর্তিমূলক কর্মকাণ্ডকে উপজীব্য করে ভিন্নমাত্রিকভাবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে মুনির চৌধুরী জাতীয় নাট্যোৎসব–২০২৫ উপলক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার (১৩ই ফেব্রুয়ারি) খুলনা জেলা শিল্পকলায় প্রদর্শিত হতে যাচ্ছে নাটক "চব্বিশের চিরকুট"।
নাটকের নির্যাস সম্পর্কে জানা যায়, অত্যাচারের মাত্রা যখন লঙ্ঘন করে সকল সীমারেখা,বন্দুকের নলে যখন ভুলুন্ঠিত হয় গণতন্ত্র , ক্ষমতার রন্ধ্রে রন্ধ্রে যখন দুর্নীতি, ন্যায়ের পরিবর্তে অন্যায়ই যখন শোষনের মূলমন্ত্র। অর্থ পাচার, বাজার সিন্ডিকেট, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি যখন চরমে, দুমুঠো খাবার জোটাতে মানুষের যখন নাভিশ্বাস তখন ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে একদল উদ্ভট প্রকৃতির মানুষ।
তথাকথিত উন্নয়নের মহাযজ্ঞ বসিয়ে তারা ব্যস্ত হয়ে পরে নিজেদের আখের গোছাতে। ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করা মানুষটি হয়ে ওঠে ইতিহাসের ভয়ঙ্কর স্বৈরাচার। পর্যায়ক্রমে স্বৈরাচারের হাতে জিম্মি হয়ে যায় দেশের সর্বস্তরের মানুষ। তিনি হয়ে ওঠেন সর্বময় ক্ষমতার একচ্ছত্র অধিকারী। পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়ায় যে, কেউ অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললেই হয় তাকে হত্যা করা হয়, নয়তো গুম করে চালানো হয় নির্মম নির্যাতন।
একটা পর্যায়ে নিজেদের প্রাণের দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে। তখন হায়েনার মতো রক্তের নেশায় পাগল হয়ে যায় স্বৈরাচার এবং তার দোসরেরা। নির্বিচারে হত্যা করা হয় হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে। রাজপথ রঞ্জিত হয় নির্দোষ লহু প্রপাতে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যেমন রুখে দাঁড়ায় আক্রান্ত দূর্বল মানুষ। তেমনি রুখে দাঁড়ায় দেশের আপামর জনগণ। আওয়াজ তোলে রক্তপিপাসু স্বৈরাচারের শোষণ, নিপীড়নের বিরুদ্ধে। অবসান ঘটে দীর্ঘ অমানিশার, উদিত হয় নব সূর্য।
নাটক প্রসঙ্গে নির্দেশক বলেন, 'চব্বিশের চিরকুট'কেবল একটি নাটক নয় বরং বাংলার আপামর জনতার ঐক্যবদ্ধ আহ্বানের গল্প। যে আহ্বানে রাজপথে নেমে এসেছিল বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লক্ষ লক্ষ ছাত্র-জনতা, বাংলাদেশের মাটি থেকে উৎখাত হয়েছে ইতিহাসের ঘৃন্যতম ফ্যাসিবাদী সরকারের। চেনতাকে পুঁজি করে গণতন্ত্র ভুলুন্ঠন, গুম,খুন, চাঁদাবাজি,দুর্নীতি, বাজার সিন্ডিকেট এমন কোন কাজ অবশিষ্ট নেই যা সময়ের ঘৃণিত এই শাসক করেননি। দেশে এমন এক স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে রেখেছিলেন যে, মানুষ তার অধিকার চাওয়া দূরে থাক কেউ কথা বলতেই ভয় পেত, এ যেন উদ্ভট উটের পিঠে চলছিল আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি।'
এসময় নির্দেশক আরও বলেন, 'এমনকি অন্যায়ের প্রতিবাদ করার নির্মমভাবে খুন হতে হয়েছিল আবরার ফাহাদকে। এইতো সেদিনের কথা, নিজের অধিকার চাওয়ায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে, গুলি থেকে বাদ যায়নি ছয় বছরের শিশু থেকে ষাটোর্ধ রিক্সাচালকও। ফ্যাসিস্ট রেজিমের দীর্ঘ সতের বছরের বন্ধ্যাত্ব কাটিয়ে দেশ যখন নতুন স্বপ্ন দেখছে তখন নতুন করে ষড়যন্ত্রের পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে ফ্যাসিস্টের দোসরেরা। চেষ্টা চালাচ্ছে ধর্মীয় বিভেদের, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার। এই পুরো বিষয়টিকে মাথায় রেখেই আবর্তিত হয়েছে নাটক 'চব্বিশের চিরকুট'।'
সবশেষে এই নির্দেশক নাটকটি রচনার প্রক্রিয়া এবং বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন,' আমাদের পুরো নাটকটিই ইমপ্রোভাইজেশন ধর্মী,যার পান্ডুলিপি নির্মাণে বিশেষভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে বন্ধুবর, সাংবাদিক ওবায়দুর রহমান সোহান রচিত 'হিস্যা' নাটকটি। আমি মনে করি এই সম্পূর্ণ পথচলায় সহকারী নির্দেশক খালিদ সাইফুল্লাহর অবদান সবথেকে বেশি। তার অক্লান্ত পরিশ্রমে আজকের এই নাটক তার স্বকীয়তা অর্জন করেছে। এছাড়াও ছোটবোন নারিন আফরোজ লিনসার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নাট্য নির্মানে ভিন্ন এক শক্তি জুগিয়েছে। এছাড়া ছোট ভাই জিতাদিত্য বড়ুয়ার সার্বিক সহযোগীতায় বেগ পেতে হয়নি। আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই বাগেরহাট জেলা শিল্পকলা একাডেমির অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কালচারাল অফিসার মোঃ রফিকুল ইসলামকে, তার আন্তরিক সহযোগিতার জন্য।'
উল্লেখ্য, 'চব্বিশের চিরকুট' নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী তরিকুল সরদার যেখানে সহকারী নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ। এছাড়াও মঞ্চ ও আলোক প্রক্ষেপণে জিতাদিত্য বড়ুয়া,পান্ডুলিপি অনুপ্রেরণায় ওবায়দুর রহমান সোহান, সংগীত পরিকল্পনা ও প্রয়োগে তরিকুল সরদার,নৃত্য পরিকল্পনায় নারিন আফরোজ লিনসা, পোশাক পরিকল্পনায় ফারিয়া তাসনিম (ঐশী), দ্রব্যসামগ্রী নির্মানে শেখ সাইফুল ইসলাম, রূপসজ্জায় খালিদ সাইফুল্লাহ সহ আরও অনেকে।
উল্লেখ্য, নাটকটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন, মিথিলা,তয়ন সাহা,সিরাজুম মুনির,মেহেদী হাসান,মোঃ আসফাক শাহরিয়ার সাকিব,মুক্তা আক্তার, জেসমিন খাতুন,মাধবী পাল, সমির শাহরিয়ার জীম,কানিজ ফাতেমা ইভা,সিনথীয়া ইসলাম আরবী,উষ্মি পাল,তাহিরা আক্তার মিম,শেখ আনোয়ার হোসেন,সজল হাওলাদার এবং উপা রায়।