সোমবার, এপ্রিল ২১, ২০২৫

মহেড়ায় বাউবি ইতিহাস বিভাগের শিক্ষা সফর 

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৩:০২ পিএম

মহেড়ায় বাউবি ইতিহাস বিভাগের শিক্ষা সফর 

 

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের উদ্যোগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) টাঙ্গাইলের মহেড়া জমিদার বাড়িতে শিক্ষা সফর অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাড়িটি ঔপনিবেশিক বাংলার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে টিকে আছে। 

১৮৯০ দশকের বেশ আগে জমিদার বাড়ীটি নির্মাণ করা হয়েছিল। স্পেনের করডোভা নগরীর আদলে এটিকে গড়ে তোলা হয় বলে প্রত্নতাত্ত্বিকরা ধারণা করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় আক্রান্ত হলে জমিদার পরিবারের অনেকে নৌপথে দেশ ত্যাগ করেন। এরপর এখানে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিল।

পরে জমিদার বাড়ীটি ১৯৭২ সালে পুলিশ ট্রেনিং স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন পর ১৯৯০ সালে সেই পুলিশ ট্রেনিং স্কুলকে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে উন্নীত করা হয়। এখানকার স্থাপনার পাশাপাশি ছোট্ট পরিসরের জাদুঘরে এখনও এসব স্মৃতি সংরক্ষিত রয়েছে। 

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষাক্রমে বাংলাদেশের সামাজিক সাংস্কৃতিক ইতিহাস, বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও প্রত্নতত্ত্ব সম্পর্কিত কয়েকটি কোর্স রয়েছে। এই বিষয়টি সামনে রেখে ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে টাঙ্গাইলের বিখ্যাত মহেড়া জমিদার বাড়িকে শিক্ষা সফরের জন্য বেছে নেওয়া হয়। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ এটিই প্রথম শিক্ষাসফর।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা আঞ্চলিক কেন্দ্র থেকে সকাল সাড়ে ছয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি বাসযোগে শিক্ষা সফর শুরু হয়। ঢাকার বিভিন্ন স্পট থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বাস দুটি সকাল ৮টায় গাজীপুর মূল ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়। শিক্ষার্থীরা তাদের প্রাণের বাউবি মূল ক্যাম্পাসে কিছুক্ষণ ফটোসেশন ও ঘোরাঘুরি করেন। 

যাত্রাবিরতি শেষে বাস দুটি মহেড়ার উদ্দেশ্যে পুনরায় যাত্রা করে উৎসাহ-উদ্দীপনা আর উৎসবমুখর পরিবেশে উল্লাসিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে বাস দুটি গিয়ে থামে মহেড়া জমিদার বাড়ির সামনে। প্রবেশ পথের বামপাশে ‘বিশাখা সাগর’ নামের বিশাল দীঘিটি দেখে আপ্লুত হয় সবাই। তারপর বাড়িতে প্রবেশের ২টি সুরম্য গেট  বিস্ময়ে হতবাক করে সকলের। 

ইতিহাস বিভাগের প্রথিতযশা শিক্ষক খান মো. মনোয়ারুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলের বেশিরভাগ জমিদারবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছিল নদীকে কেন্দ্র করে। এসময় উদাহরণ হিসেবে মহেড়া জমিদারবাড়ির মূল ভবনে পিছনের দিকে অবস্থিত পাসরা পুকুর ও রানী পুকুর নামের দুইটি পুকুরের উল্লেখ করেন’। 

দেশি বিদেশী বিভিন্ন গাছ-গাছালির পাশাপাশি জমিদারবাড়িটির শোভাবর্ধনে তৈরি করা হয়েছে অনিন্দ্যসুন্দর ফুলের বাগান। বিশাখা সাগর সংলগ্ন দক্ষিণ দিকে চোখে বেশ বড় আমের বাগান। এখানকার তিনটি প্রধান ভবনের সাথে রয়েছে নায়েব সাহেবের ঘর, কাছারি ঘর, গোমস্তাদের ঘর, দীঘিসহ ও আরো তিনটি লজ। এখানে সেই ১৮৯০ সালে নির্মাণ করা একটি ফোয়ারাও রয়েছে। 

বাউবির আরেকজন শিক্ষক আদনান আরিফ সালিম বলেন, ‘কালীচরণ লজ, মহারাজ লজ, আনন্দ লজ, রানীমহল এবং চৌধুরী লজ এই জমিদার বাড়ির মূল আকর্ষণ। এখানকার প্রায় সবগুলো স্থাপন্য অনন্য সব আইওনিক এবং করিন্থিয়ান স্তম্ভের উপর নির্মাণ করা। এখানকার নানা স্থানে থাকা পেডিমন্ট, পোর্চ, পোর্টিকো, টেরেস, ব্যালকনি ও ঝারোখা ঔপনিবেশিক আমলে নির্মিত অভিজাত জমিদার বাড়িগুলোর কথা স্মরণ করিযে দেয়। ওদিকে পাশড়া পুকুরের মধ্যে নির্মিত ছোটখাট স্থাপনাগুলোও এর আভিজাত্যের স্মারক ’। 
বিভিন্ন ব্যাচের পক্ষ থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থী এই শিক্ষা সফরের আয়োজক হিসেবে অক্লান্ত শ্রম দিয়েছেন। এর মধ্যে সৈকত, সাকিব এবং তমাল মূল দায়িত্ব পালন করেন। এই শিক্ষা সফরের অনন্য দিক হচ্ছে, ইতিহাস বিভাগের প্রথম ব্যাচ থেকে শুরু করে শেষ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অনেকেই এই সফরে উপস্থিত ছিলেন।