আর এ জাবেদ , ফেনী প্রকাশিত: ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৪:১২ পিএম
দৃষ্টিনন্দন পাখি। এদের বাসার গঠন খুবই জটিল এবং আকৃতি বেশ সুন্দর। তাই বাবুই পাখিকে শৈল্পিক ইঞ্জিনিয়ারও বলা চলে। নিজের ঘর সাজাতে তাদের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু বর্তমান সময়ে কালের বিবর্তনে যেনো প্রকৃতি থেকেই হারিয়ে যেতে বসেছে তালের পাতায় মোড়ানো নিপুণ কারুকার্য খচিত বাবুই পাখি ও তার অপরূপ সুন্দর বাসা। এক সময় প্রকৃতি এ পাখিগুলো কালের বিবর্তনে এখন বিলুপ্তপ্রায়।
বাবুই পাখি নিয়ে কবি রজনীকান্ত সেন তার কবিতায় লিখেছেন, বাবুই পাখিকে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থাকি কর শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে। বাবুই পাখির প্রধান আস্তানা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তালগাছ যেমন এখন আর দেখা যায় না
আগে ফেনীর বিভিন্ন গ্রামের মাঠের ধারে, পুকুর কিংবা সড়কের পান্তরে তাল, ও খেজুরগাছ সহ বিভিন্ন গাছে দেখা মিলতো বাবুই পাখির। তবে এখন এসকল গাছ এবং এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছ হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গেছে আপন ঘর নির্মাণে ব্যস্ত শিল্পমনা বাবুই পাখির কিচিরমিচির শব্দ। এখন এসব দৃশ্য শুধুই কল্পনার বিষয়। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বাবুই পাখির বাসা বিলীন হয়ে গিয়েছে। অথচ কয়েক বছর আগেও গ্রাম-গঞ্জের মাঠ-ঘাটের তাল, খেজুর, নারিকেল গাছে দেখা যেত এদের বাসা। তালগাছের কচিপাতা, খড়, ঝাউ ও কাশবন দিয়ে উঁচু তালগাছে নিপুণ দক্ষতায় বাসা তৈরি করত বাবুই পাখি। সেই বাসা দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি ছিল মজবুত।
সরজমিনে ফেনীর কাসিম পুর নামক গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশের তাল গাছ এবং খেজুর গাছে শৈল্পিক দক্ষতায় বাসা বেঁধেছে বাবুই পাখি। সেই সঙ্গে পাখির কিচিরমিচির শব্দে জুড়িয়ে যায় মন। কয়েক বছর ধরেই বাবুই পাখি এখানে বাসা বাঁধে। অপেক্ষাকৃত নিরাপদ মনে হওয়ায় তারা এখানে বাসা বাঁধে। এক সময় বিভিন্ন প্রজাতির বাবুই পাখি দেখা যেত। এরমধ্যে অনেক বাবুই এখন বিলুপ্তির পথে। টিকে আছে কিছু দেশি বাবুই। বাসা তৈরির জন্য বাবুই পাখির পছন্দের তাল, সুপারি ও খেজুর গাছ কমতে থাকায় আবাসস্থল সংকট দেখা দিয়েছে। তালগাছ আর বাবুই পাখির বাসা এ যেন একই বৃন্তে দুটি ফুল। একটিকে বাদ দিয়ে অপরটিকে নিয়ে ভাবা যায় না। শুধু তালগাছকে নিয়ে ভাবলে, বাবুই পাখির বাসা এমনিতেই যেন চোখে ভেসে আসে।
বাবুই পাখির বাসা দেখতে দেখতে পথচারী সবুজ বলেন, তালগাছ ও খেজুরের গাছে সংখ্যা দিনদিন কমে যাচ্ছে। যে কারণে বাবুই পাখি এখন বিলুপ্তির পথে। বৃক্ষ নিধন ও নির্বিচারে পাখি শিকারের কারণে বাবুই পাখির বাসা এখন খুব একটা দেখা যায় না। এখানে কয়েকটা গাছে বাবুই পাখি থাকে। তাদের কিচিরমিচির শব্দ অনেক ভালো লাগে।
আরেক পথচারী আতিকুর রহমান রোজন বলেন আগের মত তালগাছ, নারিকেল গাছ চোখে পড়ে না। সময়ের বিবর্তনে ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে এখন ওই পাখি হারিয়ে যাচ্ছে। বাবুই পাখির কিচিরমিচির শব্দ এবং তাদের শৈল্পিক বাসা তৈরি মানুষকে আনন্দিত করতো। কিন্তু এখন আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে গ্রামে। আগের মতো গ্রামাঞ্চলের রাস্তার ধারে, বাড়ির পাশে সেই তালগাছ, খেজুর গাছ যেমন দেখা যায় না তেমনি দেখা মিলে না শৈল্পিক বাবুই পাখিরও। গ্রামের একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছ হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখিও।