বুধবার, ফেব্রুয়ারী ৫, ২০২৫

ভুয়া নিয়োগে একই প্রতিষ্ঠানে একাধিক শিক্ষকের চাকরি

নাজমুল আদনান, টাংগাইল

প্রকাশিত: ০৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০১:০২ পিএম

ভুয়া নিয়োগে একই প্রতিষ্ঠানে একাধিক শিক্ষকের চাকরি

টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ' ভুয়া নিয়োগে’ চাকরি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। 


এছাড়া আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম এসব নিয়োগ জালিয়াতি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।  


জানা গেছে, ২০০২ সালে উপজেলার ঘেচুয়া বড়চালা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। ২০১০ সালের ২০ জুন থেকে ২০১৫ সালের ১৪ই অক্টোবর পর্যন্ত বিদ্যালয়টি বন্ধ থাকে এবং পুনরায় চালু হলে ২০২২ সালে এমপিও ভুক্ত হয়।


এসব নিয়ে সখিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের এক দাতা সদস্য। সেখানে উল্লেখ আছে, প্রতিষ্ঠানের বর্তমান প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম ২০১৮ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি নিয়োগপ্রাপ্ত হন। অথচ নিয়োগ পত্রে দেওয়া সভাপতির স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। এছাড়া রেজুলেশনে সাক্ষরসহ যাকে সদস্য সচিব দেখানো হয়েছে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের কেউ নন এবং তিনি কোনো রেজুলেশনে স্বাক্ষর করেননি বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।


এছাড়া একই প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষক (গণিত) শারমিন আক্তার সুমিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর। যার রেজুলেশনে সভাপতির স্বাক্ষর জাল ও সদস্য সচিব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম। তার নিয়োগ পত্রে আমিনুল ইসলাম প্রধান শিক্ষক হিসেবে স্বাক্ষরও করেছেন। অথচ আমিনুল ইসলাম প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ২০১৮ সালে।


একই পত্রিকায় প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আমিনুল ইসলাম প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নিয়ে আঁখি চক্রবর্তীকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দেন। যার রেজুলেশনে সভাপতির স্বাক্ষর জাল এবং আমিনুল ইসলাম নিজেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে রেজুলেশনে স্বাক্ষর করেছেন।


২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর করা অডিট ফাইলে আমিনুল  ইসলাম নিজেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেখিয়ে স্বাক্ষর করেছেন এবং ২০০৫ সালের ১৮ জুন ওই বিদ্যালয়ে যোগদানের তারিখ উল্লেখ করেন।


এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্ত করনের জন্য দেওয়া শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের প্রেক্ষিতে দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটিও জাল। ২০০৪ সালের ২৫ মে দেখানো পত্রিকার কাটিং মূল পত্রিকার কোথাও নেই। অর্থাৎ এটি স্পষ্ট জালিয়াতি।


এ বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে ১১ জন শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগ বোর্ডে সভাপতি হিসেবে দেখানো হয়েছে মো. রেজাউল করিমকে। যার স্বাক্ষরও জাল। অনুসন্ধান বলছে, এ বিদ্যালয়ে রেজাউল করিমের সভাপতিত্ব কাল ২০০৭ সালের ২৮ জুন থেকে ২০১০ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত। 


এছাড়া ২০০৪ সালে এসকল পদের নিয়োগ পত্রে প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষরও জাল। যার রেজুলেশনে সদস্য সচিব দেখানো হয়েছে প্রধান শিক্ষক শামছুল আলমকে। অবসরে যাওয়া এ শিক্ষক জানান, তিনি কোনো রেজুলেশন স্বাক্ষর করেনি।


এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এসব অভিযোগ মিথ্যে দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, কোন স্বাক্ষর জাল করা হয় নি। একটি অসাধু চক্র আমাদের বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে লেগেছে।


এ বিষয়ে সখিপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তিনি অবগত নন। তবে এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সখিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল রনী জানান, কেও যদি এ বিষয়ে অভিযোগ করেন আমরা তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।