বড়াইগ্রাম উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামের ফরিদা খাতুন (৩০), একজন এনজিও কর্মী, দীর্ঘ ৫ বছরের সংসার জীবন শেষে তার স্বামী আনিসুর রহমানের কাছ থেকে তালাক পেয়েছেন। যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের শিকার হয়ে ফরিদা বর্তমানে তার সংসার ফিরে পেতে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন এবং বিভিন্ন জায়গায় বিচার চেয়ে ঘুরছেন।
ফরিদা খাতুনের সাথে আনিসুর রহমানের বিয়ে হয় ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। বিয়ের সময় ফরিদার বাবা মেয়ে জামাইকে আড়াই লাখ টাকা যৌতুক দিয়েছিলেন। তবে বছর না ঘুরতেই আনিসুর রহমান আরও এক লাখ টাকা যৌতুকের দাবি তুলে ফরিদাকে তালাক দেন। পরে পরিবারের মধ্যস্থতায় তাদের পুনরায় বিয়ে হয় এবং এক লাখ টাকা যৌতুক দেয়ার পর তাদের সংসার আবার শুরু হয়।
তারপরও সংসারের খরচ ও ঋণ পরিশোধের জন্য ফরিদার আড়াই ভরি ওজনের স্বর্ণের গহনা বিক্রি করে আনিসুর রহমানের হাতে তুলে দেন। এছাড়া, ফরিদা এনজিওতে চাকরি করায় তার বেতনের প্রায় পাঁচ লাখ টাকা স্বামীর হাতে তুলে দেন। তারপরও, ২০২৪ সালের শুরুতে আনিসুর রহমান আরো ৪ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। এই দাবির পর, ফরিদাকে মারপিট করে এবং ১৪ এপ্রিল তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে ০৫ মে আনিসুর রহমান তাকে তালাক দেন।
এ ঘটনায় ফরিদা খাতুন বর্তমানে তার সংসার ফিরে পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তিনি বলেন, "আমি শুধু স্বামীর সাথে সংসার করতে চাই, স্বামীর স্বীকৃতিটুকু চাই। আমাকে ভরণপোষণ যতটুকু পারে দিবে, বাঁকিটা আমি নিজেই চালাবো। আপনাদের শুধু আমার সংসারটা ফিরিয়ে দিন।"
অন্যদিকে, আনিসুর রহমান তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, "যৌতুক নেয়া, গহণা বিক্রি বা বেতনের টাকা নেয়া হয়নি। সংসারে বনিবনা না হওয়ায় তালাক দিয়েছি।"
এ বিষয়ে বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, "যেহেতু এ ব্যাপারে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে, তাই বিষয়টি সেখানেই সমাধান হবে।"
ফরিদা খাতুনের এই দীর্ঘ লড়াই তার মতো আরও অসংখ্য গৃহবধূদের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যারা যৌতুকের শিকার হয়ে সংসার এবং সামাজিক সম্মান হারিয়ে ফেলেন। তবে, ফরিদা এখনো তার সংসার ফিরে পাওয়ার আশা নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।