নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৯:১২ পিএম
রাসেল চৌধুরী
২০২৪ সালে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান ছিল ইতিহাসের অনন্য ঘটনা। এই বছর বাংলাদেশের অন্যান্য অঙ্গনের মতো ধর্মীয় অঙ্গন ছিল বেশ ঘটনাবহুল।
বছরের শুরুর দিকে পাকিস্তান থেকে আসা মাওলানা আহমদ বাটলা’র আমবয়ানের মধ্যদিয়ে শুরু হয় টঙ্গীর তুরাগ তীরে তাবলীগ জামাতের প্রথম পর্বের ইজতেমা। দ্বিতীয় পর্বে ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান আনার চেষ্টা করলেও পরে আর মাওলানা সাদকে আনা যায়নি। এবার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করতে আসার সময় ৪ ফেব্রুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হন। বছের শুরু ইজতেমা এরমধ্যে শেষ হলেও বছের শেষেরদিকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে বিশ্ব ইজতেমা মাঠের দখলকে কেন্দ্র করে যোবায়ের ও সাদপন্থিদের মধ্যে এই সংঘর্ষ। এই সংঘর্ষে চারজন নিহত ও আহত হয়েছেন প্রায় শতাধিক। এনিয়ে সাদপন্থিদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।
এই ঘঠনার পূর্বে দেশজুড়ে আলোচনার শীর্ষে ছিল সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী গ্রেপ্তার ও পরের দিন চট্টগ্রামের আদালতপাড়ায় ইসকনের হামলা ও আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ খুনের ঘঠান।
আবার এপ্রিলে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় দুই যুবককে মন্দিরে আগুন দেয়ার সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করার পর তা দেশজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। সারা দেশে এ হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। ঢাকা ও খুলনা মহাসড়কে অবরোধ করাও হয়। এ ঘটনার পর ফরিদপুর এক সপ্তাহেরও বেশি বিজিবি টহলে ছিল্
ধর্মীয় বেশ আলোচনার বিষয় হয়ে উঠে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাজারে হামলার ঘটনা। মূলথ আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাজারে হামলার ঘটনা ঘটে।
নারায়ণগঞ্জের দেওয়ানবাগ মাজারে হামলার ঘটনা এবং সিলেটের শাহপরান মাজারে গান-বাজনা নিষিদ্ধ করার ঘটনা বেশি আলোচিত ছিল। গুলিস্তানের গোলাপশাহ মাজার ভাঙার জন্য ফেসবুকে প্রচারিত একটি ইভেন্ট দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
এসব ঘটনায় মানুষজন হতাহতও হন। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইভেন্ট খুলেও মাজার ভাঙার আহ্বান জানাতে দেখা গিয়েছিল সেই সময়।
ঢাকার ধামরাই উপজেলার বাটুলিয়া এলাকায় বুচাই পাগলা (রহ.)-এর মাজারে হামলা ও ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা।
অন্যদিকে এইবছর ধর্মীয় অঙ্গনের বড় ঘঠনা বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষ। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা মুফতি রুহুল আমীন জুমার নামাজে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকার পর ২০ সেপ্টেম্বর আবখর বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজে খতিব হিসেবে উপস্থিত হলে সেই সমৎ মুসল্লিদের একাংশ তাকে প্রত্যাখ্যান করেন। এ সময় তার সঙ্গে আসা সমর্থকদের সঙ্গে জুমার নামাজের মুসল্লিদের সংঘর্ষ বাধে, যা বায়তুল মোকাররম মসজিদের জন্য নজিরবিহীন ঘটনা। এ ঘটনায় অন্তত ৫০ জন মুসল্লি আহত হন। মসজিদে থাকা জুতার বাক্স, রড ও পাইপ দিয়ে মসজিদের গ্লাস ভাঙ্গা এবং পরে সে গ্লাস দিয়ে মুসল্লিদের ওপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করার অভিযোগ ওঠে মুফতি রুহুল আমীনের অনুসারীদের বিরুদ্ধে।
এই বছরে সাবেক খতিব মাওলানা মুফতি রুহুল আমীন অনুপস্থিত থাকা এবং তাকে নিয়ে সংঘর্ষের পর বায়তুল মোকাররমে নতুন খতিব হিসেবে নিয়োগ পান মুফতি আবদুল মালেক। তার এ নিয়োগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আনন্দ প্রকাশ করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।
দেশের ইসলামিক অঙ্গনের আরেক আলোচিত বিষয় ঘুষ-দুর্নীতি নিয়ে মসজিদের ইমামের বয়ানের পর চাকরিচ্যুতির অভিযোগ। চাঁদপুর জেলার মতলবে জুমার নামাজের বয়ানে সুদ-ঘুষের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে মাওলানা রহমত উল্লাহ নামে এক ইমামকে চাকরিচ্যুত করা হলে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেয়া এবং কমেন্ট বক্সে মন্তব্য করায় চার পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়, যা এ ঘটনাকে নতুন মোড় দেয়।
এই বছরের সব চেয়ে ঝড় উঠা বিষয় ছিল ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ।
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) সাবেক নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ভারতে আশ্রয় নেয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এমনকি, শিশু নির্যাতনসহ চারিত্রিক স্খলনজনিত অভিযোগও বেরিয়ে আসে তার বিরুদ্ধে।
এমন এক ব্যক্তিকে আইনি প্রক্রিয়ায় নিতে বাধা ও বিভিন্ন উসকানিমূলক মন্তব্য ছড়ানোর প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। সেখান থেকে ইসকন নিষিদ্ধের দাবি উঠে আসে। একই সঙ্গে আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদ এবং খুনিদের দ্রুত বিচারের দাবি করা হয়।
বছরজুড়ে আলোচনায় হজ। মে মাসে সৌদি আরবে যাওয়া শুরু হয় ২০২৪ সালের হজ ফ্লাইট। অতিরিক্ত তাপমাত্রার ফলে অধিক সংখ্যায় হজযাত্রীর মৃত্যু ঘটে এ বছর। এবার হজে ৬৫ জন বাংলাদেশি মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়।
আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি হজের খরচ কমানোর জন্য দুটির বদলে তিনটি প্যাকেজ ঘোষণা করেন খাবার খরচ ব্যতীতই।