নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৬:১২ পিএম
হাসান সৈকত
রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে এখনো অনিশ্চয়তা ও আতঙ্কে দিন পার করছেন ৪০ তম এসআই ক্যাডেট ব্যাচের প্রশিক্ষণরত ৪শ’ ৮৮ জন ক্যাডেট সাব ইন্সপেক্টর। চলতি বছরের গেল ৪ নভেম্বর এক বছর মেয়াদী মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষ হলেও অনিবার্য কারণ দেখিয়ে স্থগিত করা হয় তাদের পাসিং আউট প্যারেড।
কথা ছিলো প্রশিক্ষণ শেষে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে যোগদানের। তবে পাসিং আউট প্যারেড স্থগিতের প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও সারদার পুলিশ একাডেমিতে নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণায় দিন পার করছেন ক্যাডেট সাব ইন্সপেক্টররা।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর দেশের বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ্যের অদল-বদল হলেও সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির ক্যাডেট উপ-পরিদর্শকদের উপর নেমে আসে চরম দুঃখ-দূর্দশা। এর আগে গত ২১ অক্টোবর ৪০ তম এসআই ক্যাডেট ব্যাচের প্রশিক্ষণরত ২শ’ ৫২ জন এবং গত ৪ নভেম্বর একই ব্যাচের আরও ৫৮ জন ক্যাডেট এসআইকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে নাশতা না খেয়ে মাঠে হইচই করা এবং ক্লাসে বিশৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ চলাকালে অমনোযোগী থাকার অভিযোগ আনা হয়। সর্বশেষ গত ১৮ নভেম্বর আরও তিন প্রশিক্ষণার্থীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এনিয়ে ৪০ তম ব্যাচের মোট ৩শ’ ১৩ জন প্রশিক্ষণার্থী এসআইকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
জানা যায়, ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর এক বছর মেয়াদী মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহনের জন্য মোট ৮২৩ জন ক্যাডেট সাব ইন্সপেক্টর বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে যোগদান করে। তবে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর ৩শ’ ১৩ জন প্রশিক্ষণার্থী এসআইকে অব্যাহতি দেওয়া হলে বর্তমানে আছেন মাত্র ৪শ’ ৮৮ জন।
নাম প্রকাশ না শর্তে একজন ক্যাডেট সাব ইন্সপেক্ট বলেন, অনিবার্য কারণ দেখিয়ে আমাদের পাসিং আউট প্যারেড স্থগিত করা হয়। প্রশিক্ষণ শেষ হলেও প্রায় দুই মাস ধরে আমরা পুলিশ একাডেমিতেই অবস্থান করছি। চলতি বছরের গেল ৪ নভেম্বর প্রশিক্ষণ শেষ করে আমাদের বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটে যোগদানের কথা ছিলো। তবে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর থেকে আমাদের ভাগ্যে নেমে এসেছে চরম দু:খ-দূর্দশা। প্রতি মুহূর্তে আমরা নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।
এ সময় তিনি বলেন, শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ দেখিয়ে শেষ মুহূর্তে এসে তিনদফায় ৩শ’ ১৩ জন সহকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়। যা বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির ১শ’ ১২ বছরের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
এ বিষয়ে অন্য এক ক্যাডেট সাব ইন্সপেক্ট বলেন, পাসিং আউট স্থগিতের পর আমরা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা আমাদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি। তিনি আরো যোগ করে বলেন, কর্মকর্তারা সবাই একটা কথাই বলেন- ‘আমরা কিছুই জানি না’।
বেশ হতাশা নিয়ে নাম ওই ক্যাডেট সাব ইন্সপেক্ট আরো বলেন, আমরা সকলেই বিনা বেতনে প্রশিক্ষণ গ্রহনের জন্য একাডেমিতে প্রবেশ করি। থাকা-খাওয়া, পোশাক বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে ১ হাজার ৮শ’ ৫০ টাকা ভাতা প্রদান করা হয়, যা খুবই অপ্রতুল।
তিনি আরো বলেন, প্রতিমাসে পরিবারের কাছ থেকে টাকা এনে আমাদের যাবতীয় খরচ বহন করতে হয়। প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পরও পদায়ন হচ্ছে না। যা আমাদের পাশাপাশি পরিবারের জন্যও চরম উৎকণ্ঠার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
৪০ তম এসআই ক্যাডেট ব্যাচের প্রশিক্ষণরত সকলের পক্ষ থেকে একজন প্রশিক্ষণার্থী দৈনিক আজকের বাংলা’কে বলেন, আমরা সবাই চরম মানসিক অবসাদ ও উৎকণ্ঠায় ভুগছি। শুধুমাত্র একটা বিষয় মাথায় আসে, ‘আমরা বিগত হাসিনা সরকারের আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত, তাই আমাদের সাথে এই জুলুম করা হচ্ছে’। লোকচক্ষুর অন্তরালে আমরাই চরম বৈষম্যের শিকার।
তবে ৪০ তম এসআই ক্যাডেট ব্যাচের পাসিং আউট ও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে যোগদানের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির ভাইস প্রিন্সিপাল ডিআইজি (এডমিন এন্ড লজিস্টিক) এ.কে.এম এহসানুল্লাহ দৈনিক আজকের বাংলা’কে বলেন, রাজনৈতিক পট-পরিকর্তন ছাড়াও বিভিন্ন দাপ্তরিক কারণে পাসিং আউট প্যারেড স্থগিত করা হয়েছে। তবে সব কিছু ঠিক থাকলে ২০২৫ সালের প্রথম মাসেই ৪০ তম এসআই ক্যাডেট ব্যাচের পাসিং আউট প্যারেড সম্পন্ন হবে।