সায়মুন শেখ
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামের বেশির ভাগ এলাকা বর্ষাকালে পানিতে তলিয়ে যায়, শীতকালে ধুলাবালি, শিল্পবর্জ্য, পাহাড় কাটায় মাটি ক্ষয়, কলকারখানার কালো ধোঁয়ায় ক্রমাগত বায়ু দূষণে বাতাস ও পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে উঠছে।
বায়ূ দূষনের মূল উৎস ইস্পাত খাতের অধিকাংশ কোম্পানির অবস্থান চট্টগ্রাম নগরী ও আশেপাশের এলাকায় হওয়ায় দূষণ দিন দিন বেড়েই চলছে। এসব কারখানার অধিকাংশই প্রতিনিয়ত নানাভাবে পরিবেশের ক্ষতি ও দূষণ করছে। কেউ সম্প্রসারণের জন্য কাটছে পাহাড়, আবার কেউ দূষণে বিপর্যস্ত করছে পরিবেশ যা মানবস্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে অনেকটাই নিরুপায় পরিবেশ অধিদপ্তর।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে ইস্পাত খাতের কোম্পানিগুলোর সংখ্যা বেশি। এসব কোম্পানির মধ্যে বড় ইস্পাত কোম্পানি বিএসআরএম স্টিল মিলস লিমিটেড, বিএসআরএম স্টিল অ্যান্ড আয়রন কোম্পানি লিমিটেড, কেএসআরএম স্টিল মিলস লিমিটেড, আবুল খায়ের স্টিল প্রোডাক্টস লিমিটেড, বায়েজিদ স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, সীমা অটোমেটিক রি-রোলিং মিলস লিমিটেড, পিএইচপি স্টিল কমপ্লেক্স লিমিটেড, সিএসএস করপোরেশন, সালেহ স্টিল, শীতলপুল অটো স্টিল মিলস লিমিটেড, এহসান রি-রোলিং মিলস লিমিটেড, ইসলাম স্টিল, শফিকুল আলম স্পেশাল স্টিল মিলস লিমিটেড, মডার্ন স্টিল মিলস লিমিটেড, মাস্টার স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড, বেন্জ ইন্ডাস্ট্রিজ (বিডি) লিমিটেড প্রভৃতি কারখানা প্রতিনিয়ত নানাভাবে পরিবেশের ক্ষতি ও দূষণ করছে। এসব কোম্পানি কাঁচামাল পোড়ানোর প্লান্ট থেকে বেশি দূষিত বায়ু ছড়াচ্ছে।
শুধু ইস্পাত কারখানা গুলোই নয় লাগামহীণ বিভিন্ন সিমেন্ট কারখানাগুলোর কারণেও বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। জনজীবন বসবাসের অযোগ্য করে তুলছে কারখানাগুলো। ফলে ওইসব এলাকা বসবাসরত জনসাধারণ ফুসফুসে ক্যান্সার, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। সিমেন্ট কারখানার ক্ষতিকর ধূলিকণা বায়ুর মাধ্যমে পরিবেশের সঙ্গে মিশে কাঁচামাল মিশ্রণের ফলে সিমেন্ট তৈরি হয়। তাই এসব ধূলিকণা বিষাক্ত হয়ে থাকে। আশপাশের পরিবেশ, জীববৈচিত্র, কৃষিজমি ও ফসলের মারাত্মক ক্ষতি করে। প্রতিদিন কারখানাগুলোয় শত শত ট্রাক সিমেন্টের মূল কাঁচামাল ক্লিংকার আনা হয়। এসব ক্লিংকার ট্রাক থেকে নিচে ফেলার সময় চারদিক ধুলায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ট্রাক থেকে সরাসরি প্লান্টে ফেলা হলে এ ধুলার সৃষ্টি হতো না। প্যাকিং যেখানে হয়, সেখানে ধুলা হয় বেশি। বড় বড় পাথর আকৃতির ক্লিংকার ভাঙিয়ে গুঁড়াকরণ প্রক্রিয়ায়ও ধুলার সৃষ্টি হয়। এসব ধূলিকণা শ্বাসনালী দিয়ে প্রবেশ করলে হাঁপানীসহ ফুসফুসে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।
এছাড়াও বছরজুড়ে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে অতিষ্ঠ নগরবাসী। উন্নয়নমূলক কাজে নগরবাসীর জীবন'ই যেন ঝুঁকির সম্মুখীন। খোড়াখুড়ির কাজে পুরো নগরীতে বাতাসের সাথে ছড়িয়ে ধূলা বালিগুলো নিঃশ্বাসের সাথে মানবদেহে প্রবেশ করে স্বাস্থ্য ঝুঁকি দিন দিন বাড়িয়ে দিচ্ছে। এসব ধুলাবালি শুধু জনজীবন অতিস্ট করার সাথে সাথে নিয়মিত পরিবেশকে ও দূষন করছে। গ্রীন সিটি নগরী যেনো পরিনত হয়েছে এক ধূলোর শহরে।
সচেতন মহল বলছেন, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে ভোগান্তির মুখে পড়েছেন নগরবাসী। বর্ষায় খানাখন্দের কষ্ট শেষে শীতে পোহাতে হচ্ছে ধুলাবালির অসহনীয় যন্ত্রণা। নগরবাসী পরেছে ভোগান্তিতে।
পরিবেশ দূষণ সম্পর্কিত মিল-কারখানাগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মুক্তাদির হাসান বলেন, পরিবেশ রক্ষায় আমরা নিয়মিত মনিটরিং করছি। যে সকল কারখানায় পরিবেশর ছাড়পত্র নেই সেগুলোকে জরিমানা করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করছি এবং পরিবেশ দূষনকারী সকল কল-কারখানা গুলোতে নিয়মিত ভিজিট করছি।