ইসকন নেতা চিন্ময় কাণ্ডে আইনজীবী হত্যায় উত্তাল চট্টগ্রাম, ইসকন নিষিদ্ধের দাবি, আটক ২৭
এডভোকেট সাইফুলের জানাযায় সারজিদ- হাসনাত আব্দুল্লাহ সহ তৌহিদি জনতার জনস্রোত, আদালত বর্জনের কর্মসূচি অব্যাহত
চট্টগ্রামে ইসকন নেতা ও সনাতন সম্মিলিত জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুরের পর আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও আইনজীবীকে হত্যার ঘটনায় ২৭ জনকে আটক করেছে যৌথবাহিনী।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে ঘটনার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নগরীর পাথরঘাটা মাথার পট্টি, আন্দরকিল্লা ও হাজারী গলি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে যৌথবাহিনী।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার যৌথবাহিনীর অভিযানে ২৭ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্য ৭ জন সাইফুল হত্যায় সরাসরি জড়িত ছিলেন।
এদিকে, এডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের তিনটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আইনজীবী চত্বরে অনুষ্ঠিত প্রথম জানেযায় অংশ নিয়েছেন আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অংসখ্য মানুষ। চট্টগ্রাম জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ মাঠে ২য় জানাজায় অংশ নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং নাগরিক কমিটির সদস্য ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। সেখানে জানাজায় অংশ নিতে ঢল নেমেছে লক্ষাধিক মানুষের। অপরদিকে এডভোকেট সাইফুল ইসলাম বাড়িতে তৃতীয় জানাযায় ও ব্যাপক লোকের উপস্থিত দেখা যায়।
জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে তার জানাজা পরে মুসল্লিরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি জমিয়াতুল ফালাহ থেকে শুরু হয়ে নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে অংশ নেন ভূমি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহদাত হোসেন, জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরের আমীর শাহজাহান চৌধুরী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, রাসেল আহমদ, সহ সমন্বয়ক তালাত মাহমুদ রাফি।
এদিকে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে সমাবেশ করেছে চট্টগ্রামের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। বুধবার (২৭ নভেম্বর) নগরের টাইগারপাস এলাকায় এই কর্মসূচি পালন করেন তারা। কর্মসূচি থেকে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, উগ্র হিন্দুত্ববাদী জঙ্গী সংগঠন সাইফুল ইসলাম আলিফ ভাইকে হত্যা করেছে। ভারতে বসেই স্বৈরাচার হাসিনা যত ষড়যন্ত্র করুন না কেন, আমরা রুখে দিব। বাংলাদেশে সকল ধর্মের সহাবস্থান থাকবে। ধর্মের নামে উগ্রবাদীতার এখানে ঠাঁই নেই। ইসকনের বর্বরতা আইয়ামে জাহিলিয়াতকে হার মানিয়েছে। তাই অবিলম্বে ইসকন নিষিদ্ধ করতে হবে।
ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধের দাবি করে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ইসকনের কর্মী সমর্থকদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য দাবি জানিয়েছেন হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা মহিবুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম আদালতে সহকর্মী (আইনজীবী) হত্যার প্রতিবাদে ইসকন নিষিদ্ধ দাবিতে আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়ে কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন আইনজীবীরা। এছাড়াও আগামীকাল বৃহস্পতিবার একই কর্মসূচী চালিয়ে যাবার ঘোষণা দিয়ে ছয় দফা দাবিও করেন আইনজীবী সমিতির নেতারা।
নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতী ইউনিয়নের ফারাঙ্গার এলাকায়। পুরো গ্রামজুড়ে শোকের মাতম চলছে, কাঁদতে কাঁদতে বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন মা। শোকে পাথর হয়ে বেহুশ হয়ে গেছেন স্ত্রী। অনাগত সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারলেন না চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতি পানত্রিশা এলাকার কৃতিসন্তান আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে চালানো সংঘর্ষের সময় চট্টগ্রাম কোতোয়ালী থানার লালদিঘী এলাকায় চট্টগ্রাম আদালত ভবনের প্রবেশমুখে রঙ্গম কনভেনশন হলের পিছনে নিয়ে গিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে তাঁকে।
উল্লেখ্য, গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের মূল ফটকের সামনে সনাতন ধর্মালম্বীর ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার সময় সংঘর্ষ চলাকালীন রঙ্গম সিনেমা হল–সংলগ্ন এলাকায় সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) ছিলেন।