শেখ আসাদুজ্জামান , ফকিরহাট প্রকাশিত: ০৮ জানুয়ারী, ২০২৫, ০১:০১ পিএম
বাগেরহাটের ফকিরহাটে তেল জাতীয় ফসল সরিষার আশানুরূপ চাষে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি বিভাগের নানান পরামর্শ, সার বীজ সুবিধা প্রাপ্তী এবং চলতি মৌসুমে আবাহওয়া অনুকুলে থাকায় বিলগুলিতে সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, উপজেলায় ২০২৩-২৪ এ সরিষা আবাদ হয়েছিল ১৬০ হেক্টর জমিতে। ২০২৪-২৫ এ লক্ষ্যমাত্রা ১৬৪ হেক্টর। সেই তুলনায় ২০২৪-২৫ এ অর্জন হয়েছে ১৬৫.৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ। অত্র উপজেলার ৮ ইউনিয়নের ১৬৫০ জন কৃষক সরিষার চাষ করছেন। এরমধ্যে ৬৫০জন কৃষককে বীজ ও সার বিতরণ করেছে কৃষি বিভাগ। তারমধ্যে ২০০জন কৃষককে প্রণোদনার বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। এবার লক্ষ্য মাত্রার থেকে বেশী উৎপাদন হবে এমনটাই আশা করছেন কর্মকর্তারা। উপজেলা কৃষি বিভাগ তেল জাতীয় ফসল উৎপাদনের জন্য স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে নানা প্রকার কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসাবে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের সরিষা চাষের উপর প্রশিক্ষন, পরার্মশ, সার ও বীজসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করছেন। সে মোতাবেক বিভিন্ন বিলসহ পতিত জমিতে এই চাষ করা হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন ঘেরের পাড়, নদীর তীরেও সরিষা চাষ করতে দেখা গেছে।
আজহার আলী শেখ, বাবলু শেখ, নিজাম মোড়ল, রকমান মোড়ল, রফি শেখ, সাধন বিশ্বাসসহ অনেক কৃষক জানান, একই জমিতে বারবার একই ফসল চাষ করলে জমি র্উবরতা শক্তি হারিয়ে ফেলে। তাই কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে সরিষার চাষ শুরু করেন তারা।
কৃষক আজহার আলী শেখ জানান, তিনি এবার বারি-১৪/৯ ও রিনা-৯ জাতের বীজ চাষ করেছেন। আমন ধান থাকা অবস্থায় সরিষা ছড়িয়ে দেন জমিতে। এই জমিতে বোরো ধানও লাগাবেন তিনি। এভাবে তিনি এক বছরে একই জমি থেকে একটি বাড়তি ফসল ঘরে তুলবেন।
মৌভোগের কৃষক বাবলু শেখ জানান, তিনি দেড়বিঘা বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। জমিতে সরিষার ফলন খুব ভাল হয়েছে।
বিভিন্ন ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা জানান, কৃষিতে ফকিরহাটে অভাবনীয় সাফল্য রয়েছে। আবাহওয়া অনুকুলে থাকলে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হবে। বিনা চাষে আমন থাকা অবস্থায় নভেম্বর মাসের দিকে এই সরিষার চাষ শুরু করতে হয়। এই চাষের ফলে নিজেদের তেল খৈল সহ নানা চাহিদা অনেকাংশে পুরণ করা সম্ভব হবে কৃষকের। কৃষকরা এ বছর বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৭, বিনা সরিষা-৪, বিনা সরষিা-৯ এবং সরিষা-২০ জাতের সরিষা চাষ করছেন। তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হলে ১ইঞ্চি জমিও ফেলে রাখলে হবে না। তাই কৃষিকে আরো বেগবান করতে হলে সকলের প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরী।
ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এখনো পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় চাষিরা ভালো ফলনের আশা করছেন। ভালো ফলন ও ন্যায্য দাম পাওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে সরিষা চাষে চাষিদের উৎসাহিত করছে ফকিরহাট কৃষি বিভাগ। সহজ চাষ পদ্ধতির কারণে চাষিরা তাদের জমিতে সরিষা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আমন ধান কাটার পর তারা জমিতে সরিষা চাষ করেন। সরিষা কাটার পর একই জমিতে তাদের প্রধান ফসল বোরো ধান চাষ করবেন। যাদের জমিতে শুধু আমন আর বোরো দুইটি ফসল হয় তারা সহজেই এই পদ্ধততি গ্রহন করতে পারবেন। নভেম্বর মাসে সরিষার চাষ করলে জানুয়ারী মাস অর্থাৎ বপনের আড়াই মাস থেকে তিন মাসের মধ্যে এই ফসল ঘরে তোলা যায়। তাই সকলকে তিনি ধানের পাশাপাশি সরিষা চাষে পরামর্শ দিয়েছেন। এ বছর অনেক কৃষক সরিষা চাষ করেছেন। ফলনও ভাল হয়েছে। অত্র উপজেলায় সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলে আশাবাদী এই কর্মকর্তা।