শনিবার, ফেব্রুয়ারী ২২, ২০২৫
logo

হাসিনা-মইনসহ পলাতকদের জিজ্ঞাসাবাদই বড় চ্যালেঞ্জ: তদন্ত কমিশন


নিজস্ব প্রতিবেদক   প্রকাশিত:  ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৩:০২ পিএম

হাসিনা-মইনসহ পলাতকদের জিজ্ঞাসাবাদই বড় চ্যালেঞ্জ: তদন্ত কমিশন

 

ইতিহাসের নৃশংসতম পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্তারিত জানতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদকে খুবই প্রয়োজন। আর এই বিষয়টিকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন।

 

এক সংবাদ সম্মেলনে এই কমিশনের প্রধান বলেছেন, বিডিআর বিদ্রোহের নামে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিষয়টি জোরালোভাবে খতিয়ে দেখছেন তারা।

 

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় ইতিহাসের অন্যতম হত্যাকাণ্ডে শহীদ হন ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন। ঘটনার ১৫ বছর পেরিয়ে যাবার পর এখন পুনরায় তদন্তের দাবি আসছে বিভিন্ন তরফ থেকে।

 

গত ২৪ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্তে ‘জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন’ গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। সাত সদস্যের এ কমিশনকে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের সময় বেধে দেয়া হয়।

 

নির্ধারিত ৯০ দিনের মধ্যে ষাট দিনের বেশি অতিবাহিত হলেও বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশন  তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতির তথ্য জানাতে পারেনি গণমাধ্যমের কাছে।

 

কমিশন প্রধান জানান, কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করতে বেশ কয়েকটি দূতাবাসে চিঠি দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি কয়েকজনকে যেন দেশের বাহিরে যেতে না পারে সেসব ব্যক্তির তথ্য দেয়া হয়েছে সরকারের কাছে। আর, এখন পর্যন্ত সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে তিন জন লেফটেন্যান্ট জেনারেলসহ ৩৭ জনের।

 

বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টসে (বিআরআইসিএম) মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি। সেখানে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘটিত বিডিআর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

 

তিনি বলেন, কমিশন ইতিমধ্যে ৩৭ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে। এর মধ্যে তিন জন লেফটেন্যান্ট জেনারেল, দুই জন মেজর জেনারেল, পাঁচ জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও পাঁচ জন কর্নেল রয়েছেন। যারা অনেকেই অবসরে। সবশেষ বুধবার বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন।

 

কমিশন প্রধান বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট অনেকেই দেশ থেকে পালিয়ে গেছে, তাদের ফিরিয়ে আনতে কিছু বিদেশি দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তিন মাসের মধ্য কমিশন তার প্রতিবেদন জমা দেবার সময়সীমা বেধে দেয়া থাকলেও আসামি বা সাক্ষী দেশের বাহিরের থাকার কারণে তাদেরকে তদন্তের আওতায় আনতে সময় নিতে পারে বলেও জানান কমিশন প্রধান।

 

আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, তদন্তের স্বার্থে আমাদের আরও অনেকের সঙ্গে বলা প্রয়োজন। এ জন্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিতে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিছু বিদেশি দূতাবাসের সঙ্গেও যোগাযোগ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। যা নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে।

 

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্তারিত জানতে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদকে খুব প্রয়োজন। মইন হাসিনাসহ যারা বিদেশে রয়েছেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ইতিমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দূতাবাসগুলোতে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সভাপতি ফজলুর রহমান।

 



তবে কার কার বিরুদ্ধে বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে, তাদের সংখ্যাই বা কত, এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি। ফজলুর রহমান বলেছেন, আপাতত তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম কোন কোন দূতাবাসে যোগাযোগ করে পলাতকদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে তাদের নাম বলতে পারছি না। তবে জেনারেল মইন শেখ হাসিনার মতো এমন আরও অনেককে প্রয়োজন।

 

কমিশন প্রধান বলেন ১৬ বছরের পুরোনো ঘটনার রহস্য উদঘাটন কিছুটা জটিল হলেও তারা সত্য উদঘাটনে বদ্ধ পরিকর। তবে সেক্ষেত্রে কমিশনের জন্য বেধে দেয়া ৯০ দিনের চেয়ে একটু বাড়তি সময় প্রয়োজন হতে পারে বলেও জানান কমিশন প্রধান।