সোমবার, এপ্রিল ২১, ২০২৫
logo

শ্রীপুরে পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতি নানা অভিযোগ উঠেছে


আশরাফুল আলম সরকার , শ্রীপুর প্রকাশিত:  ০৬ জানুয়ারী, ২০২৫, ০১:০১ পিএম

শ্রীপুরে পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতি নানা অভিযোগ উঠেছে

গাজীপুরের শ্রীপুরে পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে। দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটির প্রধানের আসনে বসলেও তার নিজের নিয়োগ নিয়েও আছে প্রশ্ন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রভাষক পদে তার নিয়োগটি ছিল অবৈধ। এ পদে আবেদনের নূন্যতম যোগ্যতা হিসেবে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে কমপক্ষে দ্বিতীয় বিভাগ থাকার শর্ত থাকলেও দুটিতেই তৃতীয় বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। 
কলেজ সূত্র জানায়, এ কে এম আবুল খায়ের ইংরেজি প্রভাষক হিসেবে ১৯৯৩ সালে নিয়োগ পান। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে কমপক্ষে দু'টি দ্বিতীয় বিভাগ থাকতে হবে। এদিকে এই অধ্যক্ষের শিক্ষাগত সনদে দেখা যায়, এসএসসি প্রথম বিভাগ (১৯৮২), এইচএসসি দ্বিতীয় বিভাগ (১৯৮৪) স্নাতক(পাস) তৃতীয় বিভাগ (১৯৮৬), স্নাতকোত্তর তৃতীয় বিভাগ (১৯৮৮), বিষয় ইংরেজি।  তাই তার আবেদনের সুযোগ থাকারই কথা না। এরপরও নিয়োগ পেয়েছিলেন।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, এই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ছিলেন কলিম উদ্দিন মোল্লা। তারপর নিয়োগ পান শাহ্ আহসান। কিন্তু অনার বোর্ডে এই দুজন অধ্যক্ষের নাম মুছে একেএম আবুল খায়ের নিজেকে ১৯৯৩ সাল থেকেই কাগজে-কলমে প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ দেখিয়েছে আসছেন।
আরও অভিযোগ আছে, সরকারি কর্মকর্তা হলেও তিনি সরাসরি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও জড়িত ছিলেন এবং বর্তমানে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন। এছাড়া তিনি পরিচালনা পরিষদের কয়েকজন সদস্যের যোগসাজশে কলেজ ফান্ডের যথেচ্ছা ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ আছে। এমনকি ফান্ড থেকে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগও আছে। 
বিগত ১৭ বছর যাবত কলেজে অডিট বন্ধ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে কলেজের অর্থ  তসরুপের অভিযোগ উঠেছে।একই কলেজে পরিসংখ্যান শিক্ষক (প্রভাষক) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন রফিকুল ইসলাম। তবে বিএনপিপন্থি অভিযোগে ১৭ বছর আগে তাকে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ১৭ বছর যাবত বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত। পরিসংখ্যান বিষয়টাও কলেজের পাঠদান থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যদিও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ডের অনুমোদন ছিল। 
তিনি আরও বলেন, আমি অধ্যক্ষের রোষানলে পড়েছি। প্রধান কারণ ছিল আমি উপাধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগে প্রথম হওয়ার পরও দ্বিতীয় জনকে নেওয়ার কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব,শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক, শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, গাজীপুরের ডিসি, শ্রীপুরের ইউএনও বরাবর প্রতিকার ও নিয়োগদানের জন্য আবেদন করায় অধ্যক্ষ আবুল খায়ের ক্ষুব্ধ হন। সর্বশেষ ন্যায় বিচারের জন্য আদালতে মামলা করলে তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্যকে প্রভাবিত করে আমাকে কলেজ থেকে মারপিট ও হত্যার হুমকি দিয়ে বের করে দেয়।
দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজ প্রতিষ্ঠা থেকে বিভিন্ন সময়ে পরিচালনা পর্ষদে থাকা সদস্য মো. সাহাবুদ্দিন জানান, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অধ্যক্ষ আবুল খায়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন নিয়ম বহির্ভূতভাবে। তিনি দীর্ঘ দিন যাবৎ অডিট করতে দিচ্ছেন না। টাকা-পয়সারও কোন হিসাব দিচ্ছেন না। অনেক টাকা তহবিল থেকে আত্মসাৎ করেছেন।
এ বিষয়ে পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম আবুল খায়ের বলেন, আমাদের নিয়মিত অডিট হয়, এই কলেজে কোনো অনিয়ম নেই। আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদে ছিলাম, কিন্তু কলেজে রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে কোনো অনিয়মে যুক্ত ছিলাম না। 
নিজের নিয়োগ নিয়ে তিনি বলেন, ১৯৯৩ সালে আমার নিয়োগ হয়, তখন কলেজটি ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত ছিল। আমার যেহেতু ইংরেজি বিভাগ ছিল, এ ক্ষেত্রে যোগ্যতা কিছুটা শিথিল ছিল। আমার নিয়োগ অবৈধ নয়। আর আমি একক ভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করিনি। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কলেজটি পরিচালনা করেছি।
এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহজাহান বলেন, এসব বিষয়ে আমার কিছু-ই জানা নেই। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।