নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট প্রকাশিত: ১৩ মে, ২০২৫, ০২:০৫ পিএম
সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের পৈলনপুর শাহী ঈদগাহ সংষ্কার কাজ সরকারি বরাদ্দ ও গ্রামটির দেশ ও প্রবাসে থাকা ব্যক্তিবর্গের অর্থায়নে করা হলেও ঈদগাহের প্রবেশমুখের নামফলকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শিহাব উদ্দিন অর্থায়নে এককভাবে তার আপন চাচাতো ভাই রানু মিয়া ধনাইয়ের নাম দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে স্থানীয় জনসাধারণ ক্ষোভে ফুসে উঠেছেন। তারা বলছেন, গ্রামবাসীর মতের বাইরে গিয়ে চেয়ারম্যান শিহাব উদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের নাম দিয়েছেন। এই ঈদগাহটি সংষ্কার করতে আমাদের গ্রামের দেশে-বিদেশে থাকা বিভিন্ন লোকজন অর্থায়ন করেছেন, এখানে একক ভাবে কারো নাম কোন ভাবেই শোভা পায় না।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান শিহাব উদ্দিনকে গ্রামবাসী ও স্থানীয় গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ বারবার বুঝানোর চেষ্টা করা হলেও তিনি তার একক সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। যে কারণে এর একটি সুষ্ঠু সমাধানের জন্য গত সোমবার (১২ মে) গ্রামটির জনসাধারণের পক্ষে মৃত মবশর আলীর ছেলে চমক আলী বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। অভিযোগপত্রটিতে স্থানীয় প্রায় শতাধিক লোকের স্বাক্ষর রয়েছে।
অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান শিহাব উদ্দিন বিগত ১৭ বছর যাবৎ আওয়ামী লীগের দূসর হিসেবে এলাকায় জনসাধারণের সাথে খারাপ আচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে সব ধরণের অপকর্ম করে আসছেন। ৫ই আগস্ট পরবর্তী সময়ে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন হলে বিবাদী শিহাব উদ্দিন সময় সুযোগ বুঝে বিএনপি'র স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু নেতাকর্মীদের সাথে আতাত করে তার অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ঈদগাহ ২০২২ সালে পৈলনপুর গ্রামবাসী এবং প্রবাসী বিত্তবানদের উদ্যোগে পুর্ণ:নির্মাণ কাজ শুরু হয়। উক্ত পূর্ণ:নির্মাণ প্রকল্পে সিলেট জেলা পরিষদ হতে প্রায় ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা অনুদান সহ পৈলনপুর এলাকার গ্রামবাসী এবং প্রবাসী বিত্তবানদের সহযোগীতায় গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে সফল ভাবে ঈদগাহ'র কাজ সম্পন্ন হয়। পৈলনপুর ঈদগাহের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর পরই শিহাব উদ্দিন তার রাজনৈতিক সহ চেয়ারম্যানের প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক ঈদগাহের নাম ফলক তার গোষ্ঠি ভিত্তিক করার জন্য উদ্যত হয়। যাহার পরিপ্রেক্ষিতে শিহাব উদ্দিন পৈলনপুর গ্রামের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মতামতের বিপক্ষে গিয়ে জোর পূর্বক উক্ত ঈদগাহের নামফলকে অর্থায়নে তার চাচাতো ভাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী রানু মিয়া (ধনাই মিয়া) নাম ব্যবহার করেন। যদিও ঈদগাহ'র জমিটি পৈলনপুর জামে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটির এবং উক্ত জমিটি পঞ্চায়েত কমিটির পক্ষে সেক্রেটারীর নামে রেজিস্ট্রিসহ রেকর্ড করা। যাহার ফলে শিহাব উদ্দিন সহ তার সহযোগীদের এহেন কর্মকান্ডে পৈলনপুর এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের অন্তরে রক্তক্ষরণ হয় এবং এরই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এলাকার মধ্যে উক্ত বিষয়কে কেন্দ্র করিয়া বিভিন্ন সময়ে উত্তেজনা বিরাজ করে। পরবর্তীতে উক্ত বিষয়টি মিমাংসার লক্ষ্যে গত ঈদুল-ফিতরের আগের দিন অর্থাৎ গত-৩১/০৩/২০২৫ইং রাত অনুমান ০৮.০০ ঘটিকায় এলাকার গণ্য মান্য ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে বিবাদীদের উক্ত বিষয় সংক্রান্তে বসার প্রস্তাব দিলে তারা প্রত্যাখান করে এবং পূর্ণ:নির্মিত পৈলনপুর সার্বজনীন ঈদগাহে চাচাতো ভাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী রানু মিয়া (ধনাই মিয়া) এর নাম অর্থায়নে আজীবন থাকবে বা কেউ এইটা উঠাতে পারবে না মর্মে হুমকি প্রদান করেন।
উল্লেখ্য যে, ইউপি চেয়ারম্যান শিহাব উদ্দিনের নির্দেশে রাসেল মিয়া ও সুমন আহমদ উল্লেখিত ঈদগাহে পৈলনপুর এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ঈদের জামাত পড়তে নিষেধ করে ও বিভিন্ন ধরণের হুমকি ধামকী প্রদান করে। যাহার কারণে পৈলনপুর এলাকার অধিকাংশ মুসল্লিগণ পৈলনপুর নতুন মসজিদে ঈদের জামাত আদায় করেন। উক্ত ঈদগাহ সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করিয়া বর্তমানে পৈলনপুর এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগের প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজিত কুমার চন্দ বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তকাজ চলমান।