রবিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৫

গাজীপুরে পুলিশ ফাঁড়ির সামনে যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার ৬

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৫:১২ পিএম

গাজীপুরে পুলিশ ফাঁড়ির সামনে যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায়  গ্রেফতার ৬

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী যুবককে ধাওয়া করে ধরে মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির পাশেই রাস্তার ওপর কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া মালামাল ও হত্যায় ব্যবহৃত ছুড়ি উদ্ধার করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) ভোর পাঁচ টার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির পশ্চিম পাশে হানিফ স্পিনিং মিলের সামনে এ হত্যার ঘটনা ঘটে। হত্যার ঘটনাটি ব্যাপকভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ঘটনার চারদিনের মাথায় গাজীপুর জেলা পুলিশ গেল সোমবার রাতে গাজীপুরের বিভিন্ন জায়গা থেকে তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিগ্যাসাবাদে পুলিশের কাছে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
নিহতের নাম তাজবির হোসেন শিহান (২৬)। তিনি কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক জামতলা এলাকার তানভির হোসেন নান্নু মিয়ার ছেলে। শিহানের মা কালিয়াকৈরে মৌচাক স্কাউট উচ্চ বিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞানের শিক্ষিকা। শিহান দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট।
গ্রেফতার আসামীরা হলো, ময়মনসিংহ জেলা ধোবাউরা থানার হালিম উদ্দিনের ছেলে মোঃ সরওয়ার হোসেন শারু (২৮), তিনি পেশায় স্থানীয় তাকওয়া পরিবহনের ড্রাইভার। কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী থানার আলী আজগরের ছেলে নাজিম উদ্দিন নয়ন (৩৫), তিনি পেশায় সিএনজি চালক। একই জেলা ওলিপুর থানার আজগর আলীর ছেলে মোঃ ছাইফুল ইসলাম (৪২), তিনি পেশায় এনজি চালক। লক্ষীপুর জেলার সদরের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে মোঃ জুয়েল (২৪),তিনি আজমেরী গ্লোরী বাসের হেলপার। জয়পুর হাটের আক্কেলপুর থানার আব্দুল জলিলের ছেলে মোঃ মিলন (২৭),তিনি তাকওয়া পরিবহনের স্টাফ। অপর জন ভোলা জেলার চরফ্যাশনের মৃত সুলতান বয়াতীল ছেলে মোঃ আনোয়ার হোসেন (৩৫), তিনি পেশায় চা দোকানদার ও চোরাই মোবাইল ফোনের ক্রেতা ও বিক্রেতা।
মঙ্গলবার বেলা ১২টায় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো: রবিউল ইসলাম।
তিনি আরো জানান, ১২ ডিসেম্বর ভোর পাঁচটার দিকে শিহান বাড়ি থেকে বের হয়ে মৌচাক বাস স্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছিলেন। পরে মাজার রোডের সামনে থেকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাকে ধাওয়া করে ৫ জন যুবক হানিফ স্পিনিং মিলের সামনে তাকে ধরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর যখম করে মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনার তার পিতা বাদী হয়ে থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামীদের মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে থানার ওসি রিয়াদ হোসেন ও তার দলের সদস্যরা তদন্ত শুরু করে। তারা জানতে পারে ঘটনার দিন ছিনতাইকারীরা শিহানকে হত্যার আগে একই এলাকায় এক কাভার্ডভ্যান চালক মোঃ মাসুদুর রহমান (৪৬) কে আহত করে ছিনতাই করে। মাসুদুর রহমানের দেয়া তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় গ্রেফতার আসামীদের মধ্যে চা দোকানদার আনোয়ারকে প্রথমে গাজীপুরের সালনা এলাকা থেকে সোমবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে ছিনতাই করা মোবাইল উদ্ধার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী রাতভর সালনা, বাসন, কোনাবাড়ী, টঙ্গী প্রভৃতি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অপর ছিনতাইকারী যারা তার কাছে মোবাইল বিক্রি করেছে, একে একে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যার কাজে ব্যবহৃত ছুড়ি এবং ছিনতাইকৃত মোবাইল ফোন, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট কার্ড, ভিসা কার্ডসহ মোট ৪টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
তিনি আরো জানান, মুলত এরা একটি ছিনতাইকারী চক্র। পরস্পর মিলে বিভিন্ন ও সিএনজির চালকের পরিচয়ের আড়ালে এরা সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র। এরা সিএনজি নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। পথে নিরাপদ স্থানে কোন মানুষ পেলে তারা তাকে টার্গট করে ছিনতাই করে সিএনজি নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
তিনি জানান, আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা সিএনজিযোগে দীর্ঘদিন ধরে চন্দ্রা, মৌচাক, কোনাবাড়ী, জয়দেবপুর চৌরাস্তা, টঙ্গী, সালনা, শ্রীপুর ইত্যাদি এলাকায় ছিনতাই কার্যক্রমের সাথে জড়িত। তারা ছিনতাইকৃত ৪টি মোবাইল ফোন আসামী আনোয়ারের কাছে ৮৫০০/- টাকা বিক্রয় করে।
জানা যায়, নিহত শিহান বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করেছেন। শিহান উত্তরার একটি কল সেন্টারে চাকরি করতেন। তিনি ছায়ানট ছায়ানট সঙ্গীতবিদ্যায়তনে ২০০০ সাল থেকে সঙ্গীত বিষয়ে অনুশীলন করছেন। এছাড়াও তিনি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ক্লাব ফর পারফর্মিং আর্টস এর সদস্য ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত সুপার (অপরাধ) আমিনুল ইসলাম, কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রিয়াদ মাহমুদ, মৌচাক পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ মহিদুল ইসলাম ও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সাইদুর রহমান।