বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৪
logo

কুড়িগ্রাম জেলায় থামছেই না পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলা বৃক্ষ ইউক্যালিপটাস এর চাষ।


জাহিদ খান(কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি)  প্রকাশিত:  ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৪:১২ পিএম

কুড়িগ্রাম জেলায় থামছেই না পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলা বৃক্ষ ইউক্যালিপটাস এর চাষ।

 

 

কুড়িগ্রাম জেলা বাংলাদেশের দরিদ্রতম জেলা।এ জেলা দেশের এক প্রান্তে হওয়ায় গড়ে ওঠেনি কোনো কল কারখানা। জেলাটি  কৃষির উপরই নির্ভরশীল।কিন্তু সেই কৃষিও আজ হুমকির মুখে।যত্র তত্র ইট ভাটা, ও এই ইটভাটার মাটির যোগান দিতে ফসলি জমির মাটি কেটে জমির উর্বরতা নষ্টর পাশাপাশি মহামারির মত রোপণ করা হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টকারী ইউক্যালিপটাস গাছ।

কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশী ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের নুর আহাম্মদ নামক এক ব্যক্তিকে সদ্য আমন ধান কাটা জমির চারপাশের আইলে ইউক্যালিপটাস গাছ রোপণ করতে দেখে তাকে এই গাছ রোপণের কারন জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান এই গাছ তাড়াতাড়ি বড় হয়,বিক্রির ক্ষেত্রেও চাহিদা প্রচুর, পরিচর্যা তেও ঝামেলা নেই বললেই চলে তাই তিনি রোপণ করছেন।ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানেন না বলে জানান।

ইউক্যালিপটাস কৃষি ক্ষেত্রে ও পরিবেশের 
উপর ব্যপক  বিরুপ প্রভাব ফেলে ।এ নিয়ে দীর্ঘদিন থেকেই সরকারী প্রচারণাও বিদ্যমান। তবুও থামছেই না সামাজিক বনায়নের নামে ইউক্যালিপটাস গাছ রোপণ। 

ইউক্যালিপটাস,যা মূলত অস্ট্রেলিয়ার আদি প্রজাতি, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী দ্রুত বৃদ্ধি ও বাণিজ্যিক কাঠ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে এ বৃক্ষের অপ্রতিরোধ্য চাষ পরিবেশ ও স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের জন্য নানা দিক থেকে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। তা সত্ত্বেও ইউক্যালিপটাস রোপণের হার বাড়ছেই।এর কারণ হিসেবে পরিবেশবিদ গণ বলেন ইউক্যালিপটাস গাছ রোপণ রোধে সরকারের স্বদিচ্ছা থাকলেও নেই যথাযথ প্রচারণা ও আইনের প্রয়োগ।

ইউক্যালিপটাস গাছ রোপণে পরিবেশগত ভাবে ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
ইউক্যালিপটাস গাছের শিকড় অত্যন্ত গভীরে পৌঁছায় এবং প্রচুর পরিমাণ পানি শোষণ করে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যায় এবং স্থানীয় কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।ইউক্যালিপটাস গাছের পাতা ও শিকড় থেকে নির্গত রাসায়নিক পদার্থ মাটির উর্বরতা কমায়। এটি স্থানীয় প্রজাতির গাছপালা জন্মাতে বাধা দেয়।জীববৈচিত্র্যের ওপরও এই বৃক্ষের প্রভাব ব্যাপক।ইউক্যালিপটাস গাছের নিচে অন্য উদ্ভিদ জন্মাতে পারে না। এর কারণে স্থানীয় গাছপালা এবং প্রাণিকুলের আবাসস্থল ধ্বংস হয়।এছাড়াও ইউক্যালিপটাসের পাতায় থাকা তেল দাহ্য, যা বনাঞ্চলে আগুন লাগার ঝুঁকি বাড়ায়।

এই ইউক্যালিপটাস গাছ চাষের পেছনের কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়,ইউক্যালিপটাস এর দ্রুত বৃদ্ধি।কাঠের উচ্চ উৎপাদনশীলতা, এবং বাণিজ্যিক লাভ।তাছাড়া বাংলাদেশের বন ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা এবং আর্থিক সংকটের কারণে ইউক্যালিপটাস চাষ একটি সহজ সমাধান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে নাগেশ্বরী উপজেলার পরিবেশগত সচেতনতা নিয়ে কাজ করেন এমন একজন বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব ফজলুল হক খান সাহেবের সঙ্গে কথা বললে- তিনি এই বিষ বৃক্ষ ইউক্যালিপটাস এর বিস্তার রোধ এর জন্য করণীয় সম্পর্কে বলেন-স্থানীয় গাছপালা চাষে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত থাকে এবং পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব কমে।তা জনসাধারণ কে অবহিত করতে হবে।এবং ইউক্যালিপটাস চাষের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে কৃষকদের কে অবহিত করতে হবে। 
কৃষিজমিতে ইউক্যালিপটাসের পরিবর্তে মিশ্র ফসল বা অন্যান্য কাঠ প্রজাতি চাষের মাধ্যমে মাটির স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা যায় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এ বিষয়ে সরকার ও স্থানীয় বন বিভাগ কে ব্যাপক প্রচারণা সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সভা সেমিনার করার প্রতিও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

জেলার জীব বৈচিত্র্য রক্ষা ও কৃষি জমির উর্বরতা রক্ষায় বিষ বৃক্ষ ইউক্যালিপটাস রোপণ বন্ধে এখনি কার্যকর ভূমিকা নিতে না পারলে দরিদ্র এই জেলার কৃষির ক্ষেত্রে ব্যাপক ধ্বস নামবে নামবে বলে সচেতন মহল  আশংকা প্রকাশ করেন।