বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪
পরলোকে পাড়ি জমিয়েছেন অনেক প্রবীণ নেতা, আনেকেই আবার বার্ধক্যে হারিয়েছেন কর্মক্ষমতা

চট্টগ্রামের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের সম্ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৭:১২ পিএম

চট্টগ্রামের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের সম্ভাবনা

রাসেল চৌধুরী, চট্টগ্রাম

রাজনীতির মাঠে অতীতে যারা নিজস্ব নেতৃত্বের স্টাইল ও বক্তৃতার ঢংয়ে মানুষকে মাতিয়ে রাখতেন এদের অনেককেই আর দেখা যাবে না বর্তমান ও আগামী দিনের রাজনীতিতে। আবার বেশ ক'জন তারকা রাজনীতিবিদের তিরোধানের ফলে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ ঘটবে বলে মনে করছেন রাজনীতিবিদরা। রয়েছে সংসদীয় নির্বাচনে আসন ভিত্তিক মনোনয়নের দৌড়েও নতুন ধরণের বিন্যাস ঘটার সম্ভাবনা।

আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে কিনা বা সরকার করতে দিবে কিনা সে ব্যাপারে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচন করতে না পারে তাহলে মাঠে থাকবে বিএনপি, জামায়াত, বামপন্থী বিভিন্ন দলের জোটসহ ছোটখাটো অন্যান্য দলগুলো। সেক্ষেত্রে বেড়ে যেতে পারে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যাও।

এদিকে চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুুরিং আসনটি ভাগ হয়েছে তিনভাগে। যদি এই আসনে আসলাম চৌধুরী প্রার্থী হন তবে তিনি কাট্টলী পর্যন্ত কাভার করবেন। ডবলমুরিং-হালিশহর-পাহাড়তলী-খুলশী-কাতালগঞ্জ বৃহৎ এলাকা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম ১০ আসনে গতবার এমপি ছিলেন আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন বাচ্চু। যেহেতু এবার মাঠে আওয়ামী লীগ নেই সেহেতু বিএনপির প্রবীণ নেতা, সাবেক মন্ত্রী, কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লা আল নোমান চট্টগ্রাম ১০ আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন। আবদুল্লা আল নোমান ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে কোতোয়ালী আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে তিনি আসন পরিবর্তন করে চট্টগ্রাম ১০ আসনে চলে আসেন।

এতে কোন সন্দেহ নেই বন্দর ও পতেঙ্গা এলাকা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম ১১ আসনে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী নির্বাচন করবেন। এই আসন থেকে গতবার আওয়ামী লীগের এমএ লতিফ হয়েছিলেন।

নগরীর প্রধান সংসদীয় আসন কোতোয়ালী। ডবলমুরিং বর্তমানে তিন আসনে ভাগ হয়ে গেছে। বাকলিয়া, পাঁচলাইশ ও চান্দগাঁও আংশিক কোতোয়ালী আসনের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে জহুর আহমদ চৌধুরী আবার কোতোয়ালী আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে বিএনপির প্রথম নির্বাচনে অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিনকে কোতোয়ালী আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়। ১৯৯১ ও ২০০১ খ্রিস্টাব্দে বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমান কোতোয়ালী আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি আরও একবার এমপি হয়েছিলেন। সেটা হচ্ছে ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারির নির্বাচন, যে নির্বাচন বিরোধী দল বর্জন করেছিল।

এবার আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না থাকলে লড়ায় হবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে। এবার বিএনপি থেকে দু'জন তরুণ নেতা নির্বাচন করতে পারেন বলে জল্পনা-কল্পনা চলছে। তাঁরা দু'জন বিএনপি চট্টগ্রাম মহানগর মহানগর শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর। শাহাদাত ইতোমধ্যেই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র। ফলে এমপি নির্বাচনের উপর তার দাবি হয়তো কিছুটা দুর্বল। কিন্তু আবুল হাশেম বক্কর একেবারে তরতাজা, তুর্কী তরুণ। এবার বিএনপির মনোনয়ন সম্পূর্ণ রূপে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত ভাইস চেয়ারম্যান প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমান নিয়ন্ত্রণ করবেন। তাঁর মা বেঁচে আছেন এবং তিনিই কাগজে কলমে বিএনপির সর্বোচ্চ নেতা, চেয়ারপার্সন। কিন্তু বিএনপির প্রকৃত সুপ্রিমো ও নীতিনির্ধারক বেগম জিয়ার পুত্র তারেক রহমান।

তারেক রহমান বিএনপিতে নতুন রুপ ও তারুণ্যের সঞ্চার করেছেন। নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের সময়ও তিনি কম বয়সী তরুণ নেতাদের প্রাধান্য দিয়ে বিএনপির টিকিট বিতরণ করতে পারেন এমন ধারণা অনেকের। সে কারণেই চট্টগ্রামের কোতোয়ালী আসনে দু'জন তরুণ নির্বাচনে দলের প্রার্থী হওয়ার আশা পোষণ করছেন। বিএনপির শক্তিও এখন তরুণরাই।

ইতোমধ্যেই অনেক প্রবীণ নেতারাই পাড়ি জমিয়েছেন পরলোকে। আনেকেই আবার বার্ধক্যের ভারে হারিয়েছেন কর্মক্ষমতা। তবে এখনো অটুট আছেন আবুল হাশেম বক্কর। প্রতিযোগিতায় ডা. শাহাদাত থাকলেও মেয়র হওয়ার পর এমপি পদের জন্য তাঁর দাবি হয়ে পড়েছে খানিকটা দুর্বল। সে কারণে হয়তো আবুল হাশেম বক্করই এবার কোতোয়ালী আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে যাবেন।

তবে ডা. শাহাদাত 'ট্রিটমেন্ট' নামে শিশুদের জন্য একটি হাসপাতাল করে নিজের একটা আলাদা ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছেন। দলীয় রাজনীতিতে ডা. শাহাদাতের বিপুল অবদান ছাড়াও চিকিৎসার মাধ্যমে মানুষের সেবা করে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।

এদিকে বোয়ালখালী-চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ (আংশিক) আসনে মোরশেদ খান বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী। যদি সুস্থ থাকেন এবং প্রার্থী হতে চান, তাহলে বিএনপির মনোনয়ন তিনিই পাবেন। মোরশেদ খান নির্বাচন না করলে ইে আসনে আছেন এরশাদ উল্লাহ, তিনিই পাবেন বিএনপির টিকিট।