কাস্টমসের তালবাহানায় রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার
সামির হোসেন মোহন প্রকাশিত: ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৪:১২ পিএম
চট্টগ্রাম বন্দরের কার শেড দেখলে মনে হয় এ যেন কোন এক গাড়ির ডাম্পিং এরিয়া। আধুনিক রং-বেরঙের বিভিন্ন গাড়ি খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। বিদেশ থেকে আমদানি করা এসব গাড়ি গুলো দীর্ঘদিন ধরে ছাড় না করানোয় বছরের পর বছর খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকায় অনেকটাই অচল হয়ে পড়েছে গাড়িগুলো। শতকোটি টাকার মূল্যের এসব গাড়িগুলো এখন স্ক্র্যাপে রূপান্তরিত হওয়ার পথে।
বন্দর কার শেডে বিলাসবহুল গাড়িগুলো পড়ে থাকার মূল কারণ মামলার জটিলতা কাস্টমস কর্মকর্তাদের বিভিন্ন তালবাহানা।
কাস্টমস চাইলে ৪৫ দিনের মধ্যে বন্দর ক্লিয়ারেন্স নিয়ে নিলাম দিতে পারে তবে তা না করে মামলার দোহাই আর অজুহাতে নষ্ট হচ্ছে এসব গাড়ি। বন্দর ইয়ার্ডের মূল্যবান জায়গা দখল করে এসব গাড়ি পড়ে থাকায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বন্দর। একইভাবে গাড়িগুলোর ব্যবহার না হওয়ায় সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।
বন্দরল নিয়ম অনুযায়ী, বন্দরে গাড়ি আসার ৩০ দিনের মধ্যে ডেলিভারি নেওয়া না হলে ৪৫ দিনের মধ্যে নিলামে বিক্রি করা যাবে।
গাড়ি আমদানিকারকরা বলেন আমদানি করা গাড়ির সঙ্গে ডকুমেন্টের মিল না থাকা নানা কারণে কাস্টমস থেকে ক্লিয়ারেন্স না পাওয়ায় গাড়িগুলো বন্দর কার শেডেই পড়ে নষ্ট হচ্ছে । সেইসঙ্গে মামলার জটিলতার পাশাপাশি নিলামে কঠোরতার কারণে এভাবে নষ্ট হচ্ছে শত কোটি টাকার গাড়ি ।
প্রতিটি মামলার একটি নির্ধারিত সময় থাকে ৩০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ার। যদি ও আদালত রায় না দেয়, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা বাতিল হয়ে যায় তখন কাস্টমস চাইলে নিলামে ওঠাতে পারে। কিন্তু কাস্টমস কর্মকর্তারা আইনের দোহাই দিয়ে গাড়িগুলো রেখে নষ্ট করে ফেলছে। পরে আর এগুলো ব্যবহারযোগ্য না থাকায় স্ক্র্যাপ হিসেবে পড়ে থাকে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, প্রতিমাসে বন্দরে আসা আমদানিকৃত মালামালের কাগজপত্র নিলামে বিক্রির জন্য কাস্টমসকে হ্যান্ডওভার করে থাকি। বন্দরে পাড়ে থাকা এসব গাড়ি সরিয়ে নিতে কাস্টমসকে অনুরোধ করলেও তারা নেয়নি। এই গাড়িগুলো সরিয়ে নতুন গাড়ি রাখতে পারলে সেখান থেকে রাজস্ব আয় করা যেত। তবে একাধিক বার বলেও কাস্টমস কর্মকর্তারা এই বিষয়টি মাথায় নেয়নি।
বর্তমানে কার শেড, অকশন কার শেড ও এফ শেডে কি পরিমাণ গাড়ি আছে ,শেষ ও চলতি মাসে বন্দর কতৃক কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে এখন পর্যন্ত কতোগুলো গাড়ির ক্লিয়ারেন্স দিয়েছেন সে বিষয় জানতে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার অব কাস্টমস প্রিভেন্টিভ মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
এভাবে সকল কিছু থেকে গা'ঢাকা দিয়ে থাকেন কাস্টমস কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। কিছু জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
কাস্টমস কর্মকর্তাদের তালবাহান আর অজুহাতের কারনে বন্দর যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনিভাবে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।