ক্রিয়া ডেস্ক প্রকাশিত: ৩০ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৪:০১ পিএম
২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিডনি টেস্টের দ্বিতীয় দিনটা রোমাঞ্চকর এক অনুভূতি নিয়েই শেষ করলেন উসমান খাজা। সেই রাতটা অস্ট্রেলিয়া ওপেনার নির্ঘুম কাটিয়েছেন কি না, কে জানে! ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি থেকে ৫ রান দূরে থাকলে তো স্নায়ুর চাপে ঘুম-টুম উবে যাওয়ারই কথা।
কী আশ্চর্য, টেস্টের তৃতীয় দিন শেষেও একই অনুভূতি নিয়ে বিছানায় যেতে হলো খাজাকে। পুরো তৃতীয় দিনটাই যে খেয়ে নিয়েছিল বৃষ্টি। চতুর্থ দিনের সকালের সেশনও ভেসে গেল বৃষ্টিতে। দ্বিতীয় সেশনে অবশেষে যখন আবার মাঠে গড়াল ক্রিকেট, খাজা নয় ব্যাটিংয়ে নামলেন দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার! ম্যাচ জিততে মরিয়া অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্স যে খাজাকে ১৯৫ রানে রেখেই ঘোষণা করে দিয়েছেন ইনিংস।
ইতিহাসের মাত্র তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৯০-এর ঘরে দাঁড়িয়ে অধিনায়ককে ইনিংস ঘোষণা করতে দেখেছিলেন খাজা। আগের দুজনকে কিংবদন্তি বললেও কম বলা হয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ‘থ্রি ডব্লু’র একজন ফ্র্যাঙ্ক ওরেল, ভারতের শচীন টেন্ডুলকার। দুই কিংবদন্তির পাশে বসতে পারাটা নিশ্চিত খাজার ‘যন্ত্রণা’ খুব বেশি কমাতে পারেনি।
দুই বছর পর আরেক জানুয়ারিতে সেই খাজা অবশেষে ‘২০০’-র দেখা পেলেন। গল ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে আজ ৭৯ টেস্টের ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিটা তুলে নিয়েছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তাতে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের পর অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সবচেয়ে বেশি বয়সে ডাবল সেঞ্চুরি করার কীর্তি গড়লেন ৩৮ বছর ৪৩ দিন বয়সী খাজা।
সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান ডন ব্র্যাডম্যান টেস্ট ক্যারিয়ারের এক ডজন ডাবল সেঞ্চুরির শেষ দুটি করেছিলেন বয়স ৩৮ হয়ে যাওয়ার পর। ১৯৪৬ সালে সিডনিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৩৪ রানের ইনিংস খেলা ম্যাচটি শুরুর দিন ডনের বয়স ছিল ৩৮ বছর ১০৮ দিন। ১৩ মাস পর অ্যাডিলেডে ভারতের বিপক্ষে ২০১ রান করা ম্যাচটি শুরুর দিন তাঁর বয়স ছিল ৩৯ বছর ১৪৯ দিন।
এই শতকে মাত্র দুজন ব্যাটসম্যান খাজার চেয়ে বেশি বয়সে ডাবল সেঞ্চুরি পেয়েছেন। ২০১২ সালে মিরপুরে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০৩ রানে অপরাজিত ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের শিবনারায়ণ চন্দরপল। ম্যাচ শুরুর দিন তাঁর বয়স ছিল ৩৮ বছর ৮৯ দিন। অন্যজন ইউনিস খান। ২০১৬ সালে ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৮ বছর ২৫৬ দিন বয়সী পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান করেছিলেন ২১৮ রান।
টেস্টে সবচেয়ে বেশি বয়সে ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডটা এরিক রোয়ানের। ১৯৫১ সালে হেডিংলিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ২৩৬ রান করেন ৪২ বছর ৬ দিন বয়সী দক্ষিণ আফ্রিকান।
ডাবল সেঞ্চুরি করে খাজা শেষ পর্যন্ত ফিরেছেন ২৩২ রান করে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে কোনো অস্ট্রেলীয়র এটিই সর্বোচ্চ ইনিংস। খাজা পেছনে ফেলেছেন ১৯৯৫ সালে ওয়াকায় মাইকেল স্লাটারের করা ২১৯ রানের ইনিংসকে।
এশিয়ায় অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে খাজার চেয়ে বড় রানের ইনিংস খেলেছেন মাত্র দুজন—মার্ক টেলর ও গ্রেগ চ্যাপেল। টেলর ১৯৯৮ সালে পেশোয়ারে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৩৪ রানে অপরাজিত থেকে ইনিংস ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। ১৯৮০ সালে ফয়সালাবাদে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৩৫ রান করেছিলেন চ্যাপেল ভাইদের মেজ জন।
ডনকে সম্মান জানাতেই ৩৩৪ রানে দাঁড়িয়ে ইনিংস ঘোষণা করেছিলেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক। সে সময়ে টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ব্র্যাডম্যানের ৩৩৪। পরে ম্যাথু হেইডেন ভেঙেছেন ব্র্যাডম্যান-টেলরের রেকর্ড।
ডাবল সেঞ্চুরির পথে প্রথম ১৪৭ রান গতকালই পেয়ে গিয়েছিলেন খাজা। সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন ১০ হাজার রানের মাইলফলক ছোঁয়া স্টিভেন স্মিথও। স্মিথের আউটে তাঁদের ২৬৬ রানের তৃতীয় উইকেট জুটিটা ভেঙেছে আজ। অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক ফিরেছেন ১৪১ রানে। ২৬৬ রানের জুটিটা এশিয়ায় যেকোনো উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় সর্বোচ্চ ও তৃতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ।