বুধবার, মার্চ ১২, ২০২৫

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন: নতুন ১৮ ওয়ার্ডে উন্নয়ন অগ্রাধিকার, ন্যায্য সেবার প্রতিশ্রুতি প্রশাসকের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১ মার্চ, ২০২৫, ১১:০৩ পিএম

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন: নতুন ১৮ ওয়ার্ডে উন্নয়ন অগ্রাধিকার, ন্যায্য সেবার প্রতিশ্রুতি প্রশাসকের



ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সম্প্রসারিত ১৮টি ওয়ার্ডের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাজধানীর গুলশান নগরভবনে নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নিয়ে আয়োজিত গণশুনানিতে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, "নতুন ওয়ার্ডগুলোর উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং ন্যায্যতার ভিত্তিতে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।"
প্রশাসক আরও বলেন, "আমরা চাই, এই শহরকে একটি ন্যায্য নগর হিসেবে গড়ে তুলতে। গুলশান-বনানীর মতো এলাকাগুলোর চেয়ে বেশি বিনিয়োগ নতুন ওয়ার্ডগুলোর উন্নয়নে করা হবে, কারণ এসব এলাকায় মৌলিক নাগরিক সুবিধার তীব্র সংকট রয়েছে।"
গণশুনানিতে নতুন ওয়ার্ডগুলোর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন স্কুল-কলেজের শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, বাজার কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সোসাইটির নেতৃবৃন্দ, যুবক, ছাত্র প্রতিনিধি এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। তারা নতুন ওয়ার্ডগুলোর নাগরিক সুবিধার ঘাটতির কথা তুলে ধরেন। বিশেষ করে সড়ক অবকাঠামো, ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিশুদ্ধ পানির সংকট, খেলার মাঠ, পার্ক ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়।
গণশুনানিতে মশা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। ডিএনসিসি প্রশাসক জানান, নগরীর বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা করা হচ্ছে, যদি বাড়িতে বা ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, "শুধু জরিমানা করে সমস্যার সমাধান হবে না, নাগরিকদের সচেতন হতে হবে। আমাদের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা অনেক জায়গায় প্রবেশ করতে পারেন না, তাই বাসাবাড়ির অভ্যন্তরীণ পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা নাগরিকদের দায়িত্ব।"
ডিএনসিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, মহাখালী হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত রয়েছে, এবং স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে।
ডিএনসিসি প্রশাসক জানান, নতুন ওয়ার্ডগুলোতে পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য সেনাবাহিনী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তবে এই উন্নয়নে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তিনি বলেন, "নতুন ওয়ার্ডগুলো থেকে আমরা নামমাত্র রাজস্ব পাচ্ছি, অথচ এসব এলাকায় ব্যাপকভআবে উন্নয়ন প্রয়োজন। তবুও আমরা মাঠ, পার্ক এবং অন্যান্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।"
তিনি আরও বলেন, "ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) অনুযায়ী নির্ধারিত মাঠ ও পার্কের জায়গাগুলো রক্ষা করা হবে। খাস জমিগুলো সংরক্ষণ করে সেগুলোকে খেলার মাঠ ও পার্কে রূপান্তর করা হবে।"
ডিএনসিসির প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, সম্প্রসারিত ওয়ার্ডগুলোর উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে এবং সড়ক প্রশস্তকরণ, ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ, ফুটপাত উন্নয়ন, নিরাপদ পানি সরবরাহ, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ও খেলার মাঠ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
অনেক বাসিন্দা অভিযোগ করেন, তারা সঠিক নাগরিক সুবিধা পাচ্ছেন না, অথচ কর (ট্যাক্স) দিতে বলা হচ্ছে। এক বাসিন্দা বলেন, "আমরা যদি পুরোনো ওয়ার্ডগুলোর মতো নাগরিক সুবিধা না পাই, তাহলে কর দেব কেন?"
এ প্রসঙ্গে প্রশাসক বলেন, "নগর উন্নয়নে কর দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমরা বুঝি যে, সেবার মান উন্নত না হলে নাগরিকদের কাছে কর দেওয়া অনেক সময় বোঝা মনে হয়। তাই আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে— উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে নাগরিকদের জন্য ট্যাক্সের বিনিময়ে মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করা।"
তিনি আরও বলেন, "পুরোনো ৩৬টি ওয়ার্ডের তুলনায় নতুন ১৮টি ওয়ার্ড থেকে কর আদায়ের হার অনেক কম। কারণ অনেক জায়গায় এখনো কর নির্ধারণ হয়নি। তবে কর আদায় বাড়াতে আমরা ন্যায়সংগত ও স্বচ্ছ পদ্ধতি অনুসরণ করবো।"
প্রশাসক এজাজ নাগরিকদের উন্নয়ন পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, "নগরবাসীর নিজস্ব একটি ন্যারেটিভ থাকা দরকার। তারা কী ধরনের সেবা চান, কোন অবকাঠামো প্রয়োজন—এটি স্পষ্ট হলে উন্নয়ন কার্যক্রম আরও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।"
তিনি আরও বলেন, "নগর ব্যবস্থাপনার লক্ষ্য হচ্ছে ঢাকার মূল কাঠামোর সঙ্গে নতুন ওয়ার্ডগুলোকে কার্যকরভাবে যুক্ত করা, যাতে এসব এলাকায় নাগরিক সেবা নিশ্চিত হয়। এক্ষেত্রে নগরবাসীর সহযোগিতা ও মতামত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।"
ডিএনসিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গণশুনানিতে প্রাপ্ত মতামত বিশ্লেষণ করে উন্নয়ন পরিকল্পনা সাজানো হবে। প্রশাসক বলেন, "একটি পরিকল্পিত, বাসযোগ্য ও ন্যায্য নগর গড়ে তুলতে নাগরিকদেরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। সবার সহযোগিতায় একটি উন্নত নগর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সম্ভব।"
গণশুনানিতে ডিএনসিসির বিভিন্ন বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা: আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান,প্রধান প্রকৌশলী: ব্রিগে. জেনা. মো. মঈন উদ্দিন,প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা: ব্রিগে. জেনা. ইমরুল কায়েস চৌধুরী,প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা: কমডোর এ বি এম সামসুল আলম
 ডিএনসিসির সচিব: মামুন-উল-হাসান।
ডিএনসিসি প্রশাসন গণশুনানিতে উত্থাপিত মতামত পর্যালোচনা করে ধাপে ধাপে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে।