আশিকুর রহমান চৌধুরী, শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি প্রকাশিত: ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০১:০২ পিএম
শ্রীমঙ্গলের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ডা. সুহিত রঞ্জন সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে নিজের একটু ইচ্ছা আর সামান্য শ্রম দিয়েই বাড়ির ছাদে শখের বাগান করে প্রথমবার সবাইকে চমক লাগিয়ে দিয়েছেন।
ওই চিকিৎসক শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৩ নং সদর ইউনিয়নের সবুজবাগ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ডা. সুহিত রঞ্জন। তিনি বাসার ছাদে কয়েকটি কমলা, মাল্টা গাছের চারা দিয়ে শুরু করেন ছাদ বাগানের। সেই শখের ছাদ বাগান এক বছরে এখন হরেক রকমের সবজি, ফলজ গাছে পরিপূর্ণ এক বাগানে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ছাদ বাগানটিতে মাল্টা, কমলা, সফেদা, আম, ডালিম, আমড়া জাম্বুরাাসহ বিভিন্ন প্রজাতির সবজি, ফলজ ও ফুলের গাছ রয়েছে। এরমধ্যে বিশেষ আকর্ষণ হলো কমলা ও মাল্টা গাছ। সবুজ পাতার আড়ালে ছাদ বাগানে গাছের থোকায় থোকায় ঝুলে আছে পাকা হলুদ রঙের অসংখ্য রসালো কমলা। পাতার ফাঁকে উঁকি দেওয়া কমলার এমন দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। প্রথম দেখায় যে কারও মনে হতে পারে এটা বিদেশের কোনো কমলার বাগান।
ডা. সুহিত রঞ্জন দাশ জানান, আমার শখ ছিল ছাদ বাগান করা। ইউটিউভে কমলা-মাল্টা চাষের ভিডিও দেখে সেই স্বপ্ন বুননে স্বল্প পরিসরে কাজ শুরু করি। আমার এক আত্মীয়ের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে তার কাছ থেকে চায়না থ্রি জাতের কমলার চারা এনে ছাদ বাগানে রোপণ করি। কিছুদিন পরিচর্যা করে গাছে ফুল আসে। চারা লাগানোর দুই বছরেই মধ্যে মাল্টা ও কমলা ধরেছে। একটি কমলা গাছে ৮০ থেকে ৯০টি কমলা ধরেছে। ইউটিউব দেখে বাগানের পরিচর্যা করে ভালো ফলন পেয়েছেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাসার ছাদের কমলা বাগানের ছবি ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই আসছেন কমলা বাগান দেখতে। বাগান দেখতে আসা স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী ঝলক দত্ত বলেন, সারা জীবন আমরা বাজার থেকে কমলা ক্রয় করছি। ছাদের উপরে কমলার বাম্পার ফলন দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। এভাবে যদি সবাই ঘরের ছাদে কমলার বাগান লাগায়, তাহলে বাজার থেকে কমলা কিনতে হবে না। ফরমালিন মুক্ত ও রাসায়নিক কীটনাশক ছাড়াই কমলা পেতে পারি। যাদের বাসার ছাদ আছে তারা সকলেই এমন ছাদ বাগান করতে পারে। কেননা এটি যেমন ছাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে ঠিক তেমনি পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষা করে। দর্শনার্থী বিশ্বজিৎ রায় লিটন বলেন, ছাদ বাগানে গাছের থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা পাকা হলুদ রঙের কমলা ও মাল্টা দেখে খুবই ভালো লাগলো। দাদার বাগানের কমলা ও মাল্টা ফলগুলো আকারে যেমন বড়, খেতেও খুবই মিষ্টি। আমার বাসায় কিছু খালি জমি পড়ে আছে, সেখানে আগামীতে কমলার চাষ করার ইচ্ছে আছে। ছাদ বাগানে কমলা-মাল্টা দেখতে আসা শিক্ষক সুমন সরকার বলেন, আমাদের দেশের পতিত অনেক জায়গা রয়েছে। এসব পতিত জমিতে চারা রোপণ করে সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে দেশের বাইরে থেকে আসা কমলার যে গুণগত মান তার থেকে আমাদের দেশের কমলার গুণগত মান সেরা হবে। এছাড়া লাভবান হতে পারবেন চাষীরা। কমে আসবে বেকারত্বও।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ আলাউদ্দিন জানান, ছাদ বাগানে কমলা-মাল্টা চাষ, এটি আসলেই প্রশংসনীয়। সারাদেশেই দিন দিন ছাদ বাগানের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কৃষি জমি কমে আসছে, যে কেউ ছাদে কিংবা বাড়ির উঠোনে যতটুকু জায়গা আছে তাতে যদি সামান্য শ্রম দিয়ে সবজি, ফল চাষ করেন তবে নিজের পরিবারের চাহিদা পূরণ করতে পারেন। বাগান করা কিংবা এ সংক্রান্ত পরামর্শ ও সহযোগিতা যে কেউ চাইলেই উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে তা প্রদান করা হবে। তিনি আরও বলেন, মাঠ ফসল চাষাবাদের পাশাপাশি ছাদ কৃষি সম্প্রসারণের জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করছে। বিশেষ করে বাড়ির ছাদে বিভিন্ন সবজি লাউ, খাটো জাতের সিম, বরবটি, পুঁইশাক, বেগুন, টমেটো, মরিচ ও বিভিন্ন ফল আম, মাল্টা, কমলা, পেয়ারা, লেবু, আমড়া, ড্রাগন ফল চাষে উদ্বুদ্ধ ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।