বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৪

শিশু তাসকিয়া জানে না তার বাবা বেঁচে নেই

আলিফের নিজ বাসায় শোকের ভয়াল আবহ

লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম)

প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর, ২০২৪, ০৭:১১ পিএম

শিশু তাসকিয়া জানে না তার বাবা বেঁচে নেই

 



পৃথিবীতে সন্তানের চোখে বাবাই হচ্ছে সবচেয়ে কাছের। সেই শৈশবে বাবার আঙুল ধরে শুরু হয় পথচলা। কৈশোরের দূরন্তপনার সঙ্গী, যৌবনে সাহসের যোগানদার আর সংসার জীবনে একজন দায়িত্ববান পুরুষের ভূমিকা। বাবার শরীর দিয়েই একটি সন্তান অনুভব করতে শেখে যে এই পৃথিবীটা বেঁচে থাকার তাগিদে কতটা শ্রম আর ঘাম ঝরাতে হয়। সন্তানের কাছে বিশ্বাসের আরেক নাম হচ্ছে বাবা, যার হাত ধরে পৃথিবীর সব দুর্গম পথেই পা রাখা যায় অতি আস্থার সাথে। দেড় বছরের শিশু কন্যা মাসুরা ইসলাম তাসকিয়া। মাত্রই হাঁটতে শিখেছে। দুনিয়ার অনেক কিছু তার এখনো অজানা। তবুও তার চোখে যেন বাবাকে দেখার এক ধরনের ক্ষুধা। বাবা, বাবা করে খুঁজে ফেরে তার প্রিয় বাবার মুখ। এখনো সে হয়তো বুঝতে পারেনি, তার বাবাকে সে কখনো দেখতে পাবে না। পাবে না বাবার আলিঙ্গন।

গতকাল মঙ্গলবার রাত ৮ টার দিকে উপজেলা সদরের দরবেশহাট রোডস্থ টেন্ডল পাড়ায় অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের নিজ বাসায় গিয়ে শোকের এক ভয়াল আবহ দেখা গেছে। নিহত আলিফের স্বজনরা বাড়িতে এসে মা–বাবা ও স্ত্রী–সন্তানকে সান্ত্বনা দিতে দেখা গেছে। আলিফের মা–বাবা ও স্ত্রী শোকে মুহ্যমান হয়ে কারো সাথে কথা বলার অবস্থায় নেই। মেয়ে তাসকিয়া স্বজনদের কোলে চড়ে এক রুম থেকে অন্য রুমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাড়িতে আসা নতুন নতুন লোকজনকে ফ্যাল ফ্যাল চোখে দেখছে। অপরিচিত কেউ কোলে নিতে চাইলে যায় না। আদর করার জন্য কোলে নিতে চাইলেও বলে–বাবা আসলে বলে দিব। আর বাবা কোথায় জিজ্ঞেস করলে বলে–বাবা শহরে।

অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের ফুফাতো ভাই মহিউদ্দিন জানান, আলিফরা ৫ ভাই ২ বোন। আলিফ মা–বাবার তৃতীয় সন্তান। ৪ ভাই প্রবাসী। আলিফ প্রায় ৩ বছর আগে উপজেলার সদর ইউনিয়নের দরবেশহাট সওদাগর পাড়ার ইসরাত জাহান তারিনকে বিয়ে করেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে দেড় বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। আলিফদের পৈত্রিক বাড়ি উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের ফারেঙ্গা এলাকায়। প্রায় ১৫ বছর পূর্বে উপজেলা সদরের দরবেশহাট রোডস্থ টেন্ডল পাড়ায় জায়গা কিনে বাড়ি নির্মাণ করে পরিবারের সবাই বসবাস করে আসছেন। সেই বাড়িতেই মা–বাবা সাথে স্ত্রী–সন্তানও থাকেন। প্রতি বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম শহর থেকে লোহাগাড়ায় নিজেদের বাড়িতে আসেন। আর রোববার সকালে কর্মস্থলে চলে যান। আলিফ ছোটবেলা থেকে সাহসী, প্রতিবাদী ও ভালো মনের ছেলে ছিল। তার মামাতো ভাই আলিফ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
এদিকে, অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে রাত ৮টার দিকে লোহাগাড়া উপজেলা সদর বটতলী স্টেশনে তৌহিদী জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিক্ষোভ মিছিলটি উপজেলা সদর বটতলী স্টেশন প্রদক্ষিণ শেষে চৌধুরী প্লাজার সামনে সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মুছা তোরাইন ও এইচ এম তামিম মির্জা। তারা ইসকনকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করার দাবি ও আলিফ হত্যকাণ্ডে জড়িতদের খুঁজে বের করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এছাড়া অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে উপজেলা সদর বটতলী স্টেশনে পৃথক পৃথক একাধিক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়েছে। লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান জানান, এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত লোহাগাড়ায় কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।