নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের বাজারে শীতের আগাম সবজি আসতে শুরু করেছে বেশ কয়েক সপ্তাহে ধরে। নগরীর প্রতিটি বাজারে প্রবেশ করলে দেখা মিলবে শীতকালীন বাহারি রকমের নানা সবজি। নগরী এবং পাশ্ববর্তী উপজেলাগুলোতে শীতের আমেজ অনুভব হচ্ছে। কৃষকরা ব্যস্ত হয়ে পড়ছে শীতকালীন সবজি ঘরে তুলে বাজারজাতকরণ করতে।
এরই মধ্যে বাজারে আসতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজি কিন্তু দাম এখনোও চড়া। দু-একটি পণ্যের দাম কিছুটা কমলে ও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঊর্ধ্বমূল্য। আর অতিরিক্ত মূল্য নিম্নআয়ের মানুষকে ফেলেছে বেকায়দায়।দ্রব্যমূল্যের এমন বেসামাল পরিস্থিতিতে সংসার চালাতে অনেকেই খাচ্ছেন হিমশিম।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী, আকবর শাহ, চৌমুহনী, কর্ণেলহাট, কাঁচাবাজারসহ বেশ কটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারগুলো শীতকালীন শাক-সবজিতে ভরপুর। বেগুন, শসা, পটোল, বরবটি, লতি, ঢ্যাঁড়শ, কাঁকরোল, পেঁপে, করলা কী নেই! আছে শীতকালীন শিম, গাজর, মুলা, ফুলকপি ও বাঁধাকপিও।
তবে এতসব সবজির সমারোহের পরও দাম ছাড়ছেন না ব্যবসায়ীরা। নাগালের মধ্যে নেই কোনো সবজিই। এতে নাজেহাল অবস্থা সাধারণ মানুষের। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতকালীন সবজি বাজারে আসতে শুরু করেছে।
সরজমিনে বাজার ঘুরে দেখা যায়, নগরের চকবাজার, কাজীর দেউড়ি, বহদ্দারহাট, কর্ণফুলী কাঁচা বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৭০ থেকে ১২০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ১১০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, ফুলকপি ৮০ টাকা, বাঁধাকপি ৭০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, শিম ১২০ টাকা, শিমের বিচি ৩০০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা, টমেটো ১৬০ টাকা, লাউ ৩০-৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ৭০ টাকা, এবং পটল ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ঢেঁড়স কেজিতে ২০ টাকা কমে ৭০ টাকা, শসা ৬০-৭০ টাকা ও গাজর ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছ মাংস।ব্রয়লার ১৮০ ও সোনালি ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৩১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সোনালি মুরগি।
১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এক ডজন ডিম। মাছের মধ্যে পোয়া ২৮০, লইট্টা ২০০, পাবদা ৪০০-৪৫০, রূপচাঁদা ৫৫০-৬৫০, তেলাপিয়া ১৮০-২২০, পাঙাস ১৭০-২০০, রুই ৪০০, কাতল ৩৫০, চিংড়ি ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
শীতকালীন সবজির মধ্যে শুধু ফুলকপি-বাঁধাকপির দাম কিছুটা কমতির দিকে দেখা গেছে। ফুলকপি মানভেদে প্রতিকেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহেও ১২০ টাকার মতো ছিল। আর বাঁধাকপি মানভেদে ৬০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া শীতকালীন সবজি মানভেদে ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা, শিম ১৪০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ৭০ টাকা, ধনে পাতা ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। লাউ, ঝিঙা, পটোল, বরবটি, করলা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, কচুরমুখী, বেগুন বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে।
নগরীর পাহাড়তলী বাজারের দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ক্রেতারা আসছেন আর দাম শুনে তর্কে জড়াচ্ছেন দোকানির সঙ্গে। এক দোকান থেকে আরেক দোকান আরেক দোকান থেকে আরেক দোকান ঘুরেই কাটিয়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ, এচিত্র চট্টগ্রামের বেশিরভাগ বাজারে। কেউ আবার বাজারে কম দামে না পেয়ে গলির ভেতরে ফুটপাথ ও ভ্যানে বিক্রেতার কাছে ছুটছেন।
এদিকে নগরীর হালিশহর এলাকার বাসিন্দা রবিউল হোসেন অভিযোগ করেন, দিনকে দিন বাজারে দাম যেন বেড়েই যাচ্ছে। কদিন আগে সাধারণ মানুষের খাবার ডিমের দাম ছিল বাড়তি। এখন শীতের সবজিতে বাজার ভর্তি অথচ দাম বেশি, এমন দাম বৃদ্ধি হলে কিভাবে সংসার চালাবো আমরা।
বাজার করতে আশা বেলাল চৌধুরী বলেন, আমি কম বেতনে চাকরি করি, বাজারে এসে দেখি প্রতিটির পণ্যের দাম অনেক বেশি। আগে এক কেজি কিনতাম এখন সেখানে অর্ধেক নিতে হচ্ছে। আমাদের আয় তো বাড়েনি। তাই চাহিদা কমিয়ে দিয়েছি। এক মুঠি শাক দশ টাকা দিয়ে কিনেছি এখন ২০ টাকা। এক মুঠিতে এতো কম যে একারই হয়না। ৪০ টাকা দিয়ে শাক কিনে পুষ্টি কতটুকু পাব বলেন আপনি।
বাজার ঘুরে কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, বাজারে সবজির আমদানি বেশ থাকলেও গত দুই এক দিনের ব্যবধানে দাম খুব একটা কমেনি। বরং কিছু কিছু পন্যের দাম খানিকটা বেড়েছে। আসলে বাজারে সবজির সরবরাহ খুব ভালো, এই মাসের মধ্য সবজির দাম কমে আসতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট কাজ করে, আমি মনে করি স্থানীয় প্রশাসন বাজার তদারকি করার দরকার। অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় সবজির দাম বেশি রাখে।।