রবিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৫
logo

৩য় পক্ষের চক্রান্তের ফাঁদে এমসি কলেজে আহত তালামীয কর্মী


মোঃ বিলালুর রহমান, জৈন্তাপুর প্রকাশিত:  ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০২:০২ পিএম

৩য় পক্ষের চক্রান্তের ফাঁদে এমসি কলেজে আহত তালামীয কর্মী

এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে মারামারিতে ২ ছাত্র আহতের ঘটনায় ৩য় পক্ষের প্ররোচনা ও ষড়যন্ত্রের ফাঁদে আটকে পড়েছেন সেদিন আহত তালামীয কর্মী মিজানুর রহমান রিয়াদ। আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে বাসায় চলে যান তিনি। এরপর সন্ধ্যায় ফের হাসপাতালে ভর্তি হন। এরই মধ্যে সাবেক এক ছাত্রনেতা ডাক্তারের অযাচিত হস্তক্ষেপের বিষয়টি ফাঁস হয়েছে। এ নিয়ে হাসপাতালের ভেতরে বাইরে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এর মাধ্যমে ৩য় পক্ষ একটি ছাত্রসংগঠনের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি ক্রমশই প্রকাশিত হচ্ছে।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২:৩০ মিনিটের সময় ডা. আল মামুন গাইনী ওয়ার্ডে কর্তব্যরত থাকাবস্থায় হঠাৎ নিউরো সার্জারী ওয়ার্ডে গিয়ে ডিউটিরত দুইজন ইন্টার্ন মহিলা ডাক্তারকে দিয়ে রোগীর প্রেসক্রিপশন পরিবর্তন করে নিজে ভিন্ন ওষুধ লিখে যান। ফলে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ডা. আল মামুনের ইন্ধনে আহত ঐ তালামীয কর্মীর চিকিৎসায় ধীরগতি দেখা দেয়ার পাশাপাশি ভুল চিকিৎসায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতির আশঙ্কা করছেন চিকিৎসক ও এমসি কলেজের শিক্ষার্থীরা।


সরেজমিনে অনুসন্ধান ও রিলিজ স্লিপ থেকে জানা যায়, এমসি ছাত্রাবাসে আহত তালামীয কর্মী মিজানুর রহমানকে বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টায় কর্তব্যরত ডাক্তাররা রিলিজ দিয়ে দেন। কিন্তু তিনি পরবর্তীতে আবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আবার এসে ভর্তি হন। সামান্য আহত একজন রোগীকে চিকিৎসা শেষে রিলিজ দেয়ার পর কার ইন্ধনে আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হলো এর কারণ উদঘাটনের জোর দাবী উঠেছে।


এদিকে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল আনাম মোঃ রিয়াজ বলেছেন, ফজরের নামাজ শেষে ফেসবুকে ঢুকার পর তিনি ছাত্রাবাসের বিষয়টি জানতে পারেন। তিনি সাথে সাথে হোস্টেল সুপার মো. মুসলিম উদ্দিন খাঁনকে ফোন দিলে তিনি উত্তরে জানান, এমন কিছু তিনিও শুনতে পাননি। পরবর্তীতে অধ্যক্ষ সকাল ৯ টায় অন্যান্য শিক্ষকদের নিয়ে ছাত্রাবাসে যান। তিনি প্রথমে রুমমেটের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে- সে জানায় ফেইসবুকের স্টেস্টাসের কারণে অন্য রুমের কয়েকজন এসে জিজ্ঞেস করলে উভয়পক্ষ তর্ক-বির্তকে জড়িয়ে পড়ে এবং এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়। এতে সে পায়ে আঘাত পায়।


পরবর্তীতে কলেজ অধ্যক্ষ ওসমানী হাসপাতালে যাওয়ার পর তিনি দেখতে পান তাকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে রিলিজ দিয়ে দিচ্ছে। তখন দায়িত্বরত ডাক্তাররা জানান, তার গুরুতর তেমন কোন সমস্যা হয়নি।

এদিকে তালামীয নেতা মিজানুর রহমানের উপর শিবির হামলা করেছে এবং পায়ের রগ কেটে দিয়েছে এমন অভিযোগ নিয়ে শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) কথা হয় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী সঙ্গে। তিনি বলেন, আহত দুই শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের একজন মিজানুর রহমান রিয়াদ ও অন্যজন জাহিদুল ইসলাম হৃদয়। তবে তাদের অবস্থা গুরুতর নয়।


ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, হৃদয়ের হাত কিছুটা ফুলে গিয়েছিল, তবে এক্সরেতে কোনো ভাঙা ধরা পড়েনি। আর রিয়াদ সামান্য আহত হয়েছিল। পায়ের রগ কাটার মতো কোনো চিহ্ন আমার চিকিৎসকরা পাননি। রগ কাটার মত বড় ইস্যু নিয়ে কোনো বক্তব্যও আমাদের চিকিৎসকরা দেননি। হৃদয়ের যে পায়ে আঘাত লেগেছে, সেটির যথাযথ চিকিৎসা করা হয়েছে। যদিও সেটি খুব গুরুতর নয়। তবে সে চিকিৎসা শেষ না করেই চলে গেছে।


জানা গেছে, মিজানুর রহমান এমসি কলেজ তালামীযের সহ-তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও কলেজের ইংরেজি বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র।


এ ব্যাপারে এমসি কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইসমাঈল খান বলেন, ছাত্রশিবিরের জনপ্রিয়তা নষ্ট করতে তৃতীয় একটি পক্ষ এখানে কলকাঠি নাড়াচ্ছে। মূলত কলেজ ছাত্রাবাসে মিজানুর রহমান নামের ঐ শিক্ষার্থী ও একই কলেজের জাকিরুল ইসলাম নামের অন্য একজন শিক্ষার্থী নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছেন। এতে দুজনই আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার পরপরই সিলেট মহানগর ছাত্রশিবির নেতৃবৃন্দ আহতদের হাসপাতালে দেখতে যান এবং ঘটনার সুষ্টু তদন্তের দাবী জানান।


তিনি বলেন, এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে কয়েকজন ছাত্রের মধ্যে একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনায় সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছে। কয়েকটি গণমাধ্যম প্রকৃত তথ্য না জেনেই একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে ছাত্রশিবিরের চরিত্র হননের ষড়যন্ত্র করেছে। শুক্রবার আহত তালামীয কর্মীর চিকিৎসা নিয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি ছাত্র সংগঠনের সাবেক নেতা ডাক্তারের অতিউৎসাহী ভুমিকায় সেইসব ষড়যন্ত্র প্রকাশিত হচ্ছে।


এ ব্যাপারে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন- এমসি কলেজে আহত শিক্ষার্থী রিয়াদ বৃহস্পতিবার ইমার্জেন্সী থেকে না বলেই চলে যান। ফের ভর্তির তথ্য আমার জানা নেই। এছাড়া মেডিকেলের অন্য ওয়ার্ডের চিকিৎসক কর্তৃক তাকে চিকিৎসা দেয়ার এখতিয়ার নেই। আমি বিষয়টির খোঁজ নিচ্ছি।