চট্টগ্রামে আমদানি বন্ধের অযুহাতে পাইকারি বাজারে বেড়েছে আলু-পেঁয়াজের দাম
কামরুল হাসান,চট্টগ্রাম প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর, ২০২৪, ০৫:১১ পিএম
ভারত থেকে আমদানি বন্ধের অজুহাতে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারগুলোতে বেড়েছে আলু-পেঁয়াজের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজে ১০ টাকা এবং আলুর কেজিতে ৬ টাকা বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।
নগরীর ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভারত আলু ও পেঁয়াজ ভারতীয় সরকার হঠাৎ করে রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। এ কারণে মুন্সীগঞ্জের ব্যবসায়ীরা আলুর দাম বাড়ানোর সুযোগ পেয়ে যান। ভারত থেকে আলু আসা অব্যাহত রাখতে হবে। অন্যথায় পণ্যটির দাম আরও বেড়ে যাবে। অন্যদিকে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, খাতুনগঞ্জে এখন দেশি পেঁয়াজ নেই। নিউজিল্যান্ডের পেঁয়াজ এসেছে, সেটা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। পুরো বাজার ভারতীয় পেঁয়াজের ওপর নির্ভরশীল। তাই ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর দাম বেড়ে যায়।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী সমিতির নেতা আলহাজ্ব জসিম উদ্দিন বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ রেখেছিল। তবে আমরা জানতে পেরেছি, বুধবার (গতকাল) হিলিসহ দেশের অন্যান্য স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আসছে। তাই আশা করছি, আগামী দুই দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমে আসবে।’
গত সপ্তাহে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ আকার ও মানভেদে বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯২ টাকায়। খুচরা বাজারে এসব পেঁয়াজ সপ্তাহখানেক আগে ১০৫ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়।
অন্যদিকে নগরের আরেক পাইকারি বাজার রিয়াজউদ্দিন বাজারে সপ্তাহখানেক আগে প্রতি কেজি আলু ৫৯ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। খুচরা বাজারে সপ্তাহখানেক আগে কেজিপ্রতি আলু ৭০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়।
রিয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক বলেন, ‘ভারত থেকে আলু রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরে মুন্সীগঞ্জের মালিকরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর এ কারণে আমাদের এখানেও প্রভাব পড়েছে। আলুর দাম বাড়লেও আমাদের কোনো লাভ হয় না। কারণ আলুর দাম যতই বাড়ুক, আমরা প্রতি কেজি আলুতে কমিশন পাই ৮০ পয়সা। আমাদের কমিশন বাড়ে না।’
তিনি বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জ, বগুড়া, জয়পুরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুরে বিপুল পরিমাণে আলুর আবাদ হয়েছে। কিন্তু এগুলো বাজারে আসতে আরও মাসখানেক সময় লাগবে। কিন্তু আলুর দাম কমাতে আমাদের এখানে অভিযান চালিয়ে লাভ নেই।
উল্লেখ্য, অভ্যন্তরীণ দাম বাড়ায় গত ২৪ নভেম্বর আলু ও পেঁয়াজ রপ্তানির স্লট বুকিং বন্ধের ঘোষণা দেয় ভারত। এ কারণে গত ২৫ নভেম্বর সকাল থেকে নতুন করে পেঁয়াজ কিংবা আলুবাহী কোনো ট্রাক স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি। তবে স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, ভারত গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দিবাগত রাত ১২টার দিকে আলু ও পেঁয়াজ রপ্তানির স্লট বুকিং বন্ধের ঘোষণাটি প্রত্যাহার করে নেয়। এ কারণে গতকাল সকাল থেকে পেঁয়াজ ও আলুবাহী গাড়ি বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।
ভারত আলু, পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তটি সাময়িকভাবে বাতিল করেছে। অর্থাৎ ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশটি থেকে পণ্য আসবে। এ কারণে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ৩৫ থেকে ৪০টি পেঁয়াজের গাড়ি দেশে প্রবেশ করেছে। তবে সব স্থলবন্দর দিয়ে গতকাল প্রায় ৩০০টি পেঁয়াজবাহী ট্রাক ও ৩৫০টি আলুবাহী ট্রাক দেশে এসেছে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে আমরা বৃহস্পতিবার (আজ) পণ্য পাঠাব। আশা করছি শুক্রবারের মধ্যে এসব পণ্যের দাম কমে আসবে।’
এদিকে ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, যেকোনো অজুহাতে আগের কেনা পণ্যের দাম বাড়ানো আমাদের ব্যবসায়ীদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে। তারা অতি মুনাফা করে অল্প সময়ে বিপুল অঙ্কের টাকার মালিক হয়ে যেতে চান। আর ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়লে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ ভোক্তারা। তাই জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকারকে এখন থেকে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। নানা অজুহাতে কারা সিন্ডিকেট করছেন, পণ্য মজুত করছেন- এসব খতিয়ে দেখতে হবে। এদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।