ফেনী শহরের সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি বৈদ্যুতিক খুঁটি, ল্যাম্পপোস্ট, সড়ক ডিভাইডারের গাছসহ সর্বত্রই পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ডে ঢাকা পড়েছে। চোখ মেললেই শহরের প্রতিটি স্থানে দেখা মেলে প্রাতিষ্ঠানিক, রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক ও ধর্মীয় আয়োজনের প্রচারণামূলক বিজ্ঞাপন। এ যেন বিজ্ঞাপনের শহর। সুযোগ পেলেই যত্রতত্র লাগানো হচ্ছে নানা ধরনের বিজ্ঞাপন। এতে যেমন নষ্ট হচ্ছে শহরের সৌন্দর্য, তেমনি তৈরি হচ্ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের মহিপাল থেকে ট্রাংক রোড, মিজান রোড, কলেজ রোড, মুক্ত বাজার, নাজির রোডসহ প্রধান সড়কগুলোর বেশিরভাগ অংশ ব্যক্তি পর্যায়ের ছবি সম্মিলিত পোস্টার ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার, হাসপাতাল ও দোকানের বিজ্ঞাপনী পোস্টারে সয়লাব। যত্রতত্র লাগানো এসব ব্যানার-পোস্টার সরিয়ে ফেলার দাবি করছেন পথচারীরা। সেই সঙ্গে সড়কে থাকা ব্যানার-পোস্টারে গাড়িচালকদের দৃষ্টি সেদিকে যাওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ছে বলে অভিযোগ চালকদের।
শহরের বাসিন্দারা বলেন, যত্রতত্র পোস্টারের কারণে ঘিঞ্জি আর বিশ্রী লাগে। যে যার মতো করে লাগিয়ে দিয়েছে। ৫ আগস্টের আগে পৌরসভা থেকে এসব কঠোরভাবে দেখা হতো। এখন পুরো শহরের সৌন্দর্য ম্লান হয়ে গেছে। প্রশাসন যদি যথাযথভাবে তদারকি করে তাহলে এ সমস্যা সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
নয়ন নামে শান্তি রোড এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, আগে পৌর কর্তৃপক্ষ একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর বিভিন্ন স্থানে লাগানো এসব ব্যানার-পোস্টার অপসারণ করতো। ৫ আগস্টের পর সবাই পালিয়ে যাওয়ায় এখন পুরো শহর যেন অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। কয়েক মাস আগেও সৌন্দর্যের উদাহরণ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এ ফেনী শহরের চিত্র আজ একদম ব্যতিক্রম।
শহরের বাসিন্দারা বলেন, ডিভাইডারে ব্যানার লাগানোর কারণে রাস্তার দৃশ্যমানতা কমে যাচ্ছে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। ব্যানারের অতিরিক্ত চাপ শহরকে অগোছালো ও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। এ ছাড়া জুলাই বিপ্লব নিয়ে শিক্ষার্থীরা শহরজুড়ে বিভিন্ন দেয়ালে গ্রাফিতি করেছিল। সেই দেয়ালগুলোতেও এখন শিক্ষকদের বিজ্ঞাপন আঁকা হয়েছে।
ইব্রাহিম হোসেন নামে এক সিএনজি অটোরিকশাচালক বলেন, রাস্তায় চলাচলের সময় এসব রঙিন ব্যানার-পোস্টারের দিকে দৃষ্টি চলে যায়। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ছে। কিছু জায়গায় ব্যানার-প্ল্যাকার্ডের কারণে রাস্তার একপাশ থেকে অন্যপাশ দেখা যায় না। এটি আমাদের জন্য অনেক বিপজ্জনক।
সড়কে বিজ্ঞাপনী ব্যানার সাঁটানো প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক বলেন, আমরা লোক দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিজ্ঞাপনী পোস্টার লাগিয়েছি। তারা কোথায় কোথায় এসব পোস্টার লাগিয়েছে তা আমাদের জানা নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নেব।
এসব ব্যানার সাধারণত ক্ষতিকর প্লাস্টিক দ্রব্য বা পিভিসি দিয়ে তৈরি, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ ছাড়া শহরের সৌন্দর্য রক্ষায় আমাদের উচিত ব্যানার ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও সচেতন হওয়া। ব্যানারগুলো দ্রুত অপসারণের জন্য পৌরসভাকে উদ্যোগ নিতে হবে।
এ ব্যাপারে কথা হয় পরিবেশ অধিদপ্তর ফেনীর উপ-পরিচালক শওকত আরা কলির সঙ্গে। তিনি বলেন, সরকারি দপ্তরগুলোকে ইতোমধ্যে প্লাস্টিকের ব্যানার ব্যবহার বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে এখনো সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। আমরা পলিথিন বন্ধে কাজ করছি। পর্যায়ক্রমে এ ধরনের পরিবেশ দূষণকারী উপকরণ বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে ফেনী পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মো. আবুজর গিফরী ঢাকা বলেন, বর্তমানে পৌরসভার দায়িত্বে একজন প্রশাসক রয়েছেন। অবাধে লাগানো এসব ব্যানার-পোস্টারের বিষয়টি ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের নজরে আনা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসকের নির্দেশনা পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।