নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০৭:১৩ এএম
মা ও ছেলেসহ ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি চক্রের চার সদস্যকে ফরিদপুর, সাভার ও ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশের একটি দল।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ প্রধান বলেন, গ্রেফতারকৃতরা মাস্টারকার্ড এবং ভিসা কার্ডধারীদের একাউন্টের তথ্য নিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিলো। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- নাজমুল হোসেন, সোহেল মীর, পারুলী বেগম ও তারা মিয়া। এদের মধ্যে পারুলী বেগমের ছেলে হচ্ছেন নাজমুল হোসেন।
প্রতিদিন মায়ের হাতে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা তুলে দিতেন ছেলে। নাজমুল কোনো ব্যবসা কিংবা চাকরি করেন না। তবুও তাদের টাকার অভাব নেই। টাকার উৎস নিয়ে মায়ের কোনো প্রশ্নও নেই। কারণ মা-ছেলে মিলেই তৈরি করেছেন অবৈধ আয়ের পথ। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে মা-ছেলেকে গ্রেফতারের পর উঠে আসে এমন সব চাঞ্চল্যকর তথ্য।
অপর দুজনকে সাভার ও ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা ও প্রতারণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১০টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। এই চক্রের সদস্যরা ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কার্ড ডিভিশনের কর্মকর্তা সেজে কার্ড হোল্ডারদের সাথে কথা বলতেন।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানান, তথ্য হালনাগাদ করা হয়নি, কার্ডের পাসওয়ার্ড চার ডিজিটের বদলে ছয় ডিজিট করতে হবে, ই-মেইলে পাঠানো মেসেজ হালনাগাদ করা হয়নি। এসব কারণে কার্ডের সেবা বন্ধ করা হয়েছে। এতে গ্রাহকরা দুশ্চিন্তায় পড়েন। এই সুযোগে তারা কার্ডের নম্বর, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, সিকিউরিটি পিন সংগ্রহ করে নেন। পরে গ্রাহককে বোকা বানিয়ে ফোনে পাঠানো ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ওটিপিও জেনে নেন। শেষ ধাপে এসব তথ্য ব্যবহার করে হাতিয়ে নেয় অ্যাকাউন্টে থাকা অর্থ। বিভিন্ন দলে ভাগে হয়ে প্রতারণা করতেন অভিযুক্তরা। পলাতক শারফিন ঢাকা থেকে কার্ডধারী ব্যক্তির মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে গ্রেফতার নাজমুল ও সোহেলকে পাঠাতেন।
সোহেল মীর ও নাজমুল স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, ব্র্যাক ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের কর্মকর্তা সেজে কার্ড ব্যবহারকারীদের নাম্বারে ফোন দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতেন। বিকাশ অ্যাপে ঢুকে ‘অ্যাড মানি’ অপশনের মাধ্যমেও তারা টাকা আত্মসাৎ করেন। গ্রেপ্তার তারা মিয়া হাতিয়ে নেয়া অর্থ বিকাশ এজেন্ট থেকে তুলে সরাসরি প্রতারকদের কাছে পৌঁছে দিতেন।
সোহেল ও শারফিন নিজেদের অবস্থান লুকাতে ঢাকা, বরিশালসহ অন্যান্য এলাকার বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে অনেক হাত ঘুরিয়ে টাকা নিতেন। এজন্য তারা বেশি অর্থ দিয়ে অন্যের নামে নিবন্ধন করা সিম কিনে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণার পর সিমটি নষ্ট করে ফেলতেন।
নাজমুলের মা এ কাজে সহযোগিতাসহ হাতিয়ে নেওয়া অর্থের সংরক্ষণ ও প্রতারকদের বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে থাকার নির্দেশনা দিতেন। কার্ডধারীদের অ্যাকাউন্টের তথ্য জেনে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় গুলশান, বনানী ও হাতিরঝিল থানায় একাধিক মামলা হলে ছায়াতদন্ত শুরু করে ডিবি পুলিশ।