বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪
কোন স্বার্থে নিশ্চুপ নির্বাচন কমিশনার??

নির্বাচনকে ঘিরে অস্থিরতা চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১:১২ এএম

নির্বাচনকে ঘিরে অস্থিরতা চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে

হাসান সৈকত, চট্টগ্রাম

 

বারবার সংবাদের শিরোনাম হওয়া চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ আগামী ২১ ডিসেম্বর। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ততই অস্থিরতা বাড়ছে হাসপাতালকে ঘিরে। চলছে নানা জল্পনা-কল্পনার ধুম। 

 

এদিকে অভিযোগের শেষ নেই হাসপাতালটির বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির বিরুদ্ধে। একের পর এক অভিযোগ পড়ছে হাসপাতালের প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. নুরুল্লাহ নূরীর হাতে। তবে প্রথম থেকেই নিশ্চুপ ভুমিকা পালন করছেন তিনি। 

 

হাসপাতালের ত্রিবার্ষিক নির্বাচনে ভোটার তালিকায় বিভিন্ন অনিয়ম ও জটিলতার কারণে নির্বাচন বাতিলের আবেদন করেছেন অনেকেই। এরমধ্যে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল রক্ষা পরিষদের আহবায়ক মো. ফজলুর রহমান ও ডোনার সৈয়দ মো. আজিজ নাজিমুদ্দীন। 

 

এ বিষয়ে আহবায়ক মো. ফজলুর রহমান বলেন, আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. নুরুল্লাহ নূরীর হাতে একের পর এক প্রমাণসহ অভিযোগ দিয়েছি। তার কাছ থেকে কোন প্রকার প্রতিকার না পেয়ে আমরা জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করি। এরপরও তিনি এই ব্যাপারে কোন ধরণের পদক্ষেপ নেননি। 

 

এদিকে হাসপাতালের মেগা ডোনার সৈয়দ মো. আজিজ নাজিমুদ্দীন বলেন, আমার ডোনেশনের টাকায় অনিয়ম ও ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে তারা তাদের আত্মীয়-স্বজন, ঘরের বুয়া, অফিসের পিয়ন, গাড়ির ড্রাইভারকে সদস্য ও ডোনার বানিয়েছেন। শুধু আমি নই, আমার মতো এমন আরো অনেকের ডোনেশনের টাকার অপব্যবহার ও দুর্নীতি করেছে। 

 

এদিকে হাসপাতালের অন্যএক ডোনার কাদেরীয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী মাসুদ আহমেদ বলেন, নির্বাচনে আমিও নমিনেশন নিয়েছিলাম, তবে এতো দুর্নীতি দেখে আর আগানোর সাহস করিনি।

 

তিনি আরো বলেন, তারা ভোটার তালিকায় বিভিন্ন অনিয়ম ও ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছেন যাতে তারা ছাড়া অন্য কেউ নির্বাচিত হতে না পারে।

 

ডোনার ও অন্যান্য সদস্যদের অভিযোগ থেকে জানা যায়, হাসপাতালের ত্রিবার্ষিক নির্বাচনের ভোটার তালিকায় রয়েছে মৃত ব্যক্তির নামও। ভোটার তালিকার ৭৯০৮ ক্রমিকের মৃত কামাল উদ্দিন ও ৭৯৮৩ ক্রমিকের মৃত শামসুল আলম। এদের মধ্যে মৃত কামাল উদ্দিন বর্তমান নির্বাহী কমিটির ট্রেজারার এস. এম. কুতুব উদ্দিনের খালু। এছাড়াও মৃত শামসুল আলম মোরশেদ-আজাদ প্যানেলের মেম্বার পদে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী তরিকুল ইসলাম তানভীরের পিতা। এছাড়াও ভোটার তালিকায় রাখা হয়েছে ছবি, মোবাইল নাম্বার ও ঠিকানা বিহীন ভোটারদের নাম। 

 

এদিকে ভুয়া ভোটারদের পাশাপাশি অপ্রাপ্তবয়স্ক ভোটারের ছাড়াছড়িতে মা ও শিশু হাসপাতাল। হাসপাতালের গঠনতন্ত্রের ৫ ধারায় উল্লেখ আছে, সদস্য হতে হলে নূন্যতম ১৮ বছর এবং এইচএসসি পাশ হতে হবে। ভোটার তালিকায় অপ্রাপ্তবয়স্ক ও এসএসসি পাস করে নাই এমন অনেক ভোটার আছেন। সদস্য নং ৬৭৭০, ৬৭৭৪, ৬৭৭৫, ৬৭৭৭-৬৭৮৯ অপ্রাপ্তবয়স্ক। এছাড়াও হাসপাতালের ভোটার তালিকায় রয়েছে অফিসের পিয়ন, কাজের বুয়াসহ অসংখ্য ভুয়া সদস্য। এ নিয়ে হাসপাতালের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ। নাম মাত্র বেতনে যার সংসার চলে, সে পিয়ন কিভাবে ৫ লক্ষ টাকা নগদ ডোনেশনে সদস্য হয়! এই টাকার উৎস কি তা জানতে আগ্রহী অন্যান্য সদস্যরা। 

 

অভিযোগ পত্রে আরো উল্লেখ আছে, ডোনার মেম্বার নং ২৭৯ আব্দুল আক্কাস সানি, ২৮০ লায়ন এস.এম কুতুব উদ্দিন (বর্তমান জয়েন্টে ট্রেজারার) ও ২৮১ এসএম গিয়াস উদ্দিন এই তিনজন জরিনা মজিদ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ডোনেশন বাবদ এম্বুলেন্স ও অন্যান্য ডোনেশন দেখিয়ে ডোনার মেম্বার হয়েছেন। 

 

তবে এতো কিছু জেনেও না দেখার ভান করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. নুরুল্লাহ নূরী। এতো অনিয়ম-দুর্নীতি জানার পরও কেন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না, এই ব্যাপারে জানতে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) ও চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. নুরুল্লাহ নূরীর মুঠোফোনে বারংবার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। 

 

ভোটার তালিকার দুর্নীতি ও নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে কথা হয় সেক্রেটারি পদপ্রার্থী ডা. মাহফুজের সাথে। এ সময় তিনি বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে সবাই ব্যাক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়নে বদ্ধ পরিকর। তবে বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. নুরুল্লাহ নূরী কোন এজেন্ডা বাস্তবায়েন আছেন তা আমার বোধগম্য নয়। 

 

তিনি বলেন, হাসপাতাল ও নির্বাচনকে ঘিরে একের পর এক অভিযোগ পড়লেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি। নিশ্চই এই নির্বাচনে তারও কোন বড় স্বার্থ হাসিল হবে। 

 

কথা হয় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ আনোয়ার পাশার সাথে। বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. নুরুল্লাহ নূরীর আগে আনোয়ার পাশার কাঁধেই ছিল এই নির্বাচনের দায়িত্বাভার। তবে নানা জটিলতা ও বাধার মুখে তিনি বাধ্য হন পদত্যাগ করতে। 

 

অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা বলেন, আমি থাকাকালীন সময়ে কিছু অভিযোগ আমার হাতেও এসেছিল। তবে বিভিন্ন কারণে তা আর সমাধান করতে পারিনি। পরে নিজের সম্মান ধরে রাখতে ওই পদ থেকে সরে আসি।