বুধবার, ফেব্রুয়ারী ৫, ২০২৫
logo
ধীরগতিতে অপরাপর মামলা আতঙ্কে নিরপরাধ ব্যক্তিরা

চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো ৫ আগস্ট-পরবর্তী মামলা প্রত্যাহার


নিজস্ব প্রতিবেদক   প্রকাশিত:  ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৬:১২ পিএম

চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো ৫ আগস্ট-পরবর্তী মামলা প্রত্যাহার

রাসেল চৌধুরী 

 

ফ্যসিস হাসিনা সরকার পলায়নের পর চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় দেড়শত মামলা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংঘটিত হামলা, হত্যাসহ আওয়ামী লীগ সরকারের নানা অপরাধ দুর্ণীতির বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোতে ৬ হাজারের বেশি মানুষকে আসামি করা হয়েছে। একেকটি মামলায় ৫০ থেকে দুই হাজার আসামি করা হয়েছে।

 

রোববার ৫ আগস্টের পর চট্টগ্রাম আদলতে করা মামলাগুলোর মধ্যে একটি মামলা প্রথম বারের মত প্রত্যাহার করা হয়েছে। সাবেক এমপি, সাংবাদিকসহ ৬৮ জনকে আসামি করে মোশাররফ হোসেন লিটন নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে আদলতে মামলাটি করেছিলেন। সম্প্রতি মোশাররফ হোসেন লিটনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার মামলাটি খারিজের আদেশ দেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের দায়িত্বে থাকা বিচারক কাজী শরীফুল ইসলাম। ইতিপূর্বে মামলাটি করার পর সিএমপির পাঁচলাইশ থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। 

 

অন্যদিকে চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় করা দেড়শত মামলার সমালোচনারও শেষ নেই। অভিযোগ আছে এসব মামলায় অপরাধীর চেয়ে নিরপরাধ মানুষকে বেশী আসামি । সরকার, এমনকি পুলিশের তরফ থেকেও এটি স্বীকার করা হচ্ছে। নিরপরাধ ব্যক্তিদের গ্রেফতার বা হয়রানি না করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া আছে-এমন কথা স্বয়ং পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বিভিন্ন ব্রিফিংয়ে বলছেন। এর আগে চট্টগ্রাম আদালতে মামলা করতে আসা এক ব্যক্তি বিচারকের জেরার মুখেও পড়তে হয়। অচেনা বক্তিদের আসামি করার বিষয়ে জবাব দিতে না পারায় আদালত তার মামলাটি না নেওয়ায় আইনজীবীরা বিচারকের সঙ্গে বচসায় জড়ান। এর প্রতিবাদে বিচারক এজলাস ত্যাগ করার ঘটনাও ঘটে। 

 

আবার আলোচ্য মামলার তদন্তে ধীরগতির কারণে নিরপরাধ ব্যক্তিরা আতঙ্কে আছেন। গ্রেফতারের ভয়ে অনেকে এলাকায় যেতে পারছেন না। আসতে পারছেন না প্রকাশ্যে। ফেরারি ও দুর্বিষহ জীবন পার করতে হচ্ছে তাদের। মামলা ঝুলে থাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, একশ্রেণির অসাধু পুলিশসহ বিভিন্ন পক্ষ আসামিদের কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সুবিধা নিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। হচ্ছে বড় ধরনের আর্থিক বাণিজ্যও। এ অবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব মামলাগুলোর তদন্ত শেষ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। প্রয়োজনে বিশেষ সেল করে প্রকৃত অপরাধীরা যাতে চিহ্নিত হন এবং নিরপরাধ ব্যক্তিরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, মামলা বাণিজ্য যাতে বন্ধ হয়, এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। না হলে আইনের শাসন সুদূরপরাহত হয়ে পড়বে। সমাজে শান্তি ফিরবে না।

 

 

৫ আগস্ট সরকার পতনের পর চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার বিভিন্ন থানায় গণহারে মামলা হতে থাকে। সবচেয়ে বেশি মামলা হয় নগরীর থানাগুলোয়। বহদ্দারহাট, নিউমার্কেট মোড়, ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভা-সমাবেশে হামলা, হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন তাণ্ডবের ঘটনায় যেমন মামলা হয়, তেমনই নাসিমন ভবনে বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর, চট্টগ্রাম আদালত ভবনে আইনজীবী হত্যা, গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায়ও মামলা হয়েছে। নগরী ও জেলার থানাগুলোয় করা প্রায় দেড়শ মামলায় ৬ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। এর বাইরে আদালতেও বেশকিছু মামলা করা হয়েছে।

 

কোনো কোনো মামলা সরাসরি এজাহার হিসাবে গণ্য করার জন্য থানা পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আবার কোনো কোনো মামলা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য থানা পুলিশ, পিবিআই, সিআইডিসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে করা এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে চট্টগ্রামের প্রায় সব আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য, সাবেক পুলিশ কমিশনার, পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ বা অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পদে থাকা নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। জেলায় সংঘটিত ঘটনায় নগরীর বাসিন্দা এবং নগরীতে সংঘটিত ঘটনায় জেলার বাসিন্দা এমনকি প্রবাসে থাকা ব্যক্তি, ঘটনার সময় চিকিৎসার জন্য বিদেশ থাকা ব্যক্তিদেরও আসামি করা হয়েছে। মামলা নিয়ে একটি মহল হোয়াটসঅ্যাপে এজাহারের খসড়া কপি পাঠিয়ে বাণিজ্য করেছে।

 

 

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম ও অপারেশন) হুমায়ুন কবির বলেন, নিরপরাধ ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। স্বয়ং আইজিপিও এমন নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন। তবে অপরাধীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। অপরাধীদের কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। মামলাগুলোর তদন্ত যাতে দ্রুত শেষ করা হয়, এ বিষয়েও থানার ওসি ও মামলার আইওদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। তাই মামলার আসামি হলেও সাধারণ ও নিরপরাধ লোকজনের কোনো ভয় নেই।