মঙ্গলবার, আগস্ট ৫, ২০২৫
logo

৫৫ বছর বাঁশি তৈরি করছেন কমল-কারতায়নী দম্পতি


নিজস্ব প্রতিবেদক   প্রকাশিত:  ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০১:০২ পিএম

৫৫ বছর বাঁশি তৈরি করছেন কমল-কারতায়নী দম্পতি

 

বাঁশির সুর পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝুঁকে পড়ায় বর্তমানে সুমধুর এই বাদ্যযন্ত্রের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমছে। বলা চলে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজন ও গ্রাম বাংলার মেলা ব্যতীত এখন আর তেমন বাঁশের তৈরি বাঁশির দেখা মেলে না। তবে, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের এবারের কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবে সুরযন্ত্র বাঁশি তৈরি করে বিক্রি করতে দেখা গেছে এক বৃদ্ধ দম্পতিকে।

৭৮ বছর বয়সী ঝিনাইদহ জেলার কমল সরকার দীর্ঘ ৫৫ বছর যাবত বাঁশির ব্যবসা করে যাচ্ছেন বলে জানান। ছাত্রজীবন থেকে বাঁশি বাজানোতে আগ্রহ ছিল এই ব্যবসায়ীর। ১৯৭১ সালে ইন্টারমিডিয়েট পড়াকালীন বাংলাদেশ ছেড়ে পাশের দেশ ভারতে চলে যান কমল সরকার। সে সময় ভারতের এক বাসিন্দার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে বাঁশি তৈরির পদ্ধতি শিখে নেন। এরপর থেকে বাঁশি ব্যবসাই তার জীবিকানির্বাহের উৎস।

চার সন্তানের পিতা কমল সরকারের বাঁশি তৈরিতে সহযোগী স্ত্রী কারতায়নী। স্বামী-স্ত্রীর পরিশ্রমে তৈরি করা বাঁশি বিভিন্ন মূল্যে বিক্রি হয়। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত মাসব্যাপী কারুশিল্প মেলায় দেখা যায়, তার স্টলে সর্বনিম্ন ২০ টাকা হতে সর্বোচ্চ ১২'শ টাকা মূল্যের বাঁশি রয়েছে।

প্রবীণ বাঁশি কারিগর জানান, তার নিজ জেলা ঝিনাইদহের বিভিন্ন লোকালয় মেলায় বাঁশি বিক্রি করে করেন তিনি। ১-৩ দিনব্যাপী এসব মেলা নিজ দায়িত্বে করতে হয় তাদের। অন্যদিকে ঢাকায় সরকার কর্তৃক আয়োজিত মেলায় শিল্পীদের নানা সুবিধা দেওয়া হয়। কারুশিল্প মেলায় সরকার তাদের থাকার জন্য কোয়ার্টার দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন এক হাজার করে অর্থ দিয়েছে।

কমল সরকার বলেন, চার সন্তানের মধ্যে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, আর দুই ছেলে অল্প উপার্জনের মানুষ। তারা নিজেদের সংসার চালাতে হিমশিম খান। এজন্য কমল সরকার ও তার স্ত্রীর হাতে তৈরি বাঁশি বিক্রিতেই সংসার চালান।

বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-পরিচালক একেএম আজাদ সরকার বলেন, দেশীয় সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবনে আয়োজিত মাসব্যাপী লোক ও কারুশিল্প মেলায় কারুশিল্প প্রদর্শনী, লোকজীবন প্রদর্শন, পুতুল নাচ, বায়োস্কোপ, নাগরদোলা, গ্রামীণ খেলাসহ বাহারী পণ্য সামগ্রীর প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে প্রতিটি স্টলের ব্যবসায়ীর জন্যে বাজেট রয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় এবারও বাঁশি ব্যবসায়ী ও তার স্ত্রীকে প্রতিদিনের জন্য এক হাজার করে টাকা দেওয়া হয়। তবে আমরা প্রতিদিন না দিয়ে মাসের শেষে তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা দিয়ে থাকি।

এবারের মেলায় কর্মরত কারুশিল্প প্রদর্শনীর ৩২টি স্টলসহ ১০০টি স্টল বরাদ্দ রয়েছে। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৬৪ জন কারুশিল্পী সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন। মেলায় সোনারগাঁয়ের কারুশিল্পের কারুকাজ, বাহারি জামদানি শিল্প, জামালপুরের তামা-কাঁসা-পিতলের শৌখিন সামগ্রী ও বগুড়ার লোকজ বাদ্যযন্ত্রসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিল্প পণ্যের পসরা বসেছে।