শুক্রবার, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪

১২ ঘন্টার মধ্যেই রহস্য উদঘাটন করলো পিবিআই চুরির মালামাল সহ আটক চার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৪:১২ পিএম

১২ ঘন্টার মধ্যেই রহস্য উদঘাটন করলো পিবিআই চুরির মালামাল সহ আটক চার

কামরুল হাসান, চট্টগ্রাম

 

সিলগালা করা তালা দেওয়া অবস্থায় পণ্য সামগ্রী নিয়ে গুদামে পৌঁছে গেছে কাভার্ডভ্যান। নিরাপদে পৌঁছানোর পরও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে যে পরিমাণ পণ্য সামগ্রী নিয়ে গুদামে পৌঁছানোর কথা কাভার্ডভ্যানে করে সেই পরিমাণ পণ্য সমগ্র নিয়ে পৌঁছাতে পারেনি। যাত্রা পথেই অক্ষত কাভার্ড ভ্যানের ভেতর থেকেই উধাও হয়ে গেছে আমদানিকৃত মালামাল। মাথায় হাত আমদানিকারকের। তিনি ছুটে গেলেন থানায়, যথারীতি মামলা।

 

বলছিলাম চট্টগ্রামের সেই সীতাকুন্ডের ফৌজদারহাট এলাকায় কাভার্ড ভ্যানের সিলগালা অক্ষত রেখেই অভিনব কায়দায় সরিয়ে নেয় মালামালের কথা। যাহার ঘটনার বিবরণ শুনে হতবাক খোদ থানা পুলিশও। এরপর রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই। তদন্তে বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য।

 

চট্টগ্রাম জেলা পিবিআই মামালার তদন্তে নামার পর সিলগালা করা অক্ষত কাভার্ডভ্যান যোগে গাজীপুরে নেওয়ার পথে সীতাকুন্ডের ফৌজদারহাটে ৩৭ লাখ টাকার মালামাল আত্মসাতের ঘটনায় চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে এমন তথ্য জানান পুলিশ সুপার শেখ জয়নুদ্দিন।

 

এসময় সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার শেখ জয়নুদ্দীন বলেন, চট্টগ্রাম জেলা পিবিআই মামলাটি স্ব-উদ্যোগে গ্রহণের আদেশ পেয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। তদন্ত গ্রহণের ১২ ঘণ্টার মধ্যে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মামলার ঘটনায় জড়িত এজাহারনামীয় আসামি জাকির হোসেন ও নুর মুহাম্মদ তাসপিনকে গ্রেফতার করে। তাদের দেয়া তথ্যমতে, বাদীর প্রতিষ্ঠানের আমদানীকৃত কালো রংয়ের ৩-২৫-১৬ সাইজের ৮৯টি টায়ার, কালো রংয়ের ২-৭৫-১৪ সাইজের ৯৫টি টায়ারসহ সর্বমোট ১৮৪টি ছোট ও বড় সাইজের টায়ার উদ্ধার করা হয়। পরে এই চক্রের সদস্য মোহাম্মদ নাঈম উদ্দীন নয়ন ও শেখ মো. আবু মুছা পাবেলকে গ্রেফতার করা হয়। তারা পণ্য লোপাটকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। অপরাপর সহযোগীদের প্রতিনিধি হিসাবে বিশেষ কায়দায় সিলগালা অক্ষত রেখে কভার্ড ভ্যান থেকে মালামাল চুরি করে চোরাইকৃত মালামাল গোপন স্থানে লুকিয়ে রাখে। পরবর্তীতে নিজেদের মালামাল দাবি করে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ক্যাশমেমো প্রস্তুত করে তা খোলা বাজারে বিক্রয় করে দেয়। চট্টগ্রামে এরকম বেশ কয়েকটি অপরাধী চক্র সক্রিয় রয়েছে।

 

এবিষয়ে তদন্তকারী অফিসার শাহাদাত হোসেন বলেন, ওই চক্রের সাথে কাভার্ড ভ্যানের চালক ও হেলপার জড়িত। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানিকৃত মালামাল কাভার্ড ভ্যানে বোঝাই করে তাতে সিলগালা করে দেয়া হয়। কিন্তু চালক ও তার সহকারীর সহযোগীতায় কাভার্ড ভ্যানের তলায় একটি পাটাতন খোলা রাখা হয়। সেটি বন্দর থেকে বের হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পৌঁছার পর রাতের আঁধারে কাভার্ড ভ্যানটি মহাসড়কের পাশে দাঁড় করানো হয়। এরপর সেখানে আগে থেকে প্রস্তুত থাকা চক্রটি একটি শিশু বা কিশোরকে কাভার্ড ভ্যানের পাটাতনের ওই খোলা অংশ দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়। সে ভেতর থেকে মালামাল রেব করে আনে। এরপর ওই পাটাতন লাগিয়ে দিয়ে বাকি পণ্য গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়।

 

এসময় শাহাদাত হোসেন আরও জানান, ওই চক্রটি টায়ারের ওই চালান ছাড়াও আমদানিকৃত আরো কয়েকটি চালানের পণ্য লোপাট করেছে। বেশির ভাগ সময় কম পণ্য লোপাট হলে আমদানিকারক বিষয়টি বুঝতে পারেন না। আবার অনেকে বুঝতে পারলেও উল্টো ঝামেলায় পড়ে যাওয়ার ভয়ে থানা পুলিশের দ্বারস্থ হন না। ফলে পণ্য লোপাটকারী চক্রটি অধরা থেকে যায়। আমদানি পণ্যের পাশাপাশি চক্রটি রফতানি পণ্যও লোপাট করে। রফতানিপণ্য জাহাজীকরণের আগে পথেই লুট হয়ে যাওয়ায় বিদেশি ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। অনেক সময় কমপণ্য পাঠাতে বাধ্য হন রফতানিকারক। তাতে ক্রেতার সাথে করা চুক্তির যেমন লঙ্ঘন হচ্ছে তেমনি বিদেশে বাংলাদেশের সুনামও নষ্ট হচ্ছে।