বুধবার, ফেব্রুয়ারী ৫, ২০২৫

আন্দোলনে আমি যদি শহীদ হই তুমি আমার সন্তানদের দেখে রেখো

মোঃ সালাহউদ্দিন আহমেদ ,নরসিংদী

প্রকাশিত: ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৬:১২ পিএম

আন্দোলনে আমি যদি শহীদ হই তুমি আমার সন্তানদের দেখে রেখো

পেছনে মৃত্যু ফেরার পথ বন্ধ এগিয়ে যেতেই হবে সামনে চারপাশটা রণক্ষেত্র মাথার উপরে আকাশটাও নিরাপদ ছিলো না। স্বৈরাচার খুনি হাসিনার হুকুমে আকাশ থেকেও হেলিকপ্টারে করে গুলিবর্ষণ করা হচ্ছিল। সেদিন আমি নিজেও হতে পারতাম লাশ মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছি তবুও পিছু হটিনি। এভাবেই ১৮ জুলাইয়ের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বর্ননা দিচ্ছিলেন নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী থানা যুবদলের অন্যতম সদস্য আমদিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইএম মেহেদী হাসান। সেদিন প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে ছাত্রজনতার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। 

ইএম মেহেদী হাসান বলেন, আমি যখন আমার কর্মীদের নিয়ে আন্দোলনে যোগ দেই তখন আন্দোলনরত এক সহযোদ্ধা ছাত্র আমাকে বলে বড়ভাই আমাদের এখানে কোন লিডার নাই আপনি আমাদেরকে নেতৃত্ব দিন তখন সামনের সারিতে থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলাম আমি। তখন হঠাৎ করে হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছুড়তে থাকে  আমার বাম পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক যোদ্ধা মাথায় গুলি লেগে এক পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যায় ছেলেটা মাটিতে পড়ে দাবরাচ্ছিল আমি কোনরকমে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলারের পিছনে দাড়াই তারপরও থেমে থাকিনি পুলিশের সাথে দাওয়া পালটা দাওয়া করতে করতে মহাখালী 
মেইন রোডে চলে যাই আমরা। সেখানে দীর্ঘ আড়াই ঘন্টা আন্দোলনের পর পুলিশসহ সরকারি পেটোয়া বাহিনী ছাত্রলীগ যুবলীগ, পিছু হটতে বাধ্য হয় মহাখালী আমাদের দখলে চলে আসে। 

এভাবেই চলতে থাকে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত, দিনের বেলা রাজপথে আর রাত হলে ফেসবুকে এক একটা সময় যেন কাটেছে খুবই দুর্বিষহতার মধ্যে দিয়ে ২২ শে জুলাই যখন আন্দোলন নিরব হয়ে গেল  তখন মনে হচ্ছিল এটাই মনে হয় আমাদের জন্য শেষ সময় বিএনপিকে আর দাঁড়াতে দিবে না খুনি হাসিনা। প্রতিটি রাত কেটেছে নির্ঘুমে ৪ আগস্ট যখন আন্দোলন থেকে ঘোষণা দিল ৭ তারিখ গণভবন ঘেরাও হবে তখন চিন্তায় বিষন্ন হয়ে পড়ি দুইদিন তো অনেক সময় এর মধ্যে একটা কিছু করে ফেলবে স্বৈরাচার হাসিনা। রাত দুইটা বাজে আবার ঘোষণা এলো ৫ তারিখ ঘেরাও হবে গণভবন মনে একটু শান্তি এলো যে একটা সঠিক সিদ্ধান্ত এলো এবার।

এই ভাবতে ভাবতে কখন যেন ভোর হয়ে গেল বাসার সবাই ঘুমাচ্ছিল তখন আমি আমার সন্তানদের মাথায় হাত রেখে আল্লাহর কাছে বলি হে আল্লাহ আজকের এই আন্দোলনে আমি যদি শহীদ হই তুমি আমার সন্তানদের দেখে রেখো এটা বলতেছি আর দুচোখ দিয়ে অনবরত পানি জড়ছে আর মনে মনে ভাবছি আজকে যদি খুনি হাসিনার পতন করতে না পারি তাহলে সে আমাদের শেষ করে দিবে অবশেষে আল্লাহ আমার এই আর্তনাদ শুনেছে আমাদের বিজয় হয়েছে আমরা পেয়েছি নতুন স্বাধীনতা আলহামদুলিল্লাহ আমি নিজের জন্য নয় এই দেশের জন্য লড়েছি।

উল্লেখ্য, ইএম মেহেদী হাসান নরসিংদী সদর উপজেলার আমদিয়া ইউনিয়নের আখালিয়া গ্রামের  সম্ভ্রান্ত মুসলিম রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান তার পিতা হাজী আব্দুস সাত্তার ছিলেন আমদিয়া ইউনিয়ন  কৃষকদলের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি। তার চাচা হাজী এ কে এম আনোয়ার হোসেন আমদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের দুইবার চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব পালন করেন। 
ছাত্রদলের রাজনীতি দিয়ে রাজনৈতিক পথচলা শুরু করেন ইএম মেহেদী হাসান। ছাত্রদলের দুই বারের সাবেক সফল সভাপতি এবং বর্তমানে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে আমদিয়া ইউনিয়ন যুবদলের। আওয়ামী সরকারের আমলে ১১ টি মামলা ও তিনবার কারাগারে যেতে হয় তাকে। নির্যাতনের শিকার হয়েও সংগঠনকে আঁকড়ে ধরে থাকেন এই তরুণ যুবদল নেতা।