শনিবার, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪

চট্টগ্রামে মারাত্মক বায়ুদূষণের ঝুঁকি, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা

মোহাম্মদ খোরশেদ হেলালী

প্রকাশিত: ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৭:১২ পিএম

চট্টগ্রামে মারাত্মক বায়ুদূষণের ঝুঁকি, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা

চট্টগ্রাম মহানগরী বর্তমানে মারাত্মক বায়ুদূষণের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, যা প্রায় ৬০ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলেছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের জটিল রোগ, চোখের প্রদাহসহ নানা রোগব্যাধির জন্য দায়ী হতে পারে এই দূষিত বাতাস।  

 

*পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে,* গত ২০ বছর ধরে অপরিকল্পিত উন্নয়ন, অবাধে বৃক্ষরাজির ধ্বংস এবং খাল-পুকুর-জলাশয় ভরাটের কারণে চট্টগ্রাম মহানগরী আজ দেশের ভয়াবহ বায়ুদূষণের শিকার নগরীগুলোর সমপর্যায়ে পৌঁছে গেছে। শহরের পরিবেশে ধুলাবালি এবং ক্ষতিকর ভাসমান বস্তুকণার আধিক্য বেড়েছে, যা মানুষের স্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

 

*চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক)* আধাখেঁচড়া উন্নয়ন কাজ এবং *চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক)* বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গত ৪০ বছরের ব্যর্থতা এবং দখলবাজি এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী বলে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন। তারা বলছেন, এই অব্যবস্থাপনা এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে চট্টগ্রাম আজ একটি দূষিত নগরীতে পরিণত হয়েছে।

 

*পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যে* জানা গেছে, *এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই)* অনুযায়ী চলতি ডিসেম্বর মাসেই চট্টগ্রামের বায়ুদূষণের মাত্রা *অস্বাস্থ্যকর* ও *অতি অস্বাস্থ্যকর* পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতি মনিটর করতে নগরীতে তিনটি *কনটিনিউয়াস এয়ার কোয়ালিটি মনিটরিং স্টেশন* স্থাপন করা হয়েছে, যা ঢাকার আগারগাঁও বায়ুমান ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে তথ্য প্রেরণ করছে।

 

*ঢাকাস্থ পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের পরিচালক মো. জিয়াউল হক* বলেন, *ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও সাভার* শহরের পাশাপাশি *চট্টগ্রামও* দেশের সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণের শিকার নগরীগুলোর মধ্যে রয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, *চট্টগ্রাম* যে কোনো সময় দেশের *সর্বোচ্চ বায়ুদূষিত নগরী* হিসেবে স্থান পেতে পারে।  

 

*বায়ুদূষণের মাত্রা* সম্পর্কে তিনি বলেন, "যদি *২০০ একিউআই* অতিক্রম করে, তবে সেটি *অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর* বলে গণ্য হয়, *৩০০ একিউআই* অতিক্রম করলে সেটি *ঝুঁকিপূর্ণ* এবং *১৫০ একিউআই* অতিক্রম করলে সেটি *অস্বাস্থ্যকর* হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।"

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, *চট্টগ্রাম*সহ দেশের অন্যান্য *বায়ুদূষিত অঞ্চলের* দূষণের মাত্রা দ্রুত কমিয়ে আনা প্রয়োজন। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বায়ুদূষণের কারণে শ্বাসপ্রশ্বাসের নানা সমস্যা, ফুসফুসের রোগ এবং চোখের সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে।

 

*প্রতিকারের উপায়:*

১. *পরিকল্পিত নগরায়ণ:* প্রকৃতির সঙ্গতিপূর্ণ উন্নয়ন এবং বৃক্ষরাজির রক্ষণাবেক্ষণ।

2. *বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন:* সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং খাল-পুকুর রক্ষা।

3. *পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির গ্রহণ:* পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এবং সবুজ অবকাঠামো উন্নয়ন।

4. *সচেতনতা বৃদ্ধি:* জনগণের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কার্যক্রম পরিচালনা।

 

এছাড়া, আরও কঠোর আইন ও নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে বায়ুদূষণের মাত্রা কমানো সম্ভব হতে পারে, যা চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য শহরের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করবে।