সব ধরনের সুযোগ সুবিধা নিয়ে নির্মাণের ৬ বছরেও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল বিসিক শিল্পনগরীর কার্যক্রম চালু হয়নি। চোরের কবলে পড়ে এক রকম অরক্ষিত এ শিল্পনগরীর মহামূল্যবান বিদ্যুতের ৭টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে গেছে।
প্লটের অস্বাভাবিক দাম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগের অভাবসহ নানা সমস্যায় অচল এ শিল্পনগরী। তবে সংকট সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের কথা জানাল কর্তৃপক্ষ। চা শিল্পের সমৃদ্ধ উপজেলা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। এ জেলার শিল্পোদ্যোক্তাদের চাহিদার লক্ষ্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলার উত্তরসুর এলাকায় গড়ে তোলা হয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পভিত্তিক বিসিক শিল্পনগরী।
বিসিক কর্মকর্তাদের জন্য নির্মিত হয় নানা সুবিধাসম্বলিত একাধিক ভবন, কোয়াটার মসজিদ পুকুরসহ দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। সেই সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয় বিদ্যুৎ গ্যাস পানি সরবরাহের সুযোগ সুবিধা। তবে শুরুতে প্রচার-প্রচারণার অভাব, লোকবল সংকট ও প্লটের অস্বাভাবিক দাম থাকায় শিল্পোদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করা যায়নি। তাছাড়া প্লটের অস্বাভাবিক দাম থাকায় স্থানীয় পর্যায়ের কোনো শিল্পোদ্যোক্তা প্লট কিনতে আগ্রহী হয়নি। এতে এ শিল্পনগরীর কোনো প্লট বরাদ্দ যায়নি। তবে ৪ বছর পর ২০২৩-২০২৪ সালের একদম শেষের দিকে শুধুমাত্র কাগজপত্রে ৫৬টি প্লট জেলার বাইরের কিছু শিল্পদ্যোক্তার কাছে বরাদ্দের কথা জানা গেছে।
তবে এসব প্লটের শিল্পদ্যোক্তাদের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। এরইমধ্যে এ শিল্পনগরীর বিদ্যুতের মূল্যবান ৭টি ট্রান্সফরমার চুরি গেছে। এতে বিগত কয়েক বছর ধরে পুরো শিল্পনগরী বিদ্যুৎহীন অবস্থায় পড়ে আছে। পাশাপাশি শিল্প নগরীর গ্যাস সংযোগ লাইনের পাইপ চোর চক্র কেটে নিয়ে গেছে। পুরো বিসিক শিল্পনগরী এলাকা বুনো গাছপালা আগাছায় ডেকে রয়েছে। তদারকির অভাবে নির্মিত ভবন কোয়ার্টারসহ অন্য অবকাঠামোগুলো অকেজো হয়ে পড়ছে। সম্প্রতি অতিরিক্ত কর্মকর্তা হিসেবে একজনকে শ্রীমঙ্গল বিসিকে প্রশাসনিক নিয়োগ দেয়া হলেও মূলত একজন নৈশপ্রহরী ২০ একরের বিশাল এ শিল্প প্রতিষ্ঠানটির দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন।
নৈশপ্রহরী বিশ্বজিত জানান, বিশাল এ প্রতিষ্ঠানটিকে একাই তিনি দেখভাল করতে হচ্ছে। একাধিকবার রাতে ডাকাতের হামলায় পড়েছেন। এম এ রকিব নামে এক শিল্পেদ্যোক্তা ক্ষুব্ধ হয়ে শ্রীমঙ্গল বিসিকের এ অবস্থার জন্য প্রশাসনকে দায়ী করলেন।
অপর এক উদ্যোক্তা মিন্টু জানান, তিনি প্রথমে একটি প্লট নিলেও বিসিকের কোনো সুযোগ সুবিধা না থাকায় তা ফিরিয়ে নেন। বর্তমানে কাগজে কলমে প্লট নেয়া শিল্পোদ্যোগক্তাদের সবাই বাইরের জেলার। স্থানীয়ভাবে কেউ নেই।
এদিকে বিসিক শিল্পনগরীর অতিরিক্ত কর্মকর্তা মুনায়েম ওয়ায়েদ জানান, বিদ্যুৎ সংযোগ, নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করার কথা।
তবে এ শিল্পনগরী সচল করতে সব ধরনের সহায়তার উদ্যোগ নেয়ার কথা জানালেন নবনিযুক্ত শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন। চা শিল্প সমৃদ্ধ উপজেলা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের সম্ভাবনাকে লক্ষ্য রেখে ২০১৯ সালে ১১৯টি প্লটের শিল্পনগরী গড়ে তুলতে, প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়।