সোমবার, এপ্রিল ২১, ২০২৫
logo

ভুট্টা বীজের মূল্যবৃদ্ধিতে কৃষকরা বিপাকে


মাসুদ বিপ্লব ঠাকুরগাঁও প্রকাশিত:  ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০১:০২ পিএম

ভুট্টা বীজের মূল্যবৃদ্ধিতে কৃষকরা বিপাকে

 

মোঃ

ভুট্টা আবাদে বাংলাদেশে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষকরা এ ফসল চাষে ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এ জেলার ভুট্টা চাষে এবার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ হাজার হেক্টর জমি, তবে আবাদ হয়েছে ৪৪,৯৮০ হেক্টর জমিতে।

জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ভুট্টার চাষের পরিসর উল্লেখযোগ্য। সদর উপজেলায় ১৩,৫৮০ হেক্টর, পীরগঞ্জে ১০,৩০০ হেক্টর, বালিয়াডাঙ্গীতে ৫,৩১০ হেক্টর, রানীশংকৈলে ৭,৫০০ হেক্টর, এবং হরিপুরে ৮,৫৬০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। অধিক ফলন এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে কৃষকদের মধ্যে উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

তবে ভুট্টার বীজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি কৃষকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে ৫০০-৭০০ টাকার বীজ এখন ১,০০০-১,৩০০ টাকায় পৌঁছেছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কৃষক মো. কামাল বলেন, "আগে আমরা সহজে বীজ কিনতাম। এখন খরচ এত বেড়ে গেছে যে ভুট্টা চাষে লাভের চেয়ে খরচের চাপ বেশি।" রানীশংকৈল উপজেলার কৃষক মজিবর জানান, "আমাদের জন্য বীজের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হলে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।"

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের চাহিদার প্রায় সবটাই ভারত, থাইল্যান্ডসহ বিদেশি বীজ আমদানি করে পূরণ করতে হয়। দেশীয় পর্যায়ে বীজ উৎপাদন সীমিত। ব্র্যাক চাহিদার মাত্র ১% পূরণ করে, যা নীলফামারী ও বগুড়ার ফার্মে উৎপাদিত।

বীজ সরবরাহের ঘাটতি, কৃষি নীতির দুর্বলতা এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে, যা কৃষকদের জন্য বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে।

বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট (BWMRI) উদ্ভাবিত উন্নত জাতের বীজ ও প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ে সঠিকভাবে পৌঁছাচ্ছে না বলে কৃষকদের অভিযোগ। তারা বলছেন, পুরনো পদ্ধতিতে চাষ চালিয়ে যাওয়া তাদের জন্য ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. আলমগীর কবির বলেন, "আমরা কৃষকদের যথাসম্ভব পরামর্শ দিচ্ছি। তবে স্থানীয়ভাবে বীজ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কৃষকদের জন্য সহজলভ্য করার বিষয়ে আরও উদ্যোগ প্রয়োজন।"

কৃষিবিদদের মতে, ভুট্টার বীজ সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি রোধে সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশীয়ভাবে বীজ উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়ানো, মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণ, এবং সরকারি ভর্তুকি প্রদান কৃষকদের স্বস্তি দিতে পারে।

সরকার যদি দ্রুত পদক্ষেপ নেয়, তাহলে কৃষকরা আরও উৎপাদনশীল হয়ে উঠবেন এবং দেশের ভুট্টা উৎপাদন বাড়বে। অন্যথায় কৃষকরা বিকল্প ফসল চাষে ঝুঁকতে বাধ্য হবেন, যা সামগ্রিক কৃষি ব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ভুট্টা চাষে ঠাকুরগাঁও জেলার সাফল্য উদাহরণমূলক। তবে বীজের মূল্যবৃদ্ধি এবং সরকারের সীমিত পদক্ষেপ কৃষকদের জন্য বড় সংকট তৈরি করছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। কৃষকদের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং ভুট্টা চাষকে টেকসই করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।