ক্রিয়া ডেস্ক প্রকাশিত: ০৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৪:০২ পিএম
ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র, পরিশ্রম আর প্রতিভার চূড়ান্ত সংমিশ্রণ—ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আজ ৪০ বছরে পা রাখলেন! অবিশ্বাস্য ক্যারিয়ার, অগণিত রেকর্ড, অসংখ্য সাফল্য—এই দীর্ঘ পথচলার পরেও তিনি ফুটবলবিশ্বকে মুগ্ধ করে চলেছেন। ফুটবলপ্রেমীরা তাকে শুধু এক মহান খেলোয়াড় হিসেবেই নয়, বরং একজন অদম্য যোদ্ধা হিসেবে জানে, যিনি নিজের সীমাহীন পরিশ্রম দিয়ে শূন্য থেকে উঠে এসেছেন মহাতারকার আসনে।
১৯৮৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পর্তুগালের মাদেইরায় জন্ম রোনালদোর। শৈশব কেটেছে কঠিন বাস্তবতার মধ্যে—অভাব, সংগ্রাম, তবুও স্বপ্ন দেখা থামাননি। বাবা ছিলেন মাঠকর্মী, মা গৃহকর্মী। ছোটবেলায় খাবারের জন্য পর্যন্ত সংগ্রাম করতে হয়েছে, কিন্তু ফুটবলের প্রতি তার ভালোবাসা কোনোদিন কমেনি। বল পায়ে রাখার জেদ, কঠোর পরিশ্রম আর অসাধারণ প্রতিভা তাকে এনে দেয় স্পোর্টিং লিসবনের একাডেমির সুযোগ। সেখানেই শুরু হয় ভবিষ্যৎ কিংবদন্তির পথচলা।
মাত্র ১৮ বছর বয়সে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের চোখে পড়েন রোনালদো। ২০০৩ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দিয়ে দ্রুতই তারকা হয়ে ওঠেন। রেড ডেভিলসদের হয়ে জিতেছেন তিনটি প্রিমিয়ার লিগ, একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং ২০০৮ সালে প্রথম ব্যালন ডি'অর। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে কাটানো ছয়টি বছর ছিল তার ক্যারিয়ারের ভিত্তিপ্রস্তর, যেখানে তিনি নিজের সেরা ফর্ম খুঁজে পান এবং ফুটবল বিশ্বে নিজের নাম প্রতিষ্ঠা করেন।
২০০৯ সালে রেকর্ড ট্রান্সফার ফিতে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন রোনালদো, আর এরপর যা করেছেন, তা শুধুই ইতিহাস! এক দশকের মাদ্রিদ অধ্যায়ে ৪৫০ গোল, চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগ, দুটি লা লিগা, চারটি ব্যালন ডি’অরসহ অগণিত ট্রফি জিতেছেন। এল ক্লাসিকোতে বার্সেলোনার বিপক্ষে তার গোল উদযাপন, চ্যাম্পিয়নস লিগের অবিস্মরণীয় রাতগুলো, বাইসাইকেল কিকের সেই অবিশ্বাস্য মুহূর্ত—সব মিলিয়ে রোনালদো হয়ে ওঠেন রিয়াল মাদ্রিদের কিংবদন্তি।
২০১৮ সালে সিরি আ-র চ্যালেঞ্জ নিতে জুভেন্টাসে যোগ দেন রোনালদো, যেখানে তিন মৌসুমে লিগ শিরোপাসহ ব্যক্তিগত অর্জনে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখেন। এরপর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফিরে আসেন, কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় নতুন পথ বেছে নেন। বর্তমানে সৌদি আরবের আল নাসরের হয়ে খেলে দেখিয়ে দিচ্ছেন—বয়স শুধুই একটি সংখ্যা, প্রতিভা আর পরিশ্রমই আসল পরিচয়!
পর্তুগালের হয়ে দীর্ঘ ক্যারিয়ারে একের পর এক রেকর্ড গড়েছেন। ২০১৬ ইউরোতে দেশকে প্রথম বড় শিরোপা এনে দেন, এরপর ২০১৯ সালে নেশন্স লিগেও পর্তুগালকে শিরোপার স্বাদ দেন। আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া থেকে শুরু করে বিশ্বকাপ ও ইউরোতে অসংখ্য স্মরণীয় পারফরম্যান্স জাতীয় দলের হয়েও রোনালদো এক অতুলনীয় কিংবদন্তি।
সাফল্যের চূড়ায় দাঁড়িয়ে অবিস্মরণীয় ৪০
৪০ বছর বয়সেও তার ফিটনেস, আত্মবিশ্বাস আর পারফরম্যান্স যুবা ফুটবলারদের জন্য উদাহরণ। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে গতি কিছুটা কমলেও গোল করার ক্ষুধা একটুও কমেনি। আজ জন্মদিনে সারা বিশ্ব তাকে শুভেচ্ছায় ভাসাচ্ছে, ফুটবলপ্রেমীরা স্মরণ করছে তার ঐতিহাসিক সব মুহূর্ত।
শুভ জন্মদিন, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো! তুমি শুধুই একজন ফুটবলার নও, তুমি এক যুগের প্রতিচ্ছবি, এক মহানায়ক, যার নাম ফুটবল ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।