নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ০১ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৮:০১ পিএম
কামরুল হাসান, চট্টগ্রাম
বছরের প্রথম দিন চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বই বিতরণ উৎসবের সামান্য আয়োজন হলেও অনেক প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই ওঠেনি। কেউ কেউ পেয়েছে দু-একটি বই। আবার কয়েক প্রতিষ্ঠানে আয়োজন হয়নি বই উৎসব উদযাপনেরও। একটিও বই পায়নি এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অনেক। আজ থেকে শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাবর্ষ। বিগত বছরগুলোর প্রথমদিন পাঠ্যবই উৎসব করা হলেও এবার তা হয়নি। তবে কোনোরকম আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের কয়েকটি শ্রেণির বই সরবরাহ করা হয়েছে চট্টগ্রামের স্কুলগুলোতে।
এর মধ্যে কেবল ফটিকছড়ি উপজেলা ছাড়া প্রাথমিকের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির সব শ্রেণির পাঠ্যবই সরবরাহ করা হয়েছে। আর মাধ্যমিকের দুই থানা শিক্ষা অফিসের আওতাধীন ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ৭টি বই সরবরাহ করা হয়েছে স্কুলগুলোতে। ফলে সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই না উঠলেও বুধবার (১ জানুয়ারি) নতুন বছরের প্রথমদিন আংশিক বই পেয়েছে শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিন কয়েকটি স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, এবার বই উৎসবের সেই আনন্দ নেই। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বছরের প্রথমদিনটা ছিল যেন মন খারাপের। সব পাঠ্যবই একসঙ্গে পায়নি সবাই। কেউ পেয়েছে একটি। কেউবা দুটি। আবার কিছু স্কুলে একটিও পায়নি এমন শিক্ষার্থীও আছে। এদিকে বছরের প্রথমদিনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই বিতরণ কার্যক্রম চললেও মাধ্যমিকের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে তা ছিল না। তবে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি কার্যক্রম চালু ছিল।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, চট্টগ্রামের ৬ থানা শিক্ষা অফিস ও সব উপজেলা মিলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৪ হাজার ৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ১০ লাখ ৪ হাজার ৬৩২ জন। আর এবার নতুন বইয়ের চাহিদা ৪৪ লাখ ১৮ হাজার ১৮৭ কপি। এর মধ্যে বছরের প্রথম দিনই প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির সব বই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। যদিও চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও বই না আসায় শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস এম আব্দুর রহমান বলেন, চট্রগ্রামের স্কুলগুলোতে আমরা যে বইগুলো এসেছে তা পাঠিয়ে দিয়েছি। সব শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বই না পেলেও প্রথমদিনে প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বই পাচ্ছে। শুধুমাত্র ফটিকছড়ি উপজেলা ছাড়া সব স্কুলে বই চলে গেছে। তবে সেখানেও সমন্বয় করা হয়েছে। সব বই না পেলেও প্রথমদিনে একটি বই হলেও পাবে বাচ্চারা। আশা করছি, ৫ জানুয়ারির মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে।’
অন্যদিকে, মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা বছরের প্রথম দিনে সব বই পাচ্ছে না। শুধু নগরের কোতোয়ালী ও পাঁচলাইশ থানা শিক্ষা অফিসের আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সাতটি বই পাচ্ছে। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই আংশিক দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার উত্তম খীসা বলেন, ‘আমরা যে বইগুলো পেয়েছি সব পাঠিয়ে দিয়েছি। সব শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বই পায়নি। কেবল ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সাতটি করে বই পাবে। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে আমাদের সব শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে যাবে।
উল্লেখ্য, দেশে উৎসব করে বছরের প্রথমদিন শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার রেওয়াজ শুরু হয় ২০১০ সালে। বিগত দু-তিন বছর শিক্ষাবর্ষের শুরুতে ১ জানুয়ারি উৎসব করে বই বিতরণ শুরু হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব নতুন বই দেওয়া সম্ভব হয়নি। দরপত্রসংক্রান্ত জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে এমনটি হয়েছিল। এবার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিক্ষাক্রম পরিবর্তন, বই পরিমার্জন, আগের দরপত্র বাতিল করে নতুন দরপত্র দেওয়াসহ ছাপাসংক্রান্ত কাজে বিলম্বের কারণে উৎসব করে পাঠ্যবই দেওয়া হয়নি।