বুধবার, ডিসেম্বর ৪, ২০২৪

মুসলিম স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন পাঁচ শতাব্দীর প্রাচীন খেরুয়া মসজিদ 

সেলিম রেজা,শেরপুর(বগুড়া) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৫:১২ পিএম

মুসলিম স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন পাঁচ শতাব্দীর প্রাচীন খেরুয়া মসজিদ 

 



মুসলিম স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন হয়ে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রায় পাঁচ শতাব্দীর প্রাচীন ঐতিহাসিক খেরুয়া মসজিদ। বগুড়ার শেরপুর উপজেলা সদর থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে গ্রামীন সবুজ শ্যামল ছায়াঘেরা মনোরম পরিবেশে খন্দকারটোলা গ্রামে এ মসজিদটির অবস্থান।
যে মসজিদটির নির্মাণ শৈলী আজও দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটক ও দশনার্থীদের হৃদয় মনে ভীষণভাবে সাড়া দেয়। সীমানা প্রাচীর ঘেরা এ মসজিদটির ভেতরে প্রবেশদ্বারের সামনেই রয়েছে প্রতিষ্ঠাতার কবর।
মসজিদের সামনের দেওয়ালে স্থাপিত ফার্সি শিলালিপি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে ‘শেরপুরের ইতিহাস’ নামে বই থেকে জানা যায়, মির্জা নবাব মুরাদ খানের পৃষ্টপোষকতায় আব্দুস সামাদ ফকির ৯৮৯ হিজরির ২৬ জিলকদ (১৫৮২খ্রি.) সোমবার ওই স্থানে মসজিদটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।
উত্তর-দক্ষিণ লম্বা বিশিষ্ট মসজিদটির বাইরের দিকের দৈর্ঘ্য ৫৭ ফুট এবং প্রস্থ ২৪ফুট। ভেতরের দিকের দৈর্ঘ্য ৪৫ ফুট ও প্রস্থ ১২ ফুট। আর মসজিদের চারিদিকের দেওয়ালের পুরুত্ব ৬ ফুট।
তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদের চারকোনায় ৪টি মিনার ও পূর্ব দেওয়ালে ৩টিসহ উত্তর-দক্ষিণে আরও ২টি দরজা রয়েছে। এছাড়া মসজিদের ৩টি মেহরাব আয়তকার ফ্রেমের মধ্যে অধ্যগোলকার করে স্থাপিত। মসজিদের কার্ণিস বাঁকানো। দেওয়ালে কিছু কিছু পোড়া মাটির চিত্র ফলকও ছিল। তবে সংখ্যায় খুবই কম। ইট, চুন ও শুড়কি ছাড়াও বৃহদাকার কৃষ্ণ পাথর ব্যবহার করা হয়েছে এ মসজিদ নির্মাণে। মসজিদের সামনের দেওয়ালে দু’টি শিলালিপি ছিল। এর একটি শিলালিপির ভেতরে বহু মূলবান সম্পদ রক্ষিত ছিল যা পরবর্তীতে ব্যবহৃত হয়। আর অপরটি বর্তমানে পাকিস্তানের করাচি জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।   
সম্রাট আকবরের আমলে মসজিদটি নির্মিত হওয়ায় এর দেওয়ালের বিভিন্ন স্থানে ব্যতিক্রম অনেক চিহ্ন দেখা যায়। স্থাপত্য বিশারদদের মতে খেরুয়া মসজিদে সুলতানী ও মোঘল আমলের মধ্যবর্তী স্থাপত্য নিদর্শন প্রকাশ পেয়েছে। এতে বার ও আট কোনা কলাম ব্যবহার করা হয়েছে। যা বাঙলা স্থাপত্য শিল্পে বিরল।
এ মসজিদটি দীর্ঘ সময় অবহেলায় পড়ে থাকে। তবে ৯০’র দশকে দেশের প্রত্নতত্ত বিভাগ মসজিদটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় ও আগের অবস্থায় ফিরে আনে। পরে ১৯৮৮ সাল থেকে প্রত্নতত্ত বিভাগ মসজিদটিসহ এর সম্পত্তি দেখভালের জন্য একজন খাদেম নিয়োগ দেয়।
 ইতিহাস সমৃদ্ধ এ মসজিদটি পরিদর্শনে প্রতিনিয়ত দেশ বিদেশের বহু পর্যটক ও দর্শনার্থীসহ স্থাপত্য বিশারদরা আসেন।