ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ইকুরিয়া থেকে অপহৃত পটুয়াখালী জেলার মৌকরন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী রাইসুল ইসলাম ওরফে সেলিম (৪৫) কে উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)-মিরপুর বিভাগ। একই সঙ্গে অপহরণকারী চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো:
1. মোহাম্মদ ফরহাদ (৩৪),
2. তৌফিক রাহাত (২০),
3. রিপন মাহমুদ নয়ন (২৭),
4. মোঃ আমির হোসেন (৬৫),
5. মোহাম্মদ দিদার (২৫)।
ঘটনার বিস্তারিত:
ভিকটিম কাজী রাইসুল ইসলাম ওরফে সেলিম ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে পটুয়াখালী থেকে গ্রীন লাইন পরিবহনের একটি বাসে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। ১ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে সকাল ৬টার দিকে, সেলিম তার স্ত্রীকে ফোন করে জানায় যে, বাসটি ইকুরিয়া বিআরটিএ এর কাছে পৌঁছালে অজ্ঞাত ১৫-২০ জন লোক বাসে উঠে সেলিমকে জোরপূর্বক বাস থেকে নামিয়ে একটি প্রাইভেটকারে করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।
অপহরণকারীরা সেলিমের স্ত্রীকে ফোন করে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে এবং না দিলে তাকে মারার হুমকি দেয়। এরপর থেকে সেলিমের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সেলিমের স্ত্রী আত্মীয়-স্বজনসহ গ্রীন লাইনের কাউন্টারে গিয়ে বাসের ড্রাইভার ও হেলপারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তারা জানায় যে, বাসটি ১ জানুয়ারি ২০২৫ রাত ৩:৩০ টায় ইকুরিয়া বিআরটিএ এর সামনে থামলে, একজন যাত্রী বাস থেকে নেমে যায় এবং অজ্ঞাত ১৫-২০ জন লোক বাসে উঠে সেলিমকে জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে যায়।
ডিবি পুলিশ অভিযান:
এ তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি মিরপুর বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ, গাড়ি চুরি প্রতিরোধ ও উদ্ধার টিম একটি অভিযান পরিচালনা করে এবং সেলিমকে উদ্ধার করে। একই সাথে অপহরণকারী চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে অপহরণের ঘটনায় ব্যবহৃত প্রাইভেটকারসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের বক্তব্য:
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ফরহাদ জানান, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে অপহরণকারী চক্রের সদস্য পান্নু ফোন করে তাকে ইকুরিয়া আসতে বলে। পান্নুর ফোন পেয়ে ফরহাদসহ তৌফিক রাহাত ও রিপন মাহমুদ নয়ন ইকুরিয়া পৌঁছান। তারা এসে দেখে, একজন লোককে গ্রীন লাইন বাস থেকে পান্নু এবং ১৫-২০ জন লোক টেনে হিঁচড়ে নামাচ্ছে। পান্নুর নির্দেশনা অনুযায়ী, তারা সেলিমকে একটি প্রাইভেটকারে উঠিয়ে হাসনাবাদে নিয়ে যায়। তবে, পথিমধ্যে ফরহাদকে নামিয়ে দেওয়া হয়।
গ্রেফতারকৃত আমির হোসেন জানায়, পান্নু শেখের কথামতো সেলিমকে তার বিল্ডিংয়ের ২য় তলার একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল। অপহরণকারীরা সেলিমের পরিবার থেকে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে এবং পরে বিভিন্ন বিকাশ নাম্বারের মাধ্যমে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে।
অপহরণের পর নির্যাতন:
ডিবি মিরপুর বিভাগ সূত্রে জানা যায়, অপহরণের পর সেলিমকে দুই রাত আটকে রেখে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন করা হয়।
আইনানুগ ব্যবস্থা:
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় এবং শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তাদের আদালতে প্রেরণ করা হবে। পাশাপাশি, তদন্তের জন্য পুলিশ আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
এই ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করেছে যে, পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থার দ্রুত পদক্ষেপে অপরাধী চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করা সম্ভব এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।