নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০২:০২ পিএম
পাবনা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু পরিবারের সকল অপকর্মের মূলে ছিলেন তার বড় ছেলে ও বেড়া পৌর সভার সাবেক মেয়র আসিফ শামস রঞ্জন। বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলায় যে কোনো উন্নয়ন কাজ, হাট, বাজার, ঘাট ইজারা কিংবা নিয়োগ সব কাজেই রঞ্জনকে চাঁদা বা কমিশন দিতে হতো। চাঁদা বা কমিশন না দিয়ে কাজ করাছিল অসম্ভব।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক এমপি শামসুল হক টুকু গ্রেপ্তার হলেও পালিয়ে দেশ ছেড়েছেন আসিফ শামস রঞ্জন। তবে অভিযোগ উঠেছে, পলাতক থেকেও নিজ অনুগত বাহিনী দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন বেড়া ও সাঁথিয়ার বেশকিছু দখলদারি পয়েন্ট। পালিত সন্ত্রাসীদের দিয়ে অবৈধভাবে দখলে রেখেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষের ( বিআইডব্লিউটিএ) বৃশালিকা ঘাট। ভয়ভীতি ও হুমকি ধামকিতে ঘাটে যেতে দিচ্ছেন না ইজারাদারকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার অভিযোগ দিয়েও সুরাহা পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী ইজারাদার।
বিআইডব্লিউটিএ এর চেয়ারম্যান বরাবর দেওয়া ইজারাদার নজরুল ইসলামের অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, বাঘাবাড়ী নদীবন্দরের অধীনে বেড়ার আমাইকোলা ঘাট থেকে মোহনগঞ্জ বাজার পর্যন্ত বিস্তৃত বৃশালিখা ঘাটটি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ইজারার জন্য গত বছরের ১৬ মে দরপত্র আহ্বান করে বন্দর নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা। ওই মাসের ৩০ তারিখে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ইজারামূল্য ১৪ লাখ টাকায় নজরুল ইসলামের মেসার্স বেড়া ট্রান্সপোর্টকে ইজারা দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। শর্তানুযায়ী বেড়া ট্রান্সপোর্টকে উক্ত ঘাটের নৌযানের বার্দিং, যাত্রী ও মালামাল লোড আনলোডিং এর চার্জ আদায় করার নির্দেশও দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সরকার পতনের আগে গত জুন মাসে এতে বাধা দেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার পুত্র তৎকালীন বেড়া পৌর মেয়র রঞ্জন। ঘাটে না যেতে ভয়ভীতি দেখান। বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেন ইজারাদারের ব্যবসায়িক কার্যালয়।
পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত সচিব রাশেদুল ইসলামকে দিয়ে পাবনার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন। এ ছাড়া জনৈক ব্যক্তির নামে একটি ভূয়া ইজারাপত্র তৈরি করে হাইকোর্টে রিটের মাধ্যমে ঘাটের ইজারার স্থিতি অবস্থা আদেশ জারি করান। এ ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএ এ রিটের বিরুদ্ধে সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল করলে স্থিতি অবস্থা স্থগিত করে হাইকোর্ট। কিন্তু এতেও টুকুপুত্র রঞ্জন ক্ষ্যান্ত হননি। ৫ আগস্টের আগে ঘাটে দাঁড়াতেই পারেননি ইজারাদার নজরুল বা তার কোনো প্রতিনিধি।
সরকার পতনের পর রঞ্জন পলাতক থেকেও শেখ মো. কামাল, হাবিবুর রহমান হবি, মেহেদী মির্জা, তানজিম, শফিকুল, ইশা ও রিগানসহ ৩০ থেকে ৩৫ জন পালিত সন্ত্রাসী দিয়ে অবৈধভাবে ঘাট দখলে রেখেছেন। ঘাটের স্বাভাবিক কার্যক্রম ও চার্জ আদায়ে ইজারাদারকে আইনি সহায়তা ও নিরপত্তা দিতে চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বিআইডব্লিউটিএ চিঠিতে জেলা পুলিশ ও র্যাবকে অনুরোধ জানালেও মেলেনি প্রতিকার।
ভুক্তভোগী ইজারাদার নজরুল ইসলাম বলেন, সরকার পতনের আগে থেকেই আমার পিছে লেগেছেন টুকু ও তার পুত্র রঞ্জন। রঞ্জনের চাঁদাবাজি ও অত্যাচারের প্রতিবাদ করায় তার পরিবারের বিরাগভাজন হতে হয় আমাকে।
তিনি বলেন, ইজারাপ্রাপ্ত হবার পর লোড আনলোডের কাজের সুবিধার্থে ও জমির মালিকগণ যেন ক্ষতির সম্মুখীন না হন সে জন্য ব্যক্তিগতভাবে প্রায় ৪.৮ একর জমি মালিকদের থেকে লিজ নেই। এতে আমার অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হয়েছে। অথচ ঘাট পাবার পর থেকে একটি টাকাও আদায় করতে দেননি রঞ্জনের সন্ত্রাসী বাহিনী। এ নিয়ে এমন কোনো দপ্তর নেই যেখানে চিঠি দেই নাই, তাতেও কোনো সমাধান মেলেনি। ১৪ লাখ টাকায় ঘাট নিয়েছি। ইজারার সাড়ে ৬ মাস সময় অতিবাহিত হলেও এ ঘাট থেকে একটি টাকাও আদায় করতে পারিনি। বড় ধরনের লোকসানে আমি এখন নিঃস্ব হবার পথে। দ্রুত দস্যুদের হাত থেকে এই ঘাট উদ্ধারের দাবি জানান তিনি।
রঞ্জন পলাতক থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এসব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেছেন অভিযুক্তদের একজন হবিবুর রহমান হবি। তিনি বলেন, ওই ঘাটে পূর্বে ব্যবসা করেছি, তখন জড়িত ছিলাম। এখন ব্যবসা না থাকায় সেখানে আমার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। রঞ্জনের হয়ে জোরপূর্বক ঘাট দখলের প্রশ্নই আসে না। উল্টো রঞ্জন ও টুকুর সাথে মিলে নজরুল আমাকে পূর্বেও নানারকম হয়রানি করেছে। এখনো করছে।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ এর বাঘাবাড়ী বন্দর নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমাদের পক্ষ থেকে পাবনার বেড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), পুলিশ সুপার ও র্যাবকে চিঠি দিয়েছি। চিঠিতে ইজারাদারকে আইনি সহায়তা দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু তেমন সহায়তা মেলেনি। ব্যাপারটি দুঃখজনক। তবে এ আইনি সহায়তার জন্য আবার তাদের চিঠি দেওয়া হবে।
পাবনা জেলার পুলিশ সুপার মো. মোরতোজা আলী খানের বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন দিয়েও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) রেজিনুর রহমানের সাথে যোগাযোগ হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি তেমন কিছু জানি না। যদি এসপি স্যার বরাবর দিয়ে থাকেন তাহলে আমার জানার সুযোগ কম, যদি স্যার আমাকে না জানান। এ বিষয়ে এসপি স্যারই বলতে পারবেন।