কামরুল হাসান, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে আলোচিত-সমালোচিত শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নয়টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার কালারপুল ও ইছানগরে কর্ণফুলী নদীর পাড় এবং বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারায় কারখানাগুলোর অবস্থান।
এস আলম কর্তৃপক্ষের দাবি, গ্রুপের নামে নতুন করে কোনো এলসি না খোলা এবং বিদেশ থেকে কাঁচামাল আনতে না পারায় একে একে বন্ধ হয়ে পড়ছে কারখানাগুলো। কারখানা বন্ধ করার বিষয়ে বিভিন্ন কারখানার নামে পৃথক পৃথক নোটিস জারি করা হয়। কয়েকটি কারখানাকে এক নোটিসে বন্ধেরও ঘোষণা জানানো হয়। কারখানা কর্তৃপক্ষ গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টায় ২৫ ডিসেম্বর থেকে ৯টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার নোটিস জারি করলে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ওইসব শ্রমিক–কর্মচারীরা।
বন্ধ কারখানাগুলো হলো- এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এস আলম পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেড, এস আলম স্টিলস লিমিটেড, এস আলম ব্যাগ ম্যানুফ্যাকচারিং মিলস লিমিটেড, চেমন ইস্পাত লিমিটেড, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড (এনওএফ), এস আলম পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড এবং ইনফিনিটি সিআর স্টিপস লিমিটেড।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে গ্রুপটির মানব সম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিনের স্বাক্ষরে এসব কারখানা বন্ধের বিষয়ে নোটিশ দেওয়া হয়। বন্ধের নোটিশ দেখে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শ্রমিকেরা। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবারও কারখানা চালু হবে বলে জানান কর্মকর্তারা। এটি দেখে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করেন শ্রমিকেরা।
এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের ডিজিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা নোটিশ পেয়েছি। নোটিশে উল্লেখ করা হয়, সকল শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে অনিবার্যকারণবশত আগামী ২৫ ডিসেম্বর হতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারখানা বন্ধ থাকবে। তবে, নিরাপত্তা বিভাগ, ডেলিভারি সেকশন ও জরুরি বিভাগ (ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক) খোলা থাকবে। নোটিশে কারখানা খোলার তারিখ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী নোটিশের মাধ্যমে জানানো হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
এ-দিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এস আলম গ্রুপের হেড অফিসের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, ৫ আগস্ট দেশে পট পরিবর্তনের পর থেকে গ্রুপের বিভিন্ন কারখানায় কাঁচামালের সংকট দেখা দেয়। নতুন করে এলসি খোলাও সম্ভব হয়নি। ফলে বিভিন্ন দেশ থেকে কারখানার জন্য কাঁচামাল আনা সম্ভব না হওয়ায় কাঁচামালের অভাবে কারখানাগুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন, কাঁচামালের অভাবে অন্য কারখানাগুলোর উৎপাদন আগে বন্ধ হলেও সর্বশেষ এস আলম সুগার মিল ও এস আলম সুপার এডিবল ওয়েল কারখানাটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে গ্রুপের চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় বন্ধ হওয়া সব কারখানার শ্রমিক–কর্মচারীদের বেতন–ভাতা পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত চালু থাকবে বলে জানান তিনি।
এস আলম গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ের দুই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, ব্যাংকের সহযোগিতা না পাওয়ায় কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না। কাঁচামাল আমদানি করা না গেলে কারখানা চালু করার সুযোগ নেই। এ জন্য সাময়িকভাবে কারখানা বন্ধ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক দখল করে নেয়। এরপর আরও একাধিক ব্যাংক ও বিমা দখল করে নামে-বেনামে ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে নেয়। পাশাপাশি গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামেও ঋণ অনুমোদন করা হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এসব ব্যাংক এস আলম মুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলো হলো— ন্যাশনাল ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।
এর আগে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ডিজিএফআইয়ের সহায়তায় কয়েকটি ব্যাংক দখল করার পর ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলমের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার সহযোগীরা অন্তত ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি ডলার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বের করে নিয়েছেন।