নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ০১ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৮:০১ পিএম
সামির হোসেন মোহন,চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম নগরীতে প্রায়ই দেখা যায় ছোটো ছোটো শিশু ফুটপাথে খেলাধুলা করে। আমি এমনও দেখেছি ফুটপাথের মাটিতে পরে থাকা খাবার অবিলম্বে কুড়িয়ে খায় শিশুরা। এই পরিবেশে বেড়ে উঠছে পথশিশুরা। রোদ বৃষ্টি শীত গ্রীষ্ম সব যেখানে একাকার, সেখানে এদের বসবাস।
এই শিশুরা একটু বড় হলে জীবিকার তাড়নায় ছুটে চলে পথ থেকে পথে। আমাদের দৈনিক চলার পথে আমরা দেখি এদের কখনো ফুল, কখনো চকলেট অথবা অন্য কোন পণ্য হাতে ঘুরে বেড়াতে। জীবন এদের মৌলিক সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। ন্যূনতম জৈবিক সুবিধা তারা পাচ্ছে না। এরা জড়িয়ে পরছে নেশার ভয়াল জগতে, জড়াচ্ছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া তথ্যমতে, বর্তমানের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ৮০-৯০ শতাংশ উঠে এসেছে পথশিশুদের থেকে। মেয়ে পথশিশুরা শৈশব থেকেই যৌন হয়রানীর শিকার হচ্ছে, পরবর্তীতে দেহব্যাবসায় জড়িয়ে যাচ্ছে।
হাজারো পথশিশু, যাদের জীবন সংগ্রামের কোনো শেষ নেই। এরা সমাজের এক অবহেলিত অংশ, যারা শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তা—এই মৌলিক অধিকারগুলো থেকে পথশিশুরা বঞ্চিত।
বাংলাদেশের প্রতিটি শহরে আছে পথশিশু শহর জুড়ে নানা জায়গায় দেখা মেলে তাদের এই শিশুদের পাশে খুব অল্প মানুষই দাঁড়ায়। তারাও সাদছন্দে বাছতে চায় নিজেদের কে প্রতিষ্ঠিত করতে চান অনেকে। তবে বিষন্নতার দেয়ালে তাদের জীবন সংগ্রাম থমকে আছে যার কারণে তারা নিজেদের প্রতিনিয়ত ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
নগরীর বিভিন্ন স্থানে দেখা মেলে পথশিশুদের অলংকার , নিউমার্কেটে চত্বর , ষোলশহর ষ্টেশন, বড়তলীষ্টেশন, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, জিইসিমোড়, সিআরবি, আগ্রাবাদে তাদের দেখা মেলে ।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পরিবার-পরিজন হারিয়ে বা পরিবারের অসহায় অবস্থার কারণে এরা রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন।
পথশিশুরা প্রায়ই খাবার ও আশ্রয়ের জন্য ভিক্ষাবৃত্তি, গাড়ির জানালা মোছামুছি কেউ বা ফুল ,পেপার ,পানি এসক্রাব বিক্রি কিংবা ছোটখাটো কাজ করে।
তাদের মধ্যে কিছু অংশ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যায় অপরাধচক্রের শিকার হয় সমাজের কিছু রাজনৈতিক নেতা নেতিবাচক ব্যাক্তিগন তাদের কে দিয়ে ভিবিন্ন অপকর্ম ছিনতাই ,চুরি মাদক পাচার লুটপাট ডাকাতি খুন এসকল অপরাধ বান্ধব কাজে তাদেরকে ব্যবহার করে ।
অধিকাংশই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বড় হচ্ছে, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলে। স্কুলে যাওয়া তাদের জন্য স্বপ্নের মতো। বেশিরভাগেরই জন্মনিবন্ধন বা সঠিক কোনো পরিচয়পত্র নেই, যা ভবিষ্যতে চাকরি বা কোনো সামাজিক সুবিধা পাওয়ার পথ রুদ্ধ করে দেয়।
সরকার পরিবর্তন হলেও আজঅব্দী পথশিশুর জীবন পরিবর্তন হয়নি ।বেসরকারি সংস্থাগুলো বার বার উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ । ব্যর্থতার কারণ কী? তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায় সরকারই কি হতদরিদ্রদের বাজেট খেকর ছিল ।
সরকার এবং বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠান পথশিশুদের পুনর্বাসনের জন্য পদক্ষেপ নিলেও তা এখনও অপর্যাপ্ত। কিছু বেসরকারি সংস্থা তাদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করে এবং পুনর্বাসনের চেষ্টা করে। তবে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বিত প্রয়াস ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য করণীয়
পথশিশুদের পুনর্বাসন এবং তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনতা এবং সরকারের উদ্যোগ। এদের জন্য একটি সমন্বিত ও কার্যকর শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলাই হতে পারে তাদের আলোকিত ভবিষ্যৎ গড়ার প্রথম ধাপ। পথশিশুদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে এগিয়ে এসে, পথশিশুদেরকে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।