সুযোগ নিতে পারে ফ্যাসিবাদী সংগঠন
মিরহাজুল শিবলী প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ১১:০২ এএম
জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দেশের স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দল-মত নির্বিশেষে সবাই এক ব্যানারে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট ব্যাবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায়। ছাত্র-জনতার সম্মিলিত আন্দোলনের তোড়ে ভেসে যায় শেখ হাসিনার অহংকারের ফ্যাসিস্ট কাঠামো। হেলিকপ্টারে ভারতে পালিয়ে সে যাত্রায় প্রাণ রক্ষা করে শেখ হাসিনা। তবে হাসিনার বিদায়ের ৬ মাস পর তৎকালীন হাসিনাবিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর মাঝে দূরত্ব বেড়েছে। প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে বিবাদে জড়াচ্ছে ছাত্র সংগঠনগুলো। মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ক্যাম্পাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিল এবং একই সময়ে পাশাপাশি স্থানে সমাবেশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এভাবেই বিভাজন দিন দিন প্রকাশ্য রূপ লাভ করছে ।
দলগুলোর নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ ছাত্র সংগঠন দাবি করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও ইসলামি ছাত্র শিবিরের জন্যেই ছাত্র সংগঠনগুলো মাঝে দুরত্ব বেড়েছে। শিবিরের একচ্ছত্র মনোভাব এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের কর্তৃত্ববাদী মনোভাব, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বট আইডির মাধ্যম বিভিন্ন ইস্যুতে উসকানি ও আপত্তিকর মন্তব্য করা, সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ইস্যুকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করা, ডাকসু নির্বাচনে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা সহ বিভিন্ন ইস্যুতে ছাত্রসংগঠনগুলো বিবাদে জড়াচ্ছে।
সূত্রপাত যেভাবে: ৫ই আগস্টের আগ পর্যন্ত শেখ হাসিনার পতনের প্রশ্নে একমত ছিলো ছাত্রলীগ ব্যতীত সকল সংগঠন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন আওয়ামী বিরোধী ছাত্র সংগঠন গুলোর নেতাকর্মীরা। আন্দোলনে সফলতা প্রাপ্তির পর যার যার ছাত্র সংগঠনের রাজনীতিতে ফিরে যায় তারা। কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম সারির সমন্বয়কদের প্রায় সবাই গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি নামের একটি ছাত্রসংগঠনের নেতা ছিলেন। আন্দোলনের একপর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল কাদের গণমাধ্যমে যে ৯ দফা দাবি ঘোষণা করেছিলেন, তার ৭ নম্বর দাবিটি ছিল, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে ছাত্র সংসদ কার্যকর করা। হাসিনার পতনের পর সেই দাবিতে আবারো সক্রিয় হন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একাংশ।
ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গিয়েছে, তারা মনে করেন একটি ইসলামী ছাত্র সংগঠনের গুপ্তকর্মীরা ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তুলছে। এতে তারা গোপনে তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পারবে এবং ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের আড়ালে ক্যাম্পাসে একচেটিয়া প্রভাব তৈরি করবে।
ছাত্র সংগঠনগুলোর মাঝে দুরুত্ব তৈরির অন্যতম একটি কারন ফেসবুক এক্টিভিজম। বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গ্রুপগুলো থেকে নিয়মিত বাম ছাত্রসংগঠন গুলোর নেতাকর্মীদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হয়। অনেক সময়ে ব্যাক্তিগত আক্রমণও করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব আক্রমণের পেছনে শিবির কাজ করে বলে অভিযোগ তুলছে তারা।
ছাত্রদলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, হাসিনার পতনের পর থেকেই ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে পোস্ট দেয়া, বয়স নিয়ে মকারি করা সহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়। এসবের মাধ্যমে ছাত্রদলের স্বৈরাচারী শক্তির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের লড়াইকে অস্বীকার করা হচ্ছে।
ছাত্রদল মনে করে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ইসলামি ছাত্রশিবির পরিকল্পিতভাবে তাদেরকে ছাত্রলীগের প্রতিরূপ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। হাসিনার পতনের পর তারেক রহমান ও বিএনপিকে নিয়ে নেতিবাচক গ্রাফিতি আলোচনায় আসে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস গুলোতে হামলা-মামলা ও নিপিড়নের স্বীকার হয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ। দীর্ঘদিন ধরে তারা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করে আসছে। তারা মনে করছে, ছাত্র সংগঠনগুলোর মাঝে বিভাজন আগেও ছিল। মূলত ৫ আগস্টের আগে সবার একটাই উদ্দেশ্য ছিল ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি পাওয়া। তাই এই কমন উদ্দেশ্যে সব ছাত্র সংগঠনের একটি ঐক্য হয়েছিল। হাসিনার পতনের পর সবাই নিজ নিজ মতাদর্শের রাজনীতিতে ফিরে গিয়েছে তাই বিভাজন আবার স্পষ্ট হচ্ছে।
বিভাজনের মূল কারণ রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতা ও রাজনৈতিক কৌশলের পার্থক্য বলে আজকের বাংলাকে জানিয়েছেন সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব রাকিবুল ইসলাম। এসময় তিনি ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা প্রকাশ্য রাজনীতির পক্ষে। আগে পরিবেশ বিবেচনায় অনেকে গোপনে রাজনৈতিক কর্মকান্ড করেছে। এখন সেই অবস্থা নাই। তাই আহ্বান থাকবে সকলের উচিৎ প্রকাশ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা ও রাজনৈতিক সহাবস্থানের মাধ্যমে রাজনীতি করা।
বিভাজন ছুঁয়েছে বৈষম্যবিরোধীদের : জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক হিসেবে নাহিদ ইসলামের নাম প্রায় নিশ্চিত, দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ সদস্যসচিব হিসেবে কে আসছেন এনিয়ে নেতাদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। জাতীয় নাগরিক কমিটি এখন নতুন রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ পদ নিয়ে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। একটিতে আছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদলের নেতারা, যারা আগে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি ও ছাত্র অধিকার পরিষদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দ্বিতীয় গ্রুপে বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে আগে জড়িত ছিলেন তারা এবং তৃতীয় অংশে রয়েছেন ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক সদস্যরা।
নাগরিক কমিটির একটি সূত্র জানায়, সাবেক শিবির কর্মীরা শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য জুনায়েদকে নতুন দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে আনার চেষ্টা করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্র-নেতা জানান, তারা এই বিষয়টি যখন নাগরিক কমিটির অভ্যন্তরীণ বৈঠকে তুলেছে তখন শিবির পরিচয়ে কয়েকজন জোটবদ্ধ হয়ে উঠেছে। ওই ঘটনার পরই রোববার নাগরিক কমিটির কমিটিতে থাকা সাবেক শিবির নেতাদের কেউ কেউ জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ছাত্র শিবিরের ভূমিকার বিষয়গুলো তুলে ধরে ফেসবুকে পোস্ট দেন। যে কারণে এই ইস্যুটি গত কয়েকদিনে বিষয়টি নাগরিক কমিটির অভ্যন্তরে থাকলেও তা প্রকাশ্যে রূপ নেয়।
বিভাজন ডালপালা মিলেছে সংঘাতে : গতকাল দুপুরে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ক্যাম্পাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের শুরু হয়। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। দফায় দফায় এ সংঘর্ষ চলে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। এতে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সংঘর্ষের সূত্রপাত নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদলের পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করা হয়েছে। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, বৈষম্যবিরোধীদের ব্যানারে বের করা মিছিল থেকে প্রথমে আক্রমণ করা হয়। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা।
কুয়েটের একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র-রাজনীতির বিরোধীতা করে আসছিলেন কয়েটের শিক্ষার্থীরা। আগের দিন ছাত্রদলের ফরম বিক্রির বিরোধীতা করে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মিছিল বের করেন। এ সময় তাঁরা ‘ছাত্ররাজনীতির ঠিকানা, এই কুয়েটে হবে না’ ‘দাবি মোদের একটাই, রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস চাই’, ‘এই ক্যাম্পাসে হবে না, ছাত্ররাজনীতির ঠিকানা’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে ছাত্র হলগুলোর সামনে দিয়ে প্রদক্ষিণ করেন। পরে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে পৌঁছালে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচির উপর হামলা করে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। সংঘর্ষ ক্যাম্পাসের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় রেলিগেট, তেলিগাতিসহ আশপাশের বিএনপি নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের সঙ্গে এবং সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। তারপর থেকেই ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ঘটনার প্রেক্ষিতে ফেব্রুয়ারী মাসের শেষদিন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কুয়েট প্রশাসন।
সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিল এবং একই সময়ে পাশাপাশি স্থানে সমাবেশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর কিছুক্ষণ পরই রাত সাড়ে ৮টার দিকে টিএসসি থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে ছাত্রদল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে বক্তব্যের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ভিন্নতা প্রকাশ পেলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে ছাত্রদলের মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হয়েছে।
সংঘর্ষের ঘটনার প্রেক্ষিতে খুলনায় এক সংবাদ সম্মেলনে, ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম বলেন, কুয়েটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি রয়েছে। এটি সম্পূর্ণ একটি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন। তারা রাজনৈতিক দল গঠন করে আগামীতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা কুয়েটে নিজেদের কার্যক্রম চালু রেখে কোন মুখে দাবি করে তারা এখানে ছাত্ররাজনীতি চালু করতে দেবে না।
যা বলছে ছাত্র সংগঠনগুলো:
যারাই ঐক্য বিনষ্ট করবে তারাই ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন করবে এবং বৃহৎ ঐক্য বজায় রাখবে ছাত্রদল বলে জানান ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। তিনি আরো বলেন, বৈষম্যবিরোধী নামধারী গুপ্ত সংগঠনের নির্দেশে ছাত্রদলের ওপর হামলা করা হয়েছে। দেশে আর কোনো মব কালচার চলবে না।
কুয়েটের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সেখানে সিসি ক্যামেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। যে বা যারাই জড়িত থাকুক তাদেরকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। একটি মহল ছাত্রদলের ইমেজ ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে। একটা গোষ্ঠী গুপ্ত সংগঠনের ওপর ভর করে ছাত্রদলকে হুমকি দিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রাগীব নাইম আজকের বাংলাকে বলেন, আমরা গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলাম, মত প্রকাশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য, মানুষের ভোট-ভাতের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে অভ্যূত্থানের সাথে সম্পৃক্ত কিছু দল সেই স্পিরিট ভূলে গিয়ে দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়নের চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেসব মব দেখছি, তার পেছনে কারা রয়েছে? এটা তো সংগঠিত শক্তি। আবার প্রায়ই দেখছি বিগত দিনে যেসকল ছাত্র সংগঠন ক্ষমতা কাঠামোর বিরূদ্ধে গিয়ে সংগ্রাম করেছে তাদেরকে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটাক্ষ করা হচ্ছে, হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। এদেরকে চিহ্নিত করা দরকার এবং তাদের কি উদ্দেশ্য এটাও জানা দরকার।
এপ্রসঙ্গে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল আজকের বাংলাকে বলেন, কোন কোন সংগঠন অগণতান্ত্রিকভাবে অন্য সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রমে বাঁধা হয়ে দাড়াচ্ছে। কোথাও তারা সাধারণ শিক্ষার্থীর নামে বাঁধা প্রদান করছে। আবার কোথাও ভিন্ন নামে বাঁধা হয়ে দাড়াচ্ছে। গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাসে এগুলো ভালো উদাহরণ নয়। এর পরিণতি হিসেবে ক্যাম্পাসগুলোতে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরির আশংকা থাকে। গতকাল কুয়েট ক্যাম্পাসে কিন্তু আমরা এরকম ঘটনা লক্ষ্য করেছি।ফলে এধরণের ঘটনা রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে বাঁধা হয়ে দাড়াবে। তাই এসব অগণতান্ত্রিক পদ্ধতি প কিছু সংগঠনের জবরদখল মূলক কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
গণ অধিকার পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার সদস্য সচিব রাকিবুল ইসলাম জানান, একেক দলের একেক মতাদর্শ। তাই আদর্শিক দ্বন্দ্ব থাকবেই। তবে আমাদেরকে জাতীয় স্বার্থে, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে, শিক্ষার্থীদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে একটি কমন জায়গায় ঐক্যের বিষয়ে একমত হতে হবে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহনশীলতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করতে হবে। মতাদর্শ প্রচার করতে বা চাপিয়ে দিতে অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কাজ যে বা যারাই করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তাদের রাজনীতি করার অধিকার নিয়েও ভাবতে হবে
এসময় তিনি আরো যুক্ত করেন, আমরা প্রকাশ্য রাজনীতির পক্ষে। আগে পরিবেশ বিবেচনায় অনেকে গোপনে রাজনৈতিক কর্মকান্ড করেছে। এখন সেই অবস্থা নাই। তাই আহ্বান থাকবে সকলের উচিৎ প্রকাশ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা ও রাজনৈতিক সহাবস্থানের মাধ্যমে রাজনীতি করা।