বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪

কোথায় ওবায়দুল কাদের?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর, ২০২৪, ০৩:১০ পিএম

কোথায় ওবায়দুল কাদের?

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কোথায় আছেন কেউ জানে না। তিনি দেশে, নাকি বিদেশে এ নিয়ে পরস্পরবিরোধী নানা আলোচনা রয়েছে।

 

গত ৫ আগস্ট ছাত্র- জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর কয়েক সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ অনেক নেতা ভারত ও বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে গেছেন। দেশে থাকা নেতাদের অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। কিন্তু ওবায়দুল কাদেরকে এখনো গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। কিংবা তিনি অন্য কোনো দেশে আছেন কিনা এ বিষয়েও আওয়ামী লীগের কোনো নেতা কোনো তথ্য দিতে পারেননি।

 

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক দলের নেতা, বিচারক, সরকারি আমলা, পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রায় ৬২৬ জন ব্যক্তিকে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ৫১৫ জন পুলিশ সদস্য বাদে ১১১ জন ছিলেন রাজনৈতিক নেতা, বিচারক ও সরকারি আমলা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও এদের মধ্যে ছিলেন বলে জানা গেছে।

 

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ৬২৬ জনের মধ্যে ৭ জন বাদে সবাই নিজ উদ্যোগে সেনানিবাস ছেড়ে গেছেন, এদের মধ্যে ৪ জনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ওবায়দুল কাদের এখনো সেখানে আছেন কিনা কিংবা তিনি নিজ উদ্যোগে সেনানিবাস ছেড়ে গেছেন কিনা, এ বিষয়ে কেউ কোনো তথ্য জানায়নি।

 

আওয়ামী লীগের এক অংশের বক্তব্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ৫ আগস্ট দুপুরে শেখ হাসিনার দেশত্যাগ পর্যন্ত সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ধানমণ্ডিতেই ছিলেন। সে সময় দেশজুড়ে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মধ্যে তিনি দেশ ছাড়ার সুযোগ পাননি বলে অনেকের ধারণা। সেনানিবাসের আশ্রয় ছেড়ে তিনি সীমান্তবর্তী কোনো জেলায় অবস্থান করছেন বলে গুজব রয়েছে। যথাযথ সুযোগ পেলেই যে কোনো মুহূর্তে তিনি ভারতে যাবেন, এমনটাই বলা হচ্ছে।

 

অপর অংশের ধারণা, ওবায়দুল কাদের সড়ক ও সেতু মন্ত্রী হিসেবে আর্মি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর (ইসিবি) ও অন্যান্য সেনা-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে প্রচুর কাজ দিয়েছেন। ফলে অনেক সেনা কর্মকর্তার সাথে তাঁর সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে। সে সুবাদে তাকে সেনানিবাসেই এখনো আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বেশি ঘোলাটে না হলে তাকে সেনানিবাসের আশ্রয়েই রাখা হবে।

 

ভারতে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকেই বলছেন, কাদের সে দেশে যাননি। আবার কেউ কেউ বলছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। কারও দাবি, তিনি আছেন সিঙ্গাপুর কিংবা থাইল্যান্ডে।

 

১/১১-এর পর থেকে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে সক্রিয় নেতাদের একজন ওবায়দুল কাদের। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি নিয়ে গণমাধ্যমে হাজির হতেন তিনি। তাঁর অনেক বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে 'ভাইরাল' হয়েছে। ২০১৯ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৩ মাস হাসপাতালে থাকার সময় বাদ দিয়ে আর কখনো তিনি নিরব ছিলেন না।

 

৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ নেতারা অনেকেই ধীরে ধীরে মুখ খুলছেন। দেশের বাইরে থেকেও অনেকে সামাজিক মাধ্যমে বক্তব্য দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সারির নেতাদের সাথে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনেকগুলো ফোনালাপ এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু ওবায়দুল কাদের এখন পর্যন্ত চুপ আছেন, যা তাঁর স্বভাববিরুদ্ধ। এ কারণে তিনি সুস্থ-স্বাভাবিক আছেন কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। উল্লেখ্য, গণঅভ্যুত্থানের পর ছাত্র-জনতার হামলায় এবং পালাতে গিয়ে সাবেক মন্ত্রী সহ বেশ কিছু আওয়ামী লীগ নেতা মৃত্যুবরণ করেছেন। ওবায়দুল কাদেরের তেমন কোনো পরিণতি হয়েছে কিনা, সে বিষয়েও কেউ কোনো তথ্য দিতে পারছে না।