ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের সেতারা (চেত্রা) নদীর দুই পাড়ের ১৭ গ্রামের কয়েক লক্ষাধিক মানুষের প্রায় ৫৪ বছর কেটে গেছে একটি সেতুর আশায়।একটি স্থায়ী সেতুর জন্য অনেক জনপ্রতিনিধিরা বার বার আশ্বাস দিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। সেতুবিহীন অরুয়াইল-পাকশিমুল ২ ইউনিয়নের ১৭ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষসহ গ্রামগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে ‘সেতরা’ (চেত্রা)নামক তিতাসের একটি শাখা নদী। নদীর দু’পাড়ের মানুষদের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা শুধুই বাঁশের (সাঁকো) ব্রিজটি।
অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজ অরুয়াইল বাজারে গড়ে ওঠায় সেতরা (চেত্রা) নদীর দক্ষিণ-পশ্চিম পাড়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের কষ্টের কারণ দীর্ঘ এই বাঁশের (সাঁকো)ব্রিজ। এ সাঁকো ব্রিজের উপর দিয়ে যাতায়াত করে বছরে ৭ মাস ও প্রতিদিন প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ এবং প্রতিদিন প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার মানুষ এ ব্রিজের উপর দিয়ে যাতায়াত করে।
জানা যায়, ১৯৯৭ সালে রানিদিয়া সরাইল উপজেলার গ্রামের রহমত আলী ও মজর মিয়া প্রায় দুই লাখ টাকা ব্যয়ে প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে উপজেলার অরুয়াইল বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সেতারা নদীতে (ছেত্রা নদী) বিশালাকৃতির এই বাঁশের ব্রিজটি নির্মাণ করেছিলেন। এরপর থেকে প্রতি বছর নভেম্বর মাসে প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা খরচ করে এই বাঁশের ব্রিজটি পুননির্মাণ করা হয়। শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ৭ মাস লোকজন এই বাঁশের ব্রিজ দিয়ে পারাপার হয়। জুনের মাঝামাঝি বর্ষায় পানি এলে ব্রিজটি আবার ভেঙে ফেলা হয়।ফলে নদীর ওপর ৭০০ ফুট লম্বা ও ৬ ফুট প্রশস্ত বাঁশের ব্রিজ দিয়ে দুই পাড়ের মানুষ শুষ্ক মৌসুমে চলাচল করলেও বর্ষা মৌসুমে তাদের দুর্ভোগের কোনো সীমা থাকে না। ফলে শিক্ষা, কৃষিসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন একাধিকবার আশ্বাস দিলেও স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও সেতারা নদীর উপর নির্মিত হয়নি কোনো পাকা ব্রিজ। ফলে উপজেলার অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নের লোকজনকে ৭শ’ ফুট লম্বা বাঁশের ব্রিজ দিয়েই প্রতিদিন চলাচল করতে হয়। ব্রিজ না থাকায় পোহাতে হয় জনদুর্ভোগ।
স্থানীয় লোকজন জানান,সরাই পাকশিমুল ও অরুয়াইল গ্রামের নদীর ওপরে একটি সেতু ৫৪ বছরেও হচ্ছে না। বিগত সরকারের আমলে একাধিক নেতা ও জনপ্রতিনিধি প্রশাসনসহ বহুবার স্বপ্ন দেখালেও তা বাস্তবে রুপান্তর হয়নি।এ দুর্ভোগ লাঘবে আজ থেকে প্রায় ২৮ বছর আগে ২ জন ব্যাক্তির উদ্যোগে গ্রামবাসীর নিজস্ব অর্থায়নে ছেত্রা নদীর ওপর অরুয়াইল-পাকশিমুল সংযোগ বাঁশের ব্রিজ তৈরি করা হয়। বছরের কার্তিক মাস থেকে শুরু হয়ে জৈষ্ঠ্য মাস পর্যন্ত সাত/আট মাস গ্রামবাসীকে এ বাঁশের ব্রিজ দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পারাপার করতে হচ্ছে।প্রতিদিন অন্তত ১০/১২ হাজার মানুষ এই বাঁশের ব্রিজ দিয়ে আসা যাওয়া করছেন। এছাড়াও মোটরবাইক ও অটোরিকশাসহ স্থানীয় যান চলাচল করে প্রায় পাঁচশত।অরুয়াইল ইউনিয়নের যতগুলো গ্রাম আছে, প্রতি গ্রামের একজন করে মোট ১৫/১৬ জনকে এই বাশের ব্রিজটিকে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা নিজ উদ্যোগে প্রতি বছর ব্রিজটি নির্মাণ করেন।
গ্রামের এক স্থানীয় বাসিন্দা মো: সজল বলেন, বর্ষাকালে যাতায়াতের উত্তম মাধ্যম হিসেবে নৌকা ব্যবহার করা হলেও শুষ্ক মৌসুমে আমাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই বাঁশের সাঁকো ব্রিজটি। বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধিরা এখানে স্থায়ী সেতুর প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো তা বাস্তবায়িত হয়নি। সেতুর অভাবে শিক্ষা স্বাস্থ্য ও ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে এ অঞ্চলের মানুষ।
অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের মোশাররফ হোসেন বলেন, বাঁশের সাঁকো ব্রিজ দিয়ে দুটি ইউনিয়নের ১৭ গ্রাম ও আশেপাশের জেলা উপজেলা থেকে আসা লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ কবে শেষ হবে তা আমার জানা নেই।অনেক বার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনও আলোর মুখ দেখেনি। পৌকশলী ও প্রশাসন একাধিকবার এসে দেখে গেছে কিন্তু তা কার্যকর করা হয়নি।এখানে যদি স্থায়ীভাবে সেতু করে দেয় তাহলে আমাদের এলাকার মানুষ এ দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেত। এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ এমদাদুল হক জানান,চেত্রা নদীর ব্রিজটির এখনো অনুমোদন হয়নি।একটি প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জনদুর্ভোগ লাঘবে চেত্রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অনুমোদন পেলেই আমরা কাজ শুরু করব।