বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৪

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ৭৫ হাজার শিক্ষার্থীর অভিভাবককে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার

খোলাচিঠি-

হাবিব জিহাদী, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৭:১২ পিএম

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ৭৫ হাজার শিক্ষার্থীর অভিভাবককে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার

 

 

৭৫ হাজার শিক্ষার্থীর অভিভাবককে লেখা ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার খোলা চিঠি।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং মাদ্রাসাপড়ুয়া ৭৫ হাজার শিক্ষার্থীর অভিভাবককে খোলা চিঠি দিচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। অভিভাবকেরা যেন তাঁদের সন্তানকে কেবল পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর দিয়ে বিবেচনা না করেন, সে জন্য এই চিঠি দেওয়া হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার থেকে এই খোলাচিঠি বিতরণ শুরু হয়।
খোলাচিঠিতে ইউএনও উল্লেখ করেন, ‘ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে আপনার সন্তানের বার্ষিক পরীক্ষা। সব বাবা-মায়েরই স্বপ্ন থাকে, সন্তান খুব ভালো রেজাল্ট করবে, ক্লাসের “টপার” হবে। আপনার সন্তান যদি পরীক্ষায় খুব ভালো নম্বর পায়, তবে সেটি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত আনন্দের। কিন্তু যদি না পায়, তাহলে অনুরোধ থাকবে, তাদের ওপর নিজের বিশ্বাসটুকু হারাবেন না। সন্তানকে আশ্বস্ত করুন, তার নিজের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার ওপর তাকে আস্থা রাখতে বলুন। সে চাইলেই সামনে আরও ভালো করতে পারবে একটুকু আত্মবিশ্বাস তাকে দিন। তাকে বুঝিয়ে বলুন, পরীক্ষার নম্বর নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই, এটি কেবলই একটি ক্লাস পরীক্ষা। জীবনের আরও বহু পথ পাড়ি দিয়ে আরও বহু পরীক্ষার মুখোমুখি তাকে হতে হবে। ক্লাসের এই পরীক্ষাগুলো দিয়ে তাকে ধাপে ধাপে প্রস্তুত করা হচ্ছে কেবলই।


চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘কেবলই পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর দিয়ে সন্তানকে বিচার করা থেকে বিরত থাকুন। আপনার সন্তান নিঃসন্দেহে বহু সুপ্ত প্রতিভার অধিকারী। তার সুপ্ত গুণাবলি বিকাশের সুযোগ করে দিন। তার হাত ধরে তাকে সুন্দর আগামীর পথে আপনি এগিয়ে নিয়ে চলুন।

ইউএনওর দপ্তর থেকে জানানো হয়, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তর থেকে সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসংখ্যা যুক্ত করে চিঠি প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীসংখ্যা অনুযায়ী অভিভাবকদের উদ্দেশে লেখা চিঠিগুলো পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে তাদের অভিভাবকদের কাছে চিঠিগুলো পৌঁছে দেবে।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার বলেন, ‘আমাদের অধিকাংশ অভিভাবকদের সন্তানদের পরীক্ষার রেজাল্টের ওপর প্রত্যাশা থাকে অনেক বেশি। ক্লাসে সবাই ফার্স্ট হবে না এটাই স্বাভাবিক। কেবল পরীক্ষার রেজাল্টই জীবনে সফলতার একমাত্র সংজ্ঞা না। আমাদের প্রতিটা বাচ্চাই প্রতিভাবান। প্রতিটা বাচ্চাই কোনো না কোনো গুণের অধিকারী। তাদের পড়াশোনার পাশাপাশি সেই প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়া প্রতিটা অভিভাবকের কর্তব্য।’
এই উদ্যোগটা নেওয়ার উদ্দেশ্য সম্পর্কে ইউএনও বলেন, ‘আমাদের অভিভাবকেরা যেন তাদের সন্তানকে কেবল পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর দিয়ে বিবেচনা না করেন। এই পৃথিবীর আলো বাতাসে তাদেরকে যেন দুই হাত ভরে নিশ্বাস নিয়ে বেড়ে উঠতে সহযোগিতা করেন। প্রতিটা সন্তানের ওপর অভিভাবকের এই অকুণ্ঠ সমর্থন নিশ্চয়ই তাদের কোনা না কোনোভাবে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেবে বলে আমার একান্ত বিশ্বাস। কেবলই ভালো রেজাল্টের প্রত্যাশার চাপে নয়, পড়াশোনার পাশাপাশি সন্তান বেড়ে উঠুক তার নিজস্ব প্রতিভার সবটুকু বিকাশের ডানা মেলে।