সোমবার, এপ্রিল ২১, ২০২৫

ময়মনসিংহ বিভাগে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৩:০২ পিএম

ময়মনসিংহ বিভাগে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব

 

ময়মনসিংহ বিভাগের নদ-নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। এতে নদীর তীর ভেঙে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে বহু পরিবার। অভিযোগ জানিয়েও মিলছে না প্রতিকার। প্রশাসন বলছে, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান চলছে।

ময়মনসিংহ নগরীর কিসমত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বালু উত্তোলনের বিশাল কর্মযজ্ঞ। একের পর এক অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু, যা পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছে কয়েকশো ট্রাক।


ব্রহ্মপুত্র নদে দিনের বেলায় প্রকাশ্যে এই কার্যক্রম চলছে। নগরীর পুলিশ লাইন থেকে সদরের ঘুন্টি, কিসমত হয়ে বেগুনবাড়ি ঘাট পর্যন্ত অর্ধশতাধিক ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এসব বালু সড়কের পাশে রেখে বেচাকেনাও চলছে।


জেলার ১৩টি উপজেলায় কয়েকশ ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার কারণে তীর ভাঙছে এবং বসতভিটা ও ফসলি জমি হারাচ্ছেন মানুষ।


নুরজাহান আক্তার নামে কিসমত এলাকার এক নারী বলেন, ‘বালু তোলার কারণে প্রতিনিয়ত তীর ভাঙছে। বাড়ির অনেক অংশ নদীতে চলে গেছে। বাধা দিলে তারা মারধর করতে আসে। পাইপলাইন বাড়িঘরের ভেতর দিয়েই নিয়েছে।’


কল্যাণপুর এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও দিনরাত বালু উত্তোলন চলছে। মাঝে মাঝে প্রশাসন অভিযান চালালেও পরে আগের মতোই সব চলতে থাকে। ধুলাবালু বাতাসে উড়ে ঘরবাড়ি নষ্ট হচ্ছে। অনেকে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন।’


ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর ও জামালপুরেও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। শেরপুরের সব নদীতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে রাতের আঁধারে বালু তোলা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নজর এড়াতে রাতভর বালু পরিবহন করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।


জামালপুরের যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও ঝিনাইসহ ছোট-বড় নদীগুলোতেও একই চিত্র। নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ঘরবাড়ি, বাজার, সেতু ও মহাসড়ক ঝুঁকিতে পড়েছে। নদী ভরাট হয়ে খালে পরিণত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।


ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, ‘আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে ড্রেজার জব্দসহ জরিমানা করছি। তবুও যদি আরও কেউ থেকে থাকে তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা হবে।’


প্রশাসনের তথ্য মতে, গত এক মাসে অবৈধ বালু উত্তোলনের ঘটনায় ময়মনসিংহে ৩ লাখ, জামালপুরে ৫ লাখ এবং শেরপুরে ১৪ জনকে সাজাসহ ৮ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।